গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আদ্যোপান্ত সেজেগুজে বেশ মাঞ্জা দিয়ে পার্টিতে গেলেন। পরিচিত-অতিথি-অভ্যাগতদের সঙ্গে কথা বলে এগোলেন খাবারের দিকে। দেখলেন সার দিয়ে রাখা খাবারদাবার। জিভে জল নিয়ে রসনা-বিলাসের বাসনা নিয়ে এগিয়ে গিয়েই দেখলেন মেনুতে রয়েছে, গোমূত্র। কিংবা গোবর দিয়ে তৈরি কোনও পদ। মনের আয়নায় যে ছবিটা ভেসে উঠছে, সেটা কিন্তু কাল্পনিক নয়। এমনই এক অভিনব ‘পার্টি’র আয়োজন করছে হিন্দু মহাসভা। ‘টি পার্টি’র অনুকরণে এই ‘গোমূত্র পার্টি’তে সত্যি সত্যিই থাকবে এমন সব মেনু।
কেন এমন আয়োজন? কারণ, করোনা আতঙ্ক। সারা বিশ্বে যে মারণ ভাইরাসের থাবা আটকাতে প্রতিষেধক তৈরির জন্য রাত-দিন এক করে ফেলছেন বিজ্ঞানী-গবেষকরা, সেখানে হিন্দু মহাসভার দাবি, করোনা রুখতে একমাত্র ‘মহৌষধি’ গোমূত্র এবং গোবর। মহাসভার সভাপতি চক্রপাণি মহারাজ জানিয়েছেন, দিল্লিতে যাতে করোনার প্রকোপ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে না পড়ে, তার জন্যই এই ‘গোমূত্র পার্টি’র আয়োজন।
চক্রপাণি মহারাজ একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘যেমন আমরা চা-চক্রের আয়োজন করি, তেমনই গোমূত্র পার্টির আয়োজন করছি। সেখানে করোনাভাইরাস কী এবং কী ভাবে গরু থেকে প্রাপ্ত জিনিসপত্র খেয়েই এই ভাইরাসমুক্ত থাকা যায়— সে সব নিয়ে সচেতনতার প্রচার করা হবে।’’ পার্টিতে কী থাকবে? মহাসভার সভাপতি বলেন, ‘‘এমন কাউন্টার থাকবে, যেখান থেকে পার্টিতে আসা লোকজনকে গোমূত্র খাওয়ার জন্য দেওয়া হবে। পাশাপাশি আমরা গোবরের কেক বা ঘুঁটে, গোবর দিয়ে তৈরি আগরবাতিও রাখব। এগুলি খেলে বা ব্যবহার করলে ভাইরাস (করোনা) সঙ্গে সঙ্গে মারা যাবে।’’
আরও পডু়ন: করোনা-সাবধানতা: রাষ্ট্রপতি ভবনে বাতিল এ বছরের হোলি উৎসব
মহারাজ জানিয়েছেন, আপাতত দিল্লিতে মহাসভার সদর কার্যালয়ে এই পার্টির আসর বসবে। তার পর সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তা ছড়িয়ে দেওয়া হবে। তাঁদের এই অভিযানে (করোনা দূরীকরণ) যাঁরা সমঝোতা করতে চান বা এক সঙ্গে মিলে কাজ করতে চান, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
সারা দেশের বিজ্ঞানীরা যেখানে কার্যত করোনা রুখতে প্রাণপাত করছেন, একমাত্র সাবধানতা বা সতর্কতা ছাড়া আর কোনও দাওয়াই নেই বলছেন, সেখানে গোমূত্র-গোবরের এমন ‘পথ্যি’ যে অনেকেই বিশ্বাস করবেন না, তা বিলক্ষণ জানেন মহারাজ নিজেও। তাই বলেছেন, ‘‘জীব হত্যা মহাপাপ, এই বার্তা আমরা ছড়িয়ে দিতে চাই। করোনা ভাইরাস যে জীব হত্যার কারণেই ছড়িয়েছে, সেটা প্রচার করতে চাই। জানি, অনেকেই আমার কথা বিশ্বাস করবে না। কিন্তু ভারতে যে হেতু অধিকাংশই নিরামিষাশী, তাই এখানে এই ভাইরাস ছড়াবে না।’’
আরও পড়ুন: ঘৃণা-মন্তব্যে এত সময় দেওয়া ‘অনুচিত’, শুক্রবারই দিল্লি হাইকোর্টকে শুনানির নির্দেশ শীর্ষ আদালতের
মুরগির মাংস থেকে করোনা ছড়াচ্ছে— এমন আতঙ্ক ছড়িয়েছে সারা দেশেই। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন গুজবের ভিত্তি নেই। প্রকাশ্য মঞ্চে মাংস খেয়ে এই গুজব বা অপপ্রচার কাটানোর চেষ্টা করেছেন তেলঙ্গানার বেশ কয়েক জন মন্ত্রী। কিন্তু চক্রপানি মহারাজের মতে, ‘ঘোর পাপ’ করেছেন ওই মন্ত্রীরা। ‘পাবলিসিটি স্টান্ট’ আখ্যা দিয়ে মহাসভার সভাপতি বলেছেন, ‘‘ভারতে এই ভাইরাস এসেছে, কারণ পশুরা সাহায্যের জন্য কাঁদছিল।’’ তিনি বলেন, ‘‘যজ্ঞ অনুষ্ঠানের জন্য ভারতে করোনা ভাইরাস শান্ত ছিল। কিন্তু তেলঙ্গানার অজ্ঞ ও অহঙ্কারী মন্ত্রীরা প্রাণী হত্যা করে এবং যে ভাবে সর্বসমক্ষে মাংস খেয়ে করোনাভাইরাসকে উস্কেছেন, তাতে ভারতেও করোনার ভয়াল রূপ দেখার আশঙ্কা তৈরি হয়ে গিয়েছে। এই মন্ত্রীদের সময় থাকতে থাকতে করোনার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া উচিত। না হলে অনর্থ হয়ে যাবে, যা কেউ আটকাতে পারবে না।’’
তবে ‘অভয়বাণী’ও শোনা গিয়েছে চক্রপাণি মহারাজের মুখে। ঘন ঘন হাত ধোয়া, বড় জমায়েত এড়ানো, হাঁচি-কাশির সময় নাকে মুখে রুমাল দেওয়া কিংবা সর্দি জ্বর হলে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পরিবর্তে তাঁর ‘টোটকা’, ‘‘আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। গোমূত্র খান, আর নিরামিষভোজী হয়ে যান, তা হলেই পালাবে করোনা।’’ আর যাঁরা নিরামিষাশী? তাঁদের নাকি চিন্তাই নেই। মহারাজ বলেছেন, ‘‘শাকাহারিদের দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। এতে (করোনা) তাদের সংক্রমণ হবে না। কিন্তু তবু, সাবধানতা হিসেবে তাঁরাও গোমূত্র খাওয়া শুরু করতে পারেন।’’
কিছু দিন আগে পশ্চিমমঙ্গের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘গরুর দুধে সোনা আছে।’’ তা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। আবার এক দিন আগেই অসম বিধানসভার অভ্যন্তরে সে রাজ্যের বিধায়ক হরিপ্রিয়া বলেছেন, ‘‘গোমূত্র ছড়িয়ে দিলে সেই জায়গা বিশুদ্ধ হয়ে যায়। আমার বিশ্বাস, করোনার ক্ষেত্রেও গোমূত্র এবং গোবর দিয়ে তেমন কিছু করা যাবে।’’ হরিপ্রিয়া তবু ‘আমার বিশ্বাস’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন। কিন্তু চক্রপাণি মহারাজ গোমূত্র ও গোবরকে এমন ‘অব্যর্থ ঔষধি’ বলে দাবি করায় হাসিঠাট্টা করছেন অনেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy