ত্রিপুরার রাজনৈতিক সমীকরণে বড় ভূমিকা থাকে জনজাতি ভোটের। প্রতীকী ছবি।
সরল পাটিগণিতের হিসেবে দেখলে পাঁচ বছর আগে ছিল দুই। এ বার হয়েছে শূন্য! ত্রিপুরায় জনজাতিদের জন্য সংরক্ষিত আসনে সিপিএমের আসনের ঝুলি ফাঁকা। কিন্তু ভোট-প্রাপ্তির হিসেব আবার অন্য রকম। উত্তর-পূর্বের রাজ্যে জনজাতি মনের দিশা খুঁজতে নতুন করে বসতে হচ্ছে সিপিএমকে।
বরাবরই ত্রিপুরার রাজনৈতিক সমীকরণে বড় ভূমিকা থাকে জনজাতি ভোটের। বামেরা ক্ষমতায় থাকাকালীন এক সময়ে জনজাতি এলাকার স্বশাসিত পরিষদে (এডিসি) একচ্ছত্র প্রভাব তৈরি করতে পেরেছিল মানিক সরকারের দল। কিন্তু পাঁচ বছর আগে বামেদের ক্ষমতা হারানোর নির্বাচনে আইপিএফটি-র সঙ্গে জোট বেঁধে জনজাতি এলাকায় দাপট বাড়িয়েছিল বিজেপি। জনজাতিদের জন্য সংরক্ষিত ২০টি আসনের মধ্যে ১৮টিতেই জয়ী হয়েছিল গেরুয়া শিবির। বাকি দু’টি গিয়েছিল সিপিএমের দিকে। এ বারের বিধানসভা ভোটে ওই ২০টি আসনের মধ্যে বিজেপি-আইপিএফটি-র প্রাপ্তি নেমে এসেছে ৭টিতে। প্রদ্যোৎ কিশোর মানিক্যের তিপ্রা মথা জিতে নিয়েছে বাকি ১৩টিই। বিজেপির সঙ্গে লড়াইয়ের পাশাপাশি মথাকে নিয়ে দলের কী ভূমিকা হবে এবং সার্বিক ভাবে জনজাতি মন ফেরাতেই বা করণীয়, সে সবই সিপিএমকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।
বিধানসভা নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল এখনও পর্যালোচনা হয়নি সিপিএমে। প্রাথমিক রিপোর্টে সিপিএম নেতৃত্ব দেখছেন, বেশ কিছু এলাকায় বিজেপি জোটের সঙ্গে বাম এবং কংগ্রেসের ভাল রকম লড়াই হয়েছে। ভোটের পরিসংখ্যান অন্তত তেমনই বলছে। যেমন, জোলাইবাড়ি কেন্দ্র। একমাত্র এই আসনেই এ বার জিতেছে আইপিএফটি এবং জয়ী বিধায়ক শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া রাজ্যের নতুন মন্ত্রিসভাতেও জায়গা পেয়েছেন। ওই কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী সিপিএম প্রার্থীর সঙ্গে জয়ী প্রার্থীর ব্যবধান মাত্র ৪৩৮ ভোটের! মথার প্রার্থী সেখানে ৮ হাজার ৮৩৩ ভোট পেয়েছেন। আবার যে সব কেন্দ্রে মথা জয়ী হয়েছে, তার অনেক ক্ষেত্রেই বাম বা কংগ্রেসের প্রার্থী অনেকটা পিছিয়ে পড়েছেন। যেমন, করমছড়া কেন্দ্রে মথার প্রার্থী পল দাংশু ৫২.৭৩% ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। সিপিএম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী সেখানে অনেক দূরে ১৮.৮৯% ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। এই প্রাথমিক হিসেব থেকে বোঝা যাচ্ছে, জনজাতি মানুষ (স্থানীয় ভাষায় ‘তিপ্রাসা’) শাসক বিজেপির থেকে একেবারে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন বা বিকল্প হিসেবে নির্দিষ্ট কোনও শক্তিকে বেছে নিয়েছেন, কোনওটাই স্পষ্ট করে বলার জায়গা নেই।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘অদ্ভুত ভোট হয়েছে! যারা বেশি পেয়েছে, তারাও হজম করতে পারছে না। যারা পায়নি, তারাও বুঝতে পারছে না!’’ রাজ্যে সার্বিক বিচারে মথার উত্থান (প্রায় ২১% ভোট) বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পথ প্রশস্ত করেছে, প্রাথমিক ভাবে এমনই মনে করছেন সিপিএম নেতৃত্ব। দলের রাজ্য নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় মানছেন, দু’বছর আগের এডিসি নির্বাচনের ফল মাথায় রেখে জনজাতি এলাকায় মথা যে ভাল ফল করবে, সেটা তাঁদের ধারণায় ছিল। কিন্তু মিশ্র এলাকাতেও মথা-র এতটা প্রভাব দেখা যাবে, তা আগে আন্দাজ করা যায়নি।
পরের বছরেই লোকসভা নির্বাচন। ত্রিপুরার নির্বাচনী ইতিহাস বলছে, নানা সময়ে জনজাতি আবেগকে সামনে রেখে এক একটা করে শক্তির উত্থান ঘটে, আবার তারা ঝরেও যায়। রাজনৈতিক শিবিরের অনেকের মতে, অতীতে এই ধরনের প্রায় সব দলই বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন থেকে মূল স্রোতে আসা নেতাদের মাথায় রেখে চলেছে। মথা-র ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা হয়েছে রাজ পরিবারের প্রতি জনজাতি মানুষের বড় অংশের ‘আনুগত্য’। এই পরিস্থিতির কী ভাবে মোকাবিলা করবে সিপিএম? আপাতত দলীয় নেতৃত্ব দেখতে চান, তিপ্রাল্যান্ডের সাংবিধানিক সমাধানের দাবি সামনে রেখে মথা কতটা বিজেপির কাছাকাছি যায়। তার উপরেই নির্ভর করবে পরবর্তী কৌশল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy