—প্রতীকী চিত্র।
বিতর্ক মাথায় নিয়েই করোনার সম্ভাব্য প্রতিষেধক তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। এ বার ভারতকেও শামিল করতে উদ্যোগী হল তারা। নিজেদের তৈরি ‘স্পুটনিক ভি’ প্রতিষেধকের উৎপাদন এবং বণ্টনে ভারতকে পাশে চায় রাশিয়া। তার জন্য আলাদা করে ভারতে ‘স্পুটনিক ভি’-র ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেও আপত্তি নেই তাদের। ইতিমধ্যেই ওই টিকা সংক্রান্ত সবিস্তার তথ্য ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে তারা। ভারতীয় গবেষকরা সেগুলি খতিয়ে দেখছেন। তাতে যদি দেখা যায় ওই সম্ভাব্য প্রতিষেধক নিরাপদ, তাহলে ‘স্পুটনিক ভি’ তৈরিতে রাশিয়ার সঙ্গে হাত মেলাতে পারে ভারতও।
‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এ প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, রাশিয়ার প্রস্তাব পেয়ে গামালিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিয়োলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজির কাছ থেকে ‘স্পুনিক ভি’ সংক্রান্ত বিশদ তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছিল ভারত। তাতে ওই প্রতিষেধক কতটা নিরাপদ এবং করোনার বিরুদ্ধে তা কতটা কার্যকরী, তা প্রমাণ করতে ভারতের হাতে বিশদ তথ্য তুলে দিয়েছেন রুশ আধিকারিকরা। ভারতীয় গবেষকরা সেগুলি খতিয়ে দেখছেন। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সমন্বয় রেখে চলেছেন ভারত সরকারের সরকারের বায়োটেকনোলজি বিভাগের সচিব রেণু স্বরূপ এবং রাশিয়ায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ডিবি বেঙ্কটেশ বর্মা।
কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাশিয়ার তৈরি করোনার সম্ভাব্য ওই প্রতিষেধকটির গুণাগুণ বিচার করে দেখছেন ভারতীয় গবেষকরা। মানবশরীরের পক্ষে সেটি নিরাপদ প্রমাণিত হলে, সে ব্যাপারে রিপোর্ট দেবেন তাঁরা। তার পর যদি নিয়ামক সংস্থার তরফে অনুমোদন মেলে, সে ক্ষেত্রে আলাদা করে ভারতেই ‘স্পুটনিক ভি’-র তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে শুধুমাত্র ভারতেই নয়, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ব্রাজিল এবং ফিলিপিন্সেও ‘স্পুটনিক ভি’-র তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে আগ্রহী মস্কো।
আরও পড়ুন: ‘শিক্ষানীতিতে অতিরিক্ত সরকারি হস্তক্ষেপ নয়’, ঘোষণা মোদীর
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই ‘স্পুটনিক ভি’-র উৎপাদন শুরু করে দেওয়ার পক্ষপাতী রাশিয়া। ভারত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, ব্রাজিল, মেক্সিকো-সহ কমপক্ষে ২০টি দেশ সেটি কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে দাবি তাদের। তার আগে সম্প্রতি বিজ্ঞান পত্রিকা ‘দ্য ল্যানসেট’-এ ‘স্পুটনিক ভি’র প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, রুশ ভ্যাকসিন ‘স্পুটনিক ভি’র ট্রায়ালে যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, কোনও জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই তাঁদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত কম সংখ্যক লোকের উপরে পরীক্ষা হয়েছে। তাই এই ট্রায়াল থেকে প্রতিষেধক কতটা নিরাপদ এবং কতটা কার্যকর, তা বলা মুশকিল।
ল্যানসেটের গবেষণাপত্রে আরও জানানো হয় যে, দু’টি ছোট হিউম্যান ট্রায়াল করেছেন মস্কোর বিজ্ঞানীরা। প্রত্যেকটিতে ৩৮ জন করে মোট ৭৬ জন সুস্থ ব্যক্তি অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের বয়স ছিল ১৮ থেকে ৬০-এর মধ্যে। প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে প্রথম ডোজ় দেওয়া হয়। ২১ দিন পরে বুস্টার-সহ দ্বিতীয় ডোজ় প্রয়োগ করা হয় (বুস্টার হল, যা ভ্যাকসিনের ক্ষমতা ত্বরান্বিত করে)। তারপর ৪২ দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল সকলকে। তাতে দেখা যায়, তিন সপ্তাহের মধ্যেই সকলের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন: সর্বক্ষণ কম্যান্ডো-সশস্ত্র রক্ষী, কঙ্গনাকে ওয়াই প্লাস নিরাপত্তা দিচ্ছে কেন্দ্র
তবে অংশগ্রহণকারীরা সকলেই জানতেন, তাঁদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ ‘র্যান্ডোমাইজড ট্রায়াল’ হয়নি। র্যান্ডোমাইজড ট্রায়ালের ক্ষেত্রে সাধারণত অংশগ্রহণকারীদের দু’টি দলে ভাগ করে একটি দলকে সম্ভাব্য প্রতিষেধক এবং অন্য দলটিকে কোনও সাধারণ টিকা দেওয়া হয়। কাকে কী দেওয়া হয়েছে, তা জানানো হয় না। তাই এই প্রতিষেধক কতটা নিরাপদ এবং তার দীর্ঘমেয়াদি ফল কী হয় জানার জন্য, র্যান্ডোমাইজড ট্রায়াল জরুরি বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তার জন্য বিভিন্ন বয়সের ৪০ হাজার মানুষকে নিয়ে তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। এই তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের রিপোর্ট হাতে আসার আগে প্রতিষেধক বাজারে আনার বিরোধিতা করছেন বিজ্ঞানীরা।
তার মধ্যেই সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-র বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে সম্প্রতি মস্কো যান ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। করোনার সম্ভাব্য প্রতিষেধকের জন্য রুশ সরকারকে অভিনন্দন জানান তিনি। তার পরই ল্যানসেটের গবেষণাপত্রে ‘স্পুটনিক ভি’ নিয়ে ওই রিপোর্ট সামনে আসে। তাতে ভারতের তরফেই ওই প্রতিষেধক সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য চাওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy