Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus pandemic

দেশে ১ লাখ ছাড়িয়ে গেল করোনা সংক্রমণ, মৃত্যু বেড়ে ৩৩০৩

লক্ষাধিক সংক্রমণের তালিকায় ঢুকে পড়ল ভারত। চিনকেও ছাপিয়ে ভারত এখন আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে বিশ্বের প্রথম একাদশে।

ভারতে করোনা সংক্রমণ এক লক্ষ ছাড়াল। গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।

ভারতে করোনা সংক্রমণ এক লক্ষ ছাড়াল। গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২০ ০৯:৩৫
Share: Save:

লক্ষাধিক সংক্রমণের তালিকায় ঢুকে পড়ল ভারত। আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধিতে রেকর্ড হয়েছিল সোমবার। মঙ্গলবার দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক লক্ষ ছাড়িয়ে গেল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া হিসেবে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন চার হাজার ৯৭০ জন। এই মুহূর্তে দেশে মোট কোভিড আক্রান্ত এক লক্ষ এক হাজার ১৩৯ জন। করোনার থাবায় গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মৃত্যু হয়েছে ১৩৪ জনের। এ নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল তিন হাজার ১৬৩তে।

এ দেশে করোনায় আক্রান্ত রাজ্যগুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। দেশের করোনা আক্রান্তের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি সেখানে। এই মুহূর্তে মহারাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৩৫ হাজার ৫৮ জন। সেখানে মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ২৪৯ জনের। এর পরেই রয়েছে তামিলনাড়ু। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ৭৬০ জন। আক্রান্তের নিরিখে তৃতীয় স্থানে গুজরাত (১১,৭৪৫) ও চতুর্থ রাজধানী দিল্লি (১০,০৫৪)। তার পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে রাজস্থান (৫,৫০৭), মধ্যপ্রদেশ (৫,২৩৬), উত্তরপ্রদেশ (৪,৬০৫), পশ্চিমবঙ্গ(২,৮২৫), অন্ধ্রপ্রদেশ (২,৪৭৪)।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া দেওয়া তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় এ রাজ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪৮ জন। কোভিডের কারণে পশ্চিমবঙ্গে মৃত্যু হয়েছে ২৪৪ জনের। যদিও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রকাশিত বুলেটিন অনুাসের, ১৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে সরাসরি করোনার কারণে। বাকি ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে কোমর্বিডিটিতে।

করোনাভাইরাসের জেরে দেশে মোট মৃত্যু ৩,১৬৩। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।

গত জানুয়ারির শেষে ১৩৫ কোটির দেশে প্রথম করোনা আক্রান্তের হদিশ মেলে। ১৭ মে, ২০২০ পর্যন্ত বিশ্বের যে ১৮৮টি দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে তার মধ্যে ১১টি দেশে সংক্রমণের সংখ্যা ১ লাখ পার। ভারতে মাত্র ৪ মাসের মধ্যেই সংখ্যাটা ১ লাখে পৌঁছে গেল। অঙ্কের পরিভাষায় এই বৃদ্ধিকে বলা যায় এক্সপোনেনশিয়াল রাইজ। মার্চের শেষেও যেখানে সংখ্যাটা দেড় হাজার পেরোয়নি, সেখানে শুধু মে মাসের প্রথম তিন সপ্তাহেই সংখ্যাটা ৬৬ হাজারেরও বেশি বেড়েছে। চিনকেও ছাপিয়ে ভারত এখন আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে বিশ্বের প্রথম একাদশে।

শুরুর সময়টা

এ দেশে করোনার প্রাথমিক সতর্কতার ছায়া পড়তে শুরু করে জানুয়ারির চতুর্থ সপ্তাহে। ওই সপ্তাহেই চিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০ পেরিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে দিয়েছে। ২১ জানুয়ারি থেকে এ দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে শুরু হয় চিন ফেরতদের থার্মাল স্ক্রিনিং। ভারতে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ৩০ জানুয়ারি। চিনের উহান ফেরত কেরলের এক ছাত্রী দেশের প্রথম করোনা আক্রান্ত। এই উহান থেকেই গত বছরের একেবারে শেষ লগ্নে মারণ ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়ার শুরু। গত বছরের শেষ দিনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-কে চিন এক অদ্ভুত নিউমোনিয়ার কথা জানায়। কিছু দিনের মধ্যেই জানা যায় এটি আসলে একটি নোভেল করোনাভাইরাসের হানা।

আরও পড়ুন: চতুর্থ দফার লকডাউনে কোথায় ছাড়, কোথায় নয়, দেখে নিন

ভারতে ৪ ফেব্রুয়ারির ভিতর চিন ফেরত আরও দু’জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা তিনে পৌঁছতেই কেরল সরকার কোভিড-১৯ সংক্রমণকে সে রাজ্যে বিপর্যয় বলে ঘোষণা করে। ১ ফেব্রুয়ারি বিশেষ বিমানে ৩২৩ জন ভারতীয়কে চিনের উহান থেকে দেশে ফেরানো হয়।

করোনার নামকরণ

১১ ফেব্রুয়ারি অচেনা ভাইরাসটির নামকরণ করে ‘হু’। রোগটির নাম কোভিড-১৯ আর ভাইরাসটি SARS CoV-2। ১৪ ফেব্রুয়ারি দেশের প্রথম ৩ করোনা আক্রান্ত সেরে ওঠেন। কেরলের অর্থমন্ত্রী তো টুইটারে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের ঘোষণাও করে দেন।

কিন্তু বিশ্বের ছবিটা অন্য কথা বলছিল। ফেব্রুয়ারির শেষে সারা বিশ্বে এই নব্য করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮৬ হাজার। স্রেফ চিনেই আক্রান্তের সংখ্যাটা ছিল প্রায় ৮০ হাজার। আর সে সময় ভারতের আক্রান্তের সংখ্যাটা পাঁচও পেরোয়নি। এরই মাঝে ভারতে ঘুরে গেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২৪ ফেব্রুয়ারি আমদাবাদের সর্দার পটেল স্টেডিয়ামে বিশাল জনসভায় অংশগ্রহণ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

বিপদের আঁচ

১১ মার্চ কোভিড-১৯ কে অতিমারি ঘোষণা করল হু। মার্চের শুরুর দুই সপ্তাহেই ভারতেও আক্রান্তের সংখ্যয়াটা এক লাফে ৩ থেকে ১০০-য় পৌঁছে যায়। ১২ মার্চ ভারতে প্রথম কোনও করোনা আক্রান্তের প্রাণ যায় কর্নাটকে। পরিস্থিতি যে খুব একটা ভাল নয়, তা আরও প্রকট হয় যখন ১৪ মার্চ ভারত সরকার কোভিড-১৯ সংক্রমণকে বিপর্যয়ের তকমা দেয়। ১৬ মার্চ সমস্ত স্কুল, কলেজ, শপিং মল, সিনেমা হল বন্ধের নির্দেশ দেয় কেন্দ্র। ১৭ মার্চ পশ্চিমবঙ্গে প্রথম করোনা আক্রান্তের হদিশ মেলে। সংক্রমণ ধরা পড়ে অক্সফোর্ড ফেরত এক ছাত্রের শরীরে। ওই দিনই সিকিম, সে রাজ্যে আসা যাওয়া বন্ধের ঘোষণা করে। পর্যটকদের রাজ্য ছাড়তে বলা হয়। আজ পর্যন্ত সারা দেশে একমাত্র সিকিমেই কেউ কোভিড আক্রান্ত হননি।

লকডাউন

১৮ মার্চ স্থগিত করে দেওয়া হয় সিবিএসই পরীক্ষা। এর পর একে একে আইসিএসই এবং বিভিন্ন রাজ্যেরও বোর্ডের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতীয় উদ্দেশে ভাষণে দেশ জুড়ে জনতা কার্ফু পালনের ডাক দেন। ২২ মার্চ রবিবার পালিত হয় জনতা কার্ফু, যা আদপে ছিল এক দিনের পরীক্ষামূলক লকডাউন। করোনা যোদ্ধাদের সম্মান জানাতে সে দিন বিকেল ৫টায় প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সারা দেশে শঙ্খধ্বনি বেজে ওঠে।

২৪ মার্চ রাত ৮টায় প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণে সারা দেশে লকডাউনের ঘোষণা করেন। ওই দিন মাঝরাত থেকে ভারতে ২১ দিনের লকডাউন শুরু হয়। দেশে জারি হয় বিপর্যয় মোকাবিলা আইন।
স্বাস্থ্য পরিকাঠামো খাতে ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণাও করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই দিনই টোকিয়ো অলিম্পিক ১ বছরের জন্য পিছিয়ে দেওয়ার ঘোষণা হয়।

করোনা ইমিউন ভারত?

প্রধানমন্ত্রী যে দিন লকডাউন ঘোষণা করেন, সেই ২৪ মার্চ সারা বিশ্বে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ছাড়িয়ে গেলেও ভারতে সাড়ে পাঁচশোটা কেসও ধরা পড়েনি। বছরভর ডেঙ্গি- ম্যালেরিয়ার সঙ্গে যুঝতে যুঝতে কি নব্য করোনাভাইরাসকেও বাগে এনে ফেলছিল ভারত? ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। এ দেশে প্রতি ১০ লক্ষ মানুষের মধ্যে মাত্র ১০.৫ জনের লালারসের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছিল, তাই অন্যান্য দেশের তুলনায় এ দেশে করোনা আক্রান্ত ধরা পড়ার সংখ্যাটাও ছিল কম। প্রতিকূলতা ছিল আরও অনেক। না ছিল টেস্টিং কিট, না পর্যাপ্ত পরিকাঠামো। প্রতি ১০০০ জনের জন্য মাত্র ০.৫টি হাসপাতালের শয্যা।

গ্রাফটা ঊর্ধমুখী

২৮ মার্চ ভারতে প্রথম কোভিড- ১৯ টেস্ট কিট তৈরি হল। মার্চ মাস থেকে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়তেই ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাটাও ঊর্ধ্বমুখী। ৩০ মার্চ দেশে করোনা আক্রান্ত ১০০০ ছাড়াল। ৬ এপ্রিল ভারতে মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়ায়। ৮ এপ্রিল ভারতে করোনা আক্রান্তে সংখ্যা ছাড়ায় ৫০০০। ১৪ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় লকডাউন ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর। ৩ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয় লকডাউন। ওই দিনই ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০,০০০ ছাড়ায়। দেশের দু’প্রান্তে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দু’রকম ছবি ধরা পড়ছিল। পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্র, গুজরাটে হাজারে হাজারে মানুষ করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে চলেছেন। উল্টো দিকে উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলো, অরুণাচল, মিজোরাম, মণিপুর প্রায় করোনাশূন্য। বাকি দেশের তুলনায় অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয়ে করোনার প্রকোপ নগণ্য। এবং এখনও সেই ধারাটাই অব্যাহত।

২৬ এপ্রিল দেশে করোনা আক্রান্ত ২৫,০০০ ছাড়িয়ে যায়। ১ মে ফের বাড়ে লকডাউনের সময়সীমা।
তৃতীয় দফায় ১৭ মে পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা হয়। ৭ মে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাটা ৫০,০০০ পেরিয়ে যায়। ১৬ মে করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় চিনকে ছাপিয়ে যায় ভারত। ৩ দিন পর, ১৯ এপ্রিল দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাটা ১ লাখ ছাড়িয়ে গেল।

আশার আলো

লকডাউন, আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি, আর্থিক মম্দা-আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা, হতাশার পরিধিটা বাড়ছে। এর শেষ কোথায়? পরিসংখ্যান বলছে ভারতে সুস্থ হয়ে ওঠার হার ৩৭.৫ শতাংশ। যা আমেরিকা, রাশিয়ার চেয়ে বেশি। ফ্রান্সে যেখানে মৃত্যুর হার ১৯ শতাংশ, সেখানে এ দেশে ৩.২ শতাংশ যা ব্রিটেন, ইটালি, স্পেন, ব্রাজিল, আমেরিকা, ইরান, চিনের চেয়ে কম। সারা বিশ্বের মতো এ দেশের গবেষকরাও প্রতিষেধক তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ৬ মে কেন্দ্রীয় সরকারের টাস্ক ফোর্সের বৈঠক প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে, ভারতে ৩০ ধরনের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বিভিন্ন পর্যায়ে পরীক্ষানিরীক্ষার মধ্যে রয়েছে।

আরও পড়ুন: মহা ঘূর্ণিঝড় আমপান: ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটারের অশনি সঙ্কেত

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy