প্রতীকী ছবি।
দিল্লির আজাদপুরে পোলট্রির মালিক আবদুল বারিকের খামারে তালা। মুরগির খাবারই মিলছে না। খামার খুলে রেখে কী হবে? মুরগির ছানাদের খাইয়েই বা কী হবে? মুরগির গাড়ি নিয়ে বেরোলে পুলিশ লাঠি পেটা করছে। দিল্লির গাজিপুরের মান্ডিতে অন্ধ্র থেকে মাছ আসা বন্ধ। লকডাউনে মাছ-মাংসের বেচাকেনায় কোনও বাধা নেই। কিন্তু মাছভর্তি ট্রাক রাজ্যের সীমানায় আটকে দিচ্ছে পুলিশ। মাথায় হাত দিল্লির মাছ ব্যবসায়ীদের। দিল্লি-সহ উত্তর ভারতের অনেক রাজ্যে পাঁঠার মাংস জোগান দেয় রাজস্থান। সেখান থেকেও সরবরাহ বন্ধ।
অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “প্রথমে মনে হচ্ছিল, করোনার জেরে বোধহয় বিমান, পর্যটন, হোটেল— এই সব পরিষেবাই ধাক্কা খাবে। এখন বোঝা যাচ্ছে, অর্থনীতির একেবারে নিচুতলাতেও আঘাত লাগছে। লকডাউনের পরে বাজার খুললেও, হাতে টাকা থাকবে না মানুষের। ফলে কারখানায় উৎপাদন কমবে। এত দিন অর্থনীতি ঝিমিয়ে চলছিল। এ বার বোধ হয় মুখ থুবড়ে পড়বে”।
আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার ঘোষণা করেছে, গোটা বিশ্বের অর্থনীতি মন্দার গ্রাসে। হাল ফিরতে পারে ২০২১-এ। তা-ও যদি করোনাভাইরাসকে লাগাম পরিয়ে রাখা যায়। আর ভারত? রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি মূল্যায়ন সংস্থাগুলির পূর্বাভাস, পরিস্থিতি খুব খারাপ হলে দেশের বৃদ্ধির হার ২ শতাংশের নীচেও নেমে যেতে পারে। অর্থ মন্ত্রকের ওই কর্তার কথায়, “অর্থনীতির সব কর্মকাণ্ড চালু রেখেই বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের উপরে ঠেলে তোলা যাচ্ছিল না। আর মাসখানেক সব বন্ধ থাকলে কী অবস্থা হতে পারে, সে তো বোঝাই যাচ্ছে। বৃদ্ধির হার যে তলানিতে যাবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। প্রশ্ন হল, তাকে চাঙ্গা করতে কত বছর লাগবে? ”
দেশের জিডিপি-র ৫৫% আসে পরিষেবা ক্ষেত্র থেকে। করোনার জেরে সবথেকে ধাক্কা খাচ্ছে এই ক্ষেত্রই। বিমান থেকে হোটেল, সিনেমা হল থেকে শপিং মল, রেস্তরাঁ থেকে জিম, সবই বন্ধ। করোনা-হামলার আগে সরকারের আশা ছিল, চলতি অর্থ বছরে বৃদ্ধির হার ৫%-এর ঘরে থাকলেও আগামী অর্থ বছরে (২০২০-২১) তা ৬% পেরিয়ে যাবে। করোনা সে আশায় জল ঢেলে দিয়েছে। মূল্যায়নকারী সংস্থা আইসিআরএ-র মতে, দেশের অর্থনীতির সব থেকে বড় ইঞ্জিন কেনাকাটা। লকডাউন সেখানেই ধাক্কা দিয়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, কেনাকাটা কমে গেলে আগামী দিনে শিল্পপতিরা লগ্নি নিয়েও অনিশ্চয়তায় ভুগবেন। কারখানার ক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন হবে না। ফলে খরচ বাড়বে। শিল্পসংস্থার মুনাফা কমবে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর সি কে রঙ্গরাজন এক সাক্ষাৎকারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ২০২০-২১-এর প্রথম
তিন মাস, এপ্রিল থেকে জুনে বৃদ্ধির হার শূন্যের নীচে চলে যেতে পারে। অর্থাৎ অর্থনীতির সঙ্কোচন হতে পারে। তার পরের ছ’মাসে কী হবে, এখনই বলা মুশকিল। তবে গোটা অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার খুব ভাল হলেও ৪ শতাংশ পেরোবে না বলেই তাঁর অভিমত।
লকডাউনে চাহিদায় টান পড়ছে।ব্যাঘাত ঘটছে জোগানেও। শিল্পমহলের মতে, খাদ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, ই-কমার্স, ওষুধের মতো জরুরি পরিষেবাকে লকডাউনের বাইরে রাখা হলেও পুলিশের কাছে ঠিক তথ্য পৌঁছচ্ছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল পেতেও সমস্যা হচ্ছে। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কাঁচামাল,প্যাকেজিং, সরবরাহের জন্য দরকারি পণ্যগুলিকে ছাড় দেওয়া হয়নি। ফলে এই সব শিল্পে ধাক্কা লাগছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনও মার খাচ্ছে। আখেরে তা আর্থিক বৃদ্ধির হারকেই টেনে নামাবে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy