ফাইল চিত্র।
ভারত বায়োটেক আজ এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, তাদের তৈরি টিকা কোভ্যাক্সিন এখন শিশু থেকে বৃদ্ধ, সকলের জন্য উপযুক্ত। কোভিড-১৯ অতিমারির বিরুদ্ধে বিশ্বজনীন একটি প্রতিষেধক তৈরির লক্ষ্যে তারা পৌঁছে গিয়েছে। ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য তাদের টিকার মানোন্নয়নের যাবতীয় কাজ তারা সেরে ফেলেছে। এ দিকে অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা এ দিন দাবি করেছে, বুস্টার ডোজ় হিসাবে তাদের টিকা করোনার ওমিক্রন স্ট্রেনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম। এই ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে তৈরি এই টিকাই ‘কোভিশিল্ড’ নাম দিয়ে ভারতে বানাচ্ছে সিরাম ইনস্টিটিউট।
অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা এই প্রসঙ্গে নিজেদের বিবৃতিতে অবশ্য ‘ভ্যাক্সজ়েভরিয়া’ টিকা নিয়ে পরীক্ষা ও তার ফলাফলের কথা বলেছে। ‘ভ্যাক্সজ়েভরিয়া’ এবং কোভিশিল্ড একই টিকা। উপাদান এক, শুধু নাম আলাদা। অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা বলেছে, ‘‘চলতে থাকা পরীক্ষামূলক প্রয়োগে দেখা গিয়েছে, তৃতীয় ডোজ়ের বুস্টার হিসাবে ভ্যাক্সজ়েভরিয়ার টিকা ব্যবহার করা হলে বিটা, ডেল্টা, আলফা এবং গামা ভেরিয়েন্টকে প্রতিরোধ করার মতো অতিরিক্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে। অতিরিক্ত বিশ্লেষণে এ-ও দেখা গিয়েছে যে, তৃতীয় ডোজ়ের পরে ওমিক্রনের বিরুদ্ধেও বাড়তি প্রতিরোধ গড়ে তোলা যাচ্ছে।’’
গত কাল ভারত বায়োটেক দাবি করেছিল, তাদের কোভ্যাক্সিন টিকার বুস্টার ডোজ় ডেল্টার বিরুদ্ধে ১০০ শতাংশ এবং ওমিক্রনের বিরুদ্ধে ৯০ শতাংশ কাজ করছে। যদিও প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ় হিসাবে কোভ্যাক্সিন বাদে অন্য টিকা কেউ নিলে তাঁর পক্ষে ভারত বায়োটেকের বুস্টার ব্যবহারের সুযোগ আপাতত নেই। এ দিন অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার বিবৃতির পরে কোভিশিল্ড গ্রাহকেরাও কিছুটা আশাবাদী হতে পারেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে কোভিড সংক্রমিতের সংখ্যা আড়াই লক্ষের আশেপাশে পৌঁছে গিয়েছে। ওমিক্রন ধরা পড়েছে ৬২০ জনের। তৃতীয় ঢেউয়ের দাপটে এ দেশে দৈনিক সংক্রমণ যে গতিতে বাড়ছে, তাতে স্বাস্থ্যকর্মী, ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার ও প্রবীণদের পাশাপাশি আমজনতাকে বুস্টার দেওয়া কবে শুরু হবে, সেই প্রশ্ন ক্রমশ উঠতে শুরু করেছে। যদিও বিদেশ থেকে বুস্টার নিয়ে ভারতে আসার পরেও কেউ কেউ কোভিডে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সার্বিক ভাবে সংক্রমণ প্রতিরোধের বিষয়টি এখন নির্ভর করছে মানুষের সচেতনতা এবং প্রশাসনের তৎপরতার উপরে। এ দিন কেন্দ্র একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, প্রায় সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলই নৈশ কার্ফু এবং অন্যান্য কড়াকড়ি বহাল রেখেছে। সংক্রান্তি উপলক্ষে কর্নাটক সরকার এক প্রস্ত কড়াকড়ি জারি করেছে, যেখানে মন্দিরে একসঙ্গে ৫০ জনের বেশি পুণ্যার্থীর প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হরিদ্বার এবং হৃষীকেশে গঙ্গাস্নান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ এবং কলকাতার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বার বার উদ্বেগ প্রকাশ করা সত্ত্বেও এই রাজ্যে গঙ্গাসাগর মেলা হচ্ছে। পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে সাগরে ডুব দিতে পুণ্যার্থীদের একাংশও মরিয়া।
ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে প্রতিবেশী উত্তরাখণ্ড গঙ্গাস্নান বন্ধ করলেও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সেই পথে হাঁটেননি। প্রয়াগরাজের সঙ্গমে কাল সংক্রান্তির পুণ্যস্নানও তাই বন্ধ হচ্ছে না। যোগী শুধু বলেছেন, দু’টি ডোজ়ের টিকাকরণ না হলে অথবা করোনার উপসর্গ থাকলে মাঘমেলায় যোগ দেওয়া যাবে না। তাঁর প্রশাসনের দাবি, সতর্কতামূলক হোর্ডিং টাঙানোর পাশাপাশি মেলায় টিকাকরণের শংসাপত্র খতিয়ে দেখা এবং করোনা পরীক্ষার বন্দোবস্ত রাখা হয়েছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, অনেক পুণ্যার্থীই মাস্কবিহীন। পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গাসাগরের মতোই তাই প্রয়াগরাজের মাঘমেলা থেকে তৃতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
দৈনিক সংক্রমণের সর্বকালীন রেকর্ড গড়ে দিল্লিতে আজ সারা দিনে ২৮,৮৬৭ জনের করোনা ধরা পড়েছে। সংক্রমণের হার ২৯ শতাংশেরও বেশি। ১ জানুয়ারি দিল্লিতে কন্টেনমেন্ট এলাকার সংখ্যা যেখানে ছিল ১২৪৩টি, সেখানে গত কাল সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ২০,৮৭৮। সংসদ ভবনের ৭১৮ জন কর্মী করোনায় আক্রান্ত। এঁদের মধ্যে ২০৪ জন রাজ্যসভার সচিবালয় ও বাকিরা লোকসভার সচিবালয়ের কর্মী। ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের কথা মেনে নিয়েও দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনের দাবি, হাসপাতালে ভর্তির হার আপাতত বাড়ছে না। ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি রাজধানীতে যে ৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশের কোমর্বিডিটি ছিল এবং ৭০ জন টিকাও নেননি বলে জানিয়েছেন তিনি।
মুম্বইয়ে আজ সংক্রমণ ধরা পড়েছে ১৩,৭০২ জনের। আইআইএম আমদাবাদ ক্যাম্পাসে গত দু’সপ্তাহে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৮১ জন। মধ্যপ্রদেশে সাড়ে তেরো হাজারেরও বেশি কোভিড রোগী বাড়িতে বিচ্ছিন্নবাসে রয়েছেন। অসমের রাজ্যপাল জগদীশ মুখী করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। কেরলে গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত ১৩ হাজারের বেশি। গত কয়েক দিনের তথ্য একত্র করে ১১৭টি মৃত্যুর খবর জানিয়েছে পিনারাই বিজয়ন সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy