Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Cow Vigilante

গরু তাড়ানো নিয়ে বিবাদ, সালিশি সভায় মধ্যবয়সিকে গো-রক্ষকদের মারধর

ভাইরাল ওই ভিডিয়োতে ‘গো-রক্ষক’-দের এই তাণ্ডবের পর নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ-প্রশাসন।

'গো'-রক্ষকদের মারধরের এই ছবিই ভাইরাল হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।

'গো'-রক্ষকদের মারধরের এই ছবিই ভাইরাল হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
শ্রীনগর শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২০ ২০:৩২
Share: Save:

মাটিতে পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন এক মধ্যবয়সি। তাঁকে ঘিরে ধরে জনা কুড়ি লোক। মধ্যবয়সির উপর নেমে আসছে বেধড়ক লাথি, ঘুষি। সেই সঙ্গে চলছে স্লোগান, ‘দেশকে গদ্দারোঁ কো, গোলি মারো শালোঁ কো।’ ওই মধ্যবয়সির ‘অপরাধ’, ফসল নষ্ট করে ফেলার জন্য খেত থেকে কয়েকটি গরুকে তাড়িয়ে দিয়েছিল তাঁর কিশোর ছেলে। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রত্যন্ত গ্রামের এই ঘটনার গোটাটাই বন্দি হয়েছে মোবাইল ক্যামেরার। আপাতত ভাইরাল ওই ভিডিয়োতে ‘গো-রক্ষক’-দের এই তাণ্ডবের ছবি প্রকাশ্যে আসার পর নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ-প্রশাসন। যদিও ‘গো-রক্ষক’-দের দাবি, খেতে ঢুকে পড়া গরুগুলিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। সে জন্য ‘গো-রক্ষক’-দের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার পাশাপাশি ওই মধ্যবয়সির ছেলের বিরুদ্ধেও অভিযোগ নথিবদ্ধ করেছে পুলিশ। ঘটনার পর রীতিমতো জখম অবস্থায় চিকিৎসাধীন ওই মধ্যবয়সি।

পুলিশ জানিয়েছে, দিন কয়েক আগে জম্মু ও কাশ্মীরের রিয়াসি জেলার গারি গব্বর গ্রামে ওই ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ আসগরের খেতে কয়েকটি গরু ঢুকে ফসল খেয়ে তা নষ্ট করতে থাকে। আসগরের ছেলে ওই গরুগুলিকে খেত থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পরই বিপত্তির শুরু। স্থানীয় গো-রক্ষকদের দাবি, আসগরের ছেলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গরুগুলিকে আঘাত করেছে। যার ফলে একটি গরুর গায়ে গভীর ক্ষত হয়ে যায়। এর পরই এই ঘটনা নিয়ে ওই গ্রামে সালিশি সভা ডাকা হয়।

মালিক আব্বাস নামে এক সমাজকর্মীর দাবি, ওই সালিশি সভায় এক আত্মীয়কে নিয়ে উপস্থিত হতেই আসগরের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন জনা কুড়ি। এর পর চলতে থাকে বেধড়ক মারধর। অবশেষে এক পুলিশ আধিকারিক এসে গো-রক্ষকদের নিরস্ত করেন।

গোটা ঘটনার ভিডিয়োটি নিজের টুইটার হ্যান্ডলে শেয়ার করেছেন জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর পিপল্ স ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা নইম আখতার এবং এক আদিবাসী নেতা গুফতার আহমেদ। পুলিশ-প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের আর্জিও জানিয়েছেন তাঁরা। টুইটারে নইমের প্রশ্ন, “সরকার কি এ বার এর প্রতিক্রিয়া দেবে? গোটা বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হয়েছে কি? মনে হচ্ছে ঘটনাস্থলে এক জন খাকি উর্দিধারীও উপস্থিত ছিলেন।”

আরও পড়ুন: ‘সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে বিজেপি-আরএসএস!’ রাহুলের টুইট ঘিরে বাগযুদ্ধ

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর কাপুরুষতার জন্যই লাদাখে জমি কেড়ে নিতে পেরেছে চিন: রাহুল গাঁধী

আসগরের ভাই মুস্তাক আহমেদের দাবি, “একসঙ্গে জনা ষাট জন মারধর করেছে। কয়েক জনের হাতে লাঠিও ছিল।” ঘটনার পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও আসগরের শারীরিক অবস্থা গুরুতর। তাঁর মাথায় চোট লেগেছে বলে জানিয়েছেন মুস্তাক।

রিয়াসির এসএসপি রাশমি ওয়াজির জানিয়েছেন, ঘটনার পর দু’টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে গরুকে আহত করা ছাড়াও একটি সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে আসগরের ছেলের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি, আসগরের উপর হামলা চালানোর জন্য ওই গো-রক্ষকদের বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।

স্থানীয় এক সমাজকর্মী আব্বাস আলির দাবি, “পুলিশের উপর মহলে তদ্বির করার পরেই আসগরের হামলাকারীদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়।” সেই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, ঘটনার পর আসগরের ষোলো বছরের কিশোর ছেলের বিরুদ্ধে কেন এফআইআর দায়ের করা হয়েছে? তাঁর কথায়, “কেন প্রথম দিনেই কেস করা হল না? এখন কেন এই অভিযোগ করা হচ্ছে? আসলে সংখ্যাগুরু লোকজনের মিথ্যাচারের ভিত্তিতেই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।” যদিও আব্বাসের এই অভিযোগ উড়িয়ে এসএসপি ওয়াজিরের পাল্টা দাবি, “কোনও পাথর ছুড়ে নয়। যেন ইচ্ছে করেই একটি গরুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। এই কারণে প্রিভেনশন অব অ্যানিমাল ক্রুয়েলটি অ্যাক্ট-এর আওতায় এফআইআর করা হয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Cow Vigilante Violence Jammu And Kashmir
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE