গঙ্গার তীরে ছড়িয়ে পড়ে মৃতদেহ। ছবি সৌজন্যে পিটিআই।
গত কয়েক দিনে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও বিহারে নদীতে ভাসতে দেখা গিয়েছে অসংখ্য মৃতদেহ। এমন ভিডিয়ো সামনে এসেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে কোভিডে মৃতদের দেহ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের ২৭ জেলায় গঙ্গার তীরে কবর দেওয়া হয়েছে অসংখ্য মৃতদেহ। গঙ্গার ১১৪০ কিলোমিটার যাত্রাপথে নদীর তীরে ২ হাজারের বেশি মৃতদেহ কবর দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমে খবর, উত্তরপ্রদেশের বিজনৌর, মেরঠ, মুজফ্ফরনগর, বুলন্দশহর, হাপুর, আলিগড়, বদায়ুঁ, শাহজাহানপুর, কনৌজ, কানপুর, উন্নাও, রায়বরেলী, ফতেপুর, প্রয়াগরাজ, প্রতাপগর, মির্জাপুর, বারাণসী, গাজিপুর, বালিয়া প্রভৃতি জেলায় এই ছবি দেখা গিয়েছে। তার মধ্যে কানপুর, কনৌজ, উন্নাও, গাজিপুর ও বালিয়ার অবস্থা সবথেকে খারাপ।
কনৌজের মহাদেবী গঙ্গাঘাটের কাছে ৩৫০-র বেশি মৃতদেহ কবর দেওয়া হয়েছে বলে খবর। ঘাটে কর্মরত রাজনারায়ণ পাণ্ডে নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘বার বার মৃতদেহগুলি মাটি চাপা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু গঙ্গার জলস্তর বাড়লে মাটি সরে যাচ্ছে। ফলে অনেক সময় মৃতদেহ নদীতে ভেসে যাচ্ছে।’’
কানপুরের শেরেশ্বর ঘাটের কাছে একই ছবি চোখে পড়ছে। যে দিকে চোখ পড়ছে সে দিকেই মৃতদেহ। স্থানীয়রাই বলছেন, ৪০০-র বেশি মৃতদেহ কবর দেওয়া হয়েছে সেখানে। মাটি সরে গিয়ে কিছু মৃতদেহ বেরিয়ে পড়ছে। তার উপর চিল, শকুন গিয়ে বসছে। এর থেকে সংক্রমণ ও দূষণ দুইই ছড়াতে পরে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা।
উন্নাওয়ের অবস্থা সব থেকে খারাপ। এখানকার দু’টি ঘাট (শুক্লাগঞ্জ ও বক্সার)-এর কাছে ৯০০-র বেশি মৃতদেহ কবর দেওয়া হয়েছে বলে খবর। কুকুর, শেয়ালে অনেক মৃতদেহ টেনে বের করে নিয়ে আসছে।
উন্নাওয়ের পাশেই ফতেপুরে গঙ্গার তীরে ২০টির বেশি মৃতদেহ কবর দেওয়া হয়েছে বলে খবর। একই ভাবে প্রয়াগরাজ, বারাণসী, চন্দৌলি, ভদোহী ও মির্জাপুরে গঙ্গার তীরে ৫০টিরও বেশি মৃতদেহ কবর দেওয়া রয়েছে বলে খবর। কিছু জায়গায় বিক্ষোভের পরে প্রশাসনের তরফে মৃতদেহগুলি বের করে এনে শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে খবর।
গাজিপুরে এখনও পর্যন্ত ২৮০টির বেশি মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে গঙ্গার তীরে। তার মধ্যে অনেক মৃতদেহ বের করে শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করছে পুলিশ ও প্রশাসন। কিন্তু প্রায় প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫টি করে মৃতদেহ সেখানে এসে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হচ্ছে। কে বা কারা এই ঘটনা ঘটাচ্ছে সেই বিষয়ে এখনও প্রশাসনের তরফে কিছু বলা হয়নি।
গাজিপুরের পাশে বলিয়াতে গঙ্গার তীর থেকে ১৫টি মৃতদেহ বের করে শেষকৃত্য করেছে পুলিশ। নতুন করে যাতে আর কেউ মৃতদেহ কবর দিতে না পারে তার জন্য নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করা হয়েছে।
গোটা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে এই ছবি সামনে আসছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলে সেই মৃতদেহের শেষকৃত্যের একটা বিশেষ পদ্ধতি থাকে। এ ভাবে কবর দিলে সেটা শুধু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক তা নয়, সেখান থেকে সংক্রমণও দ্রুত ছড়াতে পারে। তা ছাড়া এই মৃতদেহ গঙ্গায় ভেসে গেলে জলও দূষিত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। প্রশাসনকে আরও কড়া ভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আবেদন জানাচ্ছেন তাঁরা।
তথ্য সূত্র: দৈনিক ভাস্কর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy