সিপিএমে বয়স-নীতি এখন কার্যকর হচ্ছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তর থেকে দেওয়া রূপরেখা ধরে। পার্টি কংগ্রেসের সাংগঠনিক রিপোর্টে দলের গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আনার কথা বলা হয়েছে, যাতে বয়স-নীতি একেবারে নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। বয়সের কারণে কমিটি থেকে সরে যাচ্ছেন কিন্তু এখনও সক্ষম, সেই নেতাদের কেন্দ্রীয়, রাজ্য বা জেলা কমিটির সরাসরি অধীনে কাজের দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
প্রকাশ কারাত। —নিজস্ব চিত্র।
প্রথা বজায় রেখে চলেছিলেন প্রকাশ কারাট। সীতারাম ইয়েচুরির জমানায় পুরনো ছক ভেঙে গিয়েছিল। সাংগঠনিক কাজে সমস্যার কথা বলে এখন আবার দলে কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী ফিরিয়ে আনতে চলেছে সিপিএম। বয়স-নীতি আবশ্যিক করতে সংশোধন আসছে দলের গঠনতন্ত্রেও।
সিপিএমে নীতি নির্ণয়ের শীর্ষ মঞ্চ যেমন পার্টি কংগ্রেস, তেমনই নীতি নির্ধারণের সর্বোচ্চ কমিটি কেন্দ্রীয় কমিটি। সেই কমিটির তরফে কার্যনির্বাহী দায়িত্ব পালন করে থাকে পলিটবুরো। কেন্দ্রীয় কমিটি ও পলিটবুরোর মাঝামাঝি আর একটি কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীও সিপিএমে আগে চালু ছিল। সিপিআইয়ের ক্ষেত্রে যেমন কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীই পলিটবুরোর সমতুল, সিপিএমের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী অবশ্য তা নয়। মধ্যবর্তী এই কমিটি সাম্প্রতিক কালে আর গঠন করা হয়নি। কিন্তু ২৩তম পার্টি কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত হতে চলেছে সেই কমিটি ফিরিয়ে আনার। পার্টি কংগ্রেসে শুক্রবার রাতে পেশ হওয়া রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক রিপোর্টে তেমন সুপারিশই করা হয়েছে।
মোট ২০০ পাতার রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক রিপোর্ট তৈরি করেছেন প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কারাটই। সাংগঠনিক রিপোর্টে কেন্দ্রীয় পার্টি সেন্টার সংক্রান্ত বিভাগে (পৃঃ ৫৫) বলা হয়ছে, ‘কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী না খাকায় পার্টি কেন্দ্রের সুষ্ঠু কাজে প্রভাব পড়েছে। ঠিক ভাবে কাজ করার জন্যই সম্পাদকমণ্ডলী গঠন করা দরকার’। সিপিএমের সর্বশেষ কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন হান্নান মোল্লা, নীলোৎপল বসু, শ্রীনিবাস রাও, যোগেন্দ্র শর্মা, হরি সিংহ কাং-রা। হান্নান, নীলোৎপলেরা পরে পলিটবুরোয় গিয়েছেন, শ্রীনিবাস এখন অন্ধ্রপ্রদেশে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। দিল্লির এ কে জি ভবনে আর কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী নেই।
কারাটের যুক্তি, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্ধারিত বহু দায়িত্ব পলিটবুরো সদস্যদের উপরে থাকে। কোথায় কোন সাংগঠনিক কাজ করতে হবে, তার সমন্বয় রাখার জন্য কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কারাট উদারহণ দিয়েছেন, গত লোকসভা ভোটের পরে ঠিক হয়েছিল বিজেপির অভূতপূর্ব উত্থান, আরএসএসের কর্মকাণ্ড ও জাত-পাতের নানা সমীকরণ মোকাবিলার কৌশল ঠিক করতে হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলির সম্পাদকদের নিয়ে দিল্লিতে বছরে দু’বার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বৈঠক হবে। কিন্তু একটা বৈঠকও তিন বছরে হয়নি! কারণ, বৈঠক ডাকার দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হয়নি!
পুরনো প্রথায় ফেরত যাওয়ার বিষয়ে বিদায়ী পলিটবুরোর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে এই সুপারিশ পাশ হয়েছে। এ বার পার্টি কংগ্রেস চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’’ পলিটবুরোও যে অর্পিত সব দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেনি, সেই কথাও উঠে এসেছে সাংগঠনিক রিপোর্টে। এমনকি, পলিটবুরো থেকে বিদায় নেওয়ার আগে বিমান বসুও ‘ঘাটতি’র দায় থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না! মহারাষ্ট্রের বিগত রাজ্য সম্মেলনে ওঠা কিছু সাংগঠনিক সমস্যার প্রেক্ষিতে বিমানবাবুকে আহ্বায়ক করে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বাসু দেও-কে নিয়ে তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছিল। সেই কমিটি রিপোর্ট দিতে এতই দেরি করেছে, পরের সম্মেলনের মধ্যে তা কাজে লাগানোই যায়নি!
সিপিএমে বয়স-নীতি এখন কার্যকর হচ্ছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তর থেকে দেওয়া রূপরেখা ধরে। পার্টি কংগ্রেসের সাংগঠনিক রিপোর্টে দলের গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আনার কথা বলা হয়েছে, যাতে বয়স-নীতি একেবারে নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। বয়সের কারণে কমিটি থেকে সরে যাচ্ছেন কিন্তু এখনও সক্ষম, সেই নেতাদের কেন্দ্রীয়, রাজ্য বা জেলা কমিটির সরাসরি অধীনে কাজের দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy