দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে নির্মলা সীতারামন। বৃহস্পতিবার।— ছবি পিটিআই।
প্রাপ্তি বলতে মৌখিক সমবেদনা। আর তার বাইরে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ বলতে কার্ড না-থাকলেও দু’মাসের নিখরচার রেশন!
আগামী দিনে একই কার্ডে দেশের যে কোনও প্রান্তে রেশন তোলার সুবিধার কথা এ দিন বলা হল। ঘোষণায় রইল বড় শহরে বাড়ি তৈরি করে ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকদের তা সস্তায় ভাড়া দেওয়ার প্রকল্প। কিন্তু সে সবই তো ভবিষ্যতের গর্ভে। পরিযায়ী শ্রমিকদের দুঃসহ যন্ত্রণা ও মৃত্যু, বিরোধীদের কটাক্ষ, শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি এবং বিশেষজ্ঞদের শত পরামর্শের পরেও ওই কর্মীদের হাতে এক নয়া পয়সাও দেওয়ার কথা এ দিনও বললেন না অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
মোট ২০ লক্ষ কোটি টাকার ত্রাণ প্রকল্পের দ্বিতীয় দফা ঘোষণা করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার নির্মলা বারবার বললেন, লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের অশেষ দুর্গতি কষ্ট দিয়েছে তাঁকে। কিন্তু ওই পর্যন্তই।
এর পরে অর্থমন্ত্রীর তিন ঘোষণা:
• যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকের রেশন কার্ড নেই কিংবা জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পে নাম নেই, তাঁরাও আগামী দু’মাস মাথাপিছু ৫ কেজি করে চাল অথবা গম এবং পরিবার পিছু ১ কেজি ডাল পাবেন। তাঁদের চিহ্নিত করবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলি। আনুমানিক এমন ৮ কোটি কর্মীর জন্য ৩,৫০০ কোটি টাকা দেবে কেন্দ্র।
• অগস্টের মধ্যেই ‘এক দেশ এক রেশন কার্ড’ প্রকল্পের আওতায় আসবে ৬৭ কোটি পরিবার। ৩১ মার্চের মধ্যে সকলে। তখন ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়েও নিজের ও পরিবারের রেশন সেখানে তুলতে অসুবিধা হবে না পরিযায়ী শ্রমিকদের।
• আগামী দিনে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে বড় শহরগুলিতে তৈরি হবে বাড়ি। যা সস্তায় ভাড়া নেওয়ার সুবিধা পাবেন ভিন্ রাজ্যে কাজে আসা শ্রমিক কিংবা শহুরে গরিবেরা।
প্রশ্ন হল, কার্ড ছাড়া রেশন মিলবে কী ভাবে? স্পষ্ট উত্তর এখনও নেই। কর্মী সংগঠন সিটু-র সাধারণ সম্পাদক তপন সেনের অভিযোগ, “অভিন্ন রেশন কার্ড বা সস্তার ভাড়াবাড়ি তো বহু দূরের পরিকল্পনা। যে শ্রমিকদের খাবারের অভাবে মরতে বসার জোগাড়, কাজ নেই, তাঁদের আজকের প্রাপ্তি কী? সবার আগে তো এঁদের হাতে টাকার দরকার ছিল!” তা ছাড়া অভিন্ন রেশন কার্ডে আপত্তি রয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই। এ বছরের গোড়ায় ‘এক দেশ এক রেশন কার্ড' বেশ কয়েকটি রাজ্যে চালু হলেও বঙ্গে তা চালু হবে না বলে তখনই জানিয়েছিলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। রাজ্যের যুক্তি ছিল, অভিন্ন রেশন কার্ড চালু হলে বিপাকে পড়বেন বঙ্গবাসী। কারণ, এর মধ্যে কয়েকটি কার্ডের গ্রাহকেরা যেমন কেন্দ্রের জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের অন্তর্ভুক্ত, তেমনই রাজ্যে খাদ্য সুরক্ষা যোজনার (খাদ্যসাথী) আওতায় রয়েছেন বেশ কিছু ক্ষেত্রের গ্রাহক। অভিন্ন রেশন কার্ড চালু হলে খাদ্যসাথী কার্ডের গ্রাহকরা অন্য রাজ্যে গিয়ে সামগ্রী পাবেন না। পাশাপাশি, এখানে ভিন্ রাজ্যের বহু মানুষ থাকেন। অভিন্ন রেশন কার্ড চালু হলে তাঁরাও এখান থেকে খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করতে পারবেন। তখন রাজ্যের আর্থিক চাপ বাড়বে।
এক্সএলআরআই-এর অর্থনীতির অধ্যাপক কে আর শ্যাম সুন্দর বলছেন, “কেন পরিযায়ী শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি ৫,০০০ টাকা করে পাঠানোর কথা ভাবল না সরকার?” তাঁর দাবি, তাতে এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অন্তত ভেসে থাকার খড়কুটো পেতেন ওই কর্মীরা। তাঁদের কেনাকাটায় বাজারে চাহিদা বাড়ত। সেই মারফত কিছু টাকা কর হিসেবে ফেরত যেত সরকারের ঘরে। সব মিলিয়ে, চাঙ্গা হত অর্থনীতি। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর টুইট, “এই শ্রমিকদের আর্তনাদ সরকারের কান পর্যন্ত পৌঁছে ছাড়ব।”
লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার ছবি যত সামনে এসেছে, তত জোরদার হয়েছে তাঁদের জন্য আলাদা ভাবে আর্থিক ত্রাণের দাবি। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন বা প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম- অনেকেরই পরামর্শ ছিল, সবার আগে এই হতদরিদ্রদের সরাসরি টাকা দিক সরকার। যাতে এই কঠিন সময়ে তাঁরা টিকে থাকতে পারেন।
কিন্তু এ দিন পর্যন্ত সে সব কিছু হয়নি। নির্মলা এ দিন জানিয়েছেন, বাড়ি ফিরে যাতে তাঁরা একশো দিনের কাজে যোগ দিতে পারেন, তার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রশ্ন, এত বড় সমস্যা সামাল দিতে মোদী সরকারের এখন ভরসা তা হলে একশো দিনের কাজ! যাকে ইউপিএ সরকারের ‘গর্ত খোঁড়ার প্রকল্প’ বলে সংসদে দাঁড়িয়ে ব্যঙ্গ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy