Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
COVID-19

কেন্দ্রীয় নীতিতে রাজ্যে বেসরকারি হাতে অর্ধেক টিকা, প্রশ্নে গরিবদের বিনামূল্যে টিকা

ঘোষণা অনুযায়ী, রাজ্য সরকার ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের বিনামূল্যে এই প্রতিষেধক দেবে। কিন্তু বাকি প্রতিষেধক যাবে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে।

ছবি: রয়টার্স।

ছবি: রয়টার্স।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২১ ০৬:২৭
Share: Save:

কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন মিলিয়ে রাজ্য সরকার ২ কোটি ডোজ় প্রতিষেধকের বরাত দিয়েছে উৎপাদক সংস্থাগুলির কাছে। কিন্তু মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে খুব বেশি হলে ১৪ লক্ষ ২৪ হাজারের মতো ডোজ়ই সরবরাহ করা হবে। তার মধ্যে অর্ধেক, অর্থাৎ ৭ লক্ষের কিছু বেশি ডোজ় রাজ্য সরকার হাতে পাবে। ঘোষণা অনুযায়ী, রাজ্য সরকার ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের বিনামূল্যে এই প্রতিষেধক দেবে। কিন্তু বাকি প্রতিষেধক যাবে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে। সেখানে নিজের গাঁটের কড়ি খরচ করেই টিকা নিতে হবে।

কেন? নরেন্দ্র মোদী সরকার নিজেই সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, প্রতিটি রাজ্যে ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের জন্য যে টিকা যাবে, তার অর্ধেক যাবে রাজ্য সরকারের কাছে। বাকি অর্ধেক যাবে বেসরকারি হাসপাতালগুলির কাছে।

প্রশ্ন উঠেছে, সিরাম ইনস্টিটিউট রাজ্যকে ৩০০ টাকা দরে টিকা বেচবে, ভারত বায়োটেক বেচবে ৪০০ টাকা দরে। কিন্তু এরাই বেসরকারি হাসপাতালকে ৬০০ ও ১২০০ টাকা দরে টিকা বেচবে। বেসরকারি হাসপাতালে যখন বেশি দর মিলছে, তখন সিরাম-ভারত বায়োটেক সেখানেই টিকা জোগানে প্রাধান্য দেবে না তো?

রাজ্য সরকারের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি, ১ মে-র পরে ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের জন্য সরকারের হাতে টিকা আসার আগেই কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতাল ২৫ হাজার ডোজ় জোগাড় করে ফেলেছে। এই প্রবণতা চলতে থাকলে, সাধারণ গরিব মানুষকে বিনামূল্যে টিকা দিতে চাইলেও রাজ্যের হাতে যথেষ্ট টিকা থাকবে না। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে বড়লোকেরা টিকা নিতে পারবেন। গরিব মানুষ টিকা থেকে বঞ্চিতই থেকে যাবে।” এ জন্য মোদী সরকারের নীতিকেই দায়ী করছে বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলি। বিরোধীদের অভিযোগ, সিরাম ও ভারত বায়োটেক যাতে বেসরকারি হাসপাতালকে বেশি দামে টিকা বেচতে পারে, সেটা কেন্দ্রই নিজের নীতির মাধ্যমে নিশ্চিত করে দিচ্ছে। কেন্দ্রের এই নীতির ফলে, রাজ্য ২ কোটি ডোজের বরাত দিলেও তা হাতে পেতে দু’বছরের বেশি সময় লেগে যাবে।

নরেন্দ্র মোদী সরকার আগেই ঘোষণা করেছে, ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সিদের কোভিডের প্রতিষেধক দেওয়ার কোনও দায় কেন্দ্র নেবে না। রাজ্য সরকার বা কোনও বেসরকারি হাসপাতাল টিকা দিতে চাইলে তা সরাসরি সিরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটেকের থেকে কিনে নিতে হবে। তবে সব রাজ্যে যাতে জনসংখ্যার অনুপাতে সমান ভাবে টিকা পৌঁছয়,

তার জন্য টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে কথা বলে কোন রাজ্য কত ডোজ় পাবে, তা ঠিক করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।

এই সূত্র অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে মে মাসে মোট ১৪,২৪,৪০০ ডোজ় টিকা সরবরাহ করা হবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব বিকাশ শীল রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, এর মধ্যে সিরাম ১০,৫৭,৬১০ ডোজ় কোভিশিল্ড জোগাবে। বাকি ৩,৬৬,৭৯০ ডোজ় কোভ্যাক্সিন জোগাবে ভারত বায়োটেক। আপাত ভাবে মনে হয়েছিল, এর পুরোটাই রাজ্য সরকার পাবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামায় জানিয়েছে, এর অর্ধেক পাবে রাজ্য সরকার। বাকি অর্ধেক, বা ৭,১২,২০০ ডোজ় পাবে বেসরকারি হাসপাতালগুলি।

কেন্দ্রীয় সরকারের অবশ্য যুক্তি, টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির উৎপাদনের ৫০ শতাংশ প্রথমেই কেন্দ্র কিনে নিচ্ছে। সেই টিকা ৪৫ বছরের বেশি বয়সি ও স্বাস্থ্যকর্মী, ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের টিকাকরণের জন্য রাজ্যগুলিকে আগের মতোই বিনামূল্যে বিলি করবে কেন্দ্র। এই খাতে পশ্চিমবঙ্গ মে মাসের প্রথমার্ধে কেন্দ্রের থেকে ১৩,২৩,২৮০ ডোজ় টিকা পাবে। এর মধ্যে কোভিশিল্ড ৯,৯৫,৩০০ ডোজ। বাকিটা কোভ্যাক্সিন।

অন্য বিষয়গুলি:

COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE