ছবি: সংগৃহীত।
মুখ্যমন্ত্রীদের আর্জি মেনে রাজ্যগুলিকে আরও ধার করার ছাড়পত্র দিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু তার সঙ্গে চার দফা শর্তও চাপিয়ে দিল। আর্থিক সাহায্য দূরের কথা, রাজ্য নিজে ধার করে নিজে শোধ করবে, তার জন্যও শর্ত চাপানোয় নতুন করে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মতো বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলি মনে করছে, করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যগুলির কোষাগারের দৈন্যদশার সুযোগ নিয়ে মোদী সরকার নিজের কর্মসূচি তাদের উপরে চাপিয়ে দিতে চাইছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দাবি তুলেছিলেন, রাজ্যগুলির রাজকোষ ঘাটতির হার ৩ শতাংশ থেকে বাড়াতে দেওয়া হোক। কারণ লকডাউনের ফলে রাজ্যগুলির রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। অথচ স্বাস্থ্যখাতে বেশি খরচ করতে হচ্ছে। আজ করোনা-সঙ্কটের মোকাবিলায় আর্থিক প্যাকেজের অংশ হিসেবে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেছেন, শুধু ২০২০-২১ অর্থবর্ষের জন্য রাজ্যগুলির ঋণের ঊর্ধ্বসীমা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের জিডিপি-র ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করে দেওয়া হল। এর ফলে রাজ্যগুলি বাজার থেকে অতিরিক্ত মোট ৪.২৮ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিতে পারবে।
এর মধ্যে ০.৫ শতাংশ বা ১.০৭ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও শর্ত থাকছে না। কিন্তু, এক দেশ-এক রেশন কার্ড ব্যবস্থায় শামিল হওয়া, ব্যবসার সহজ পরিবেশ তৈরি করা, পুরসভাগুলির আয় বাড়ানো এবং বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থার সংস্কার—এই চারটি কাজ করলে তবে প্রতি ক্ষেত্রের জন্য ০.২৫ শতাংশ করে মোট ১ শতাংশ বাড়তি ঋণের অনুমতি মিলবে। বাকি ০.৫ শতাংশ ঋণ নেওয়ার অনুমতি পেতে গেলে নির্ধারিত চারটির মধ্যে তিনটি কাজ করতেই হবে।
আরও পড়ুন: ঋণের ‘সুবিধা’য় বিপদ বাড়বে, দাবি অর্থনীতিবিদদের
আরও পড়ুন: মোদীর ভরসা কংগ্রেসের ‘গর্ত খোঁড়ার’ প্রকল্প!
কেন্দ্রের এই ঘোষণার পরেই নবান্নের শীর্ষমহলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তাদের বক্তব্য, এই সব শর্ত মানা খুবই কঠিন। এগুলো কেন্দ্রের দিক থেকে রাজ্যের ক্ষমতায় হাত দেওয়ার চেষ্টা। রাজ্যগুলি আর্থিক সমস্যায় পড়ে বাড়তি ধার নিতে চাইছে। আর তার সুযোগে কেন্দ্র বুলডোজার চালাতে চাইছে। এক দেশ-এক রেশন কার্ড প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গের আপত্তি ছিল। নতুন বিদ্যুৎ আইনেও কেন্দ্র রাজ্যের ক্ষমতায় ভাগ বসাতে চাইছে বলে রাজ্যের অভিযোগ। এর পরে ব্যবসার সহজ পরিবেশ তৈরি ও পুরসভার আয় বাড়ানোর জন্য কেন্দ্র কী শর্ত চাপাবে, তা স্পষ্ট নয়। মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে কেন্দ্র নিজেদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পূর্ণ করতে এগোচ্ছে।”
কেরলের অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাকও কেন্দ্রের চাপানো শর্ত নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, “বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সংস্কারে আমাদের আপত্তি রয়েছে। কেন্দ্র যদি নিজেদের নীতি মতো সরকারি সংস্থার বেসরকারিকরণ করতে বলে, তা মানা সম্ভব নয়।” জিএসটি-ক্ষতিপূরণ বাবদ রাজ্যের বকেয়া পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে না কেন, সে প্রশ্নও তুলছে রাজ্যগুলি।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের পাল্টা যুক্তি, “এক দেশ-এক রেশন কার্ডের মতো সংস্কার পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বার্থে। তাতে কেন আপত্তি উঠবে? আমরা এ সব সংস্কার মাথা খাটিয়ে বের করিনি। অর্থ কমিশন, বিভিন্ন কমিটি এই সব সুপারিশ করেছে।” যে দাবি খারিজ করে টমাসের বক্তব্য, "কেন্দ্রই পঞ্চদশ অর্থ কমিশনকে বলেছিল, ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর শর্ত হিসেবে এই পদক্ষেপগুলি যুক্ত করা যায় কি না খতিয়ে দেখতে। কিন্তু অর্থ কমিশন বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে সে ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেনি।"
অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা জানাচ্ছেন, ব্যবসার সহজ পরিবেশ তৈরির অঙ্গ হিসেবে রাজ্যগুলির বকেয়া কাজ সেরে ফেলতে বলা হবে। কৃষিক্ষেত্রে বাজার খুলে দেওয়ার জন্য কেন্দ্র যে সব পদক্ষেপ করেছে, রাজ্যগুলিকে সে পথে হাঁটতে বলা হতে পারে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মতো রাজ্যের বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির বেসরকারিকরণের শর্ত চাপানো হতে পারে।
এ বছর রাজ্যগুলির মোট ঋণের পরিমাণ ছিল সর্বাধিক ৬.৪ লক্ষ কোটি টাকা। আজ বাড়তি ৪.২৮ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের অনুমতি দেওয়ায় রাজ্যের মোট ঋণের পরিমাণ হল ১০.৬৮ লক্ষ কোটি টাকা। কেন্দ্র এ বছর ১২ লক্ষ কোটি টাকা ধার করবে বলে জানিয়েছে। এই ২২ লক্ষ কোটি টাকার বেশি ঋণের বন্দোবস্ত করতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক টাকা ছাপাবে কি না, ফের সেই প্রশ্ন উঠেছে। না হলে বাজার থেকে এত ধার করা হলে সুদের হার কোথায় পৌঁছবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। অর্থনীতিবিদ লেখা চক্রবর্তীর মতে, “রাজ্যের বন্ড কে কিনবে, কোথা থেকে তার অর্থ আসবে, সুদের হার কী হবে, তা স্পষ্ট নয়।”
অর্থমন্ত্রী আজ নিজেই জানিয়েছেন, এত দিন রাজ্যগুলির যা ধার করার অধিকার ছিল, তার মাত্র ১৪ শতাংশ ঋণ নেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও আরও ঋণের ছাড়পত্র দেওয়া হল। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির যুক্তি, “সকলেই বেশি বেশি ধার করছে বলে সুদের হার বেড়ে যাচ্ছে। ফলে রাজ্যগুলি প্রয়োজন থাকলেও ধার করতে পারছে না। এ বার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পদক্ষেপ করুক, যাতে রাজ্যগুলি কম সুদে ঋণ পেতে পারে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy