করোনা-ত্রাসে বন্ধ ইন্ডিয়া গেট। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। এএফপি
‘খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে এক পা-ও নয়।’
করোনার কামড় রুখতে বৃহস্পতিবার এই নিদান দেওয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার এখনও সংসদে অধিবেশন চালিয়ে যাচ্ছে কী ভাবে, তা নিয়ে জোর বিতর্ক রাজধানীতে। বিশেষত যেখানে রোজ গড়ে প্রায় ৭ হাজার লোকের আনাগোনা সংসদে! এ নিয়ে ইতিমধ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিরোধীরা।
একই সঙ্গে বিরোধীদের প্রশ্ন, করোনা রুখতে রাজ্যগুলিকে কী করতে হবে, তা যখন প্রধানমন্ত্রী এ দিনই বলে দিলেন, জারি হল নির্দেশিকা, তখন শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স নিছকই আলঙ্কারিক হয়ে গেল না কি? তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের প্রশ্ন, ‘‘আজই মোদী সরকার সমস্ত রাজ্য সরকারকে নির্দেশিকা পাঠিয়ে দিয়েছে। তা হলে ঘটা করে আগামিকাল মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স করার অর্থ কী? যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রতি এটি ঠাট্টা।’’
একে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা। তার উপরে সময় সেই রাত ৮টা। জল্পনা ছড়িয়েছিল, তবে কি নোটবন্দির পরে করোনা ঠেকাতে সারা দেশকে স্তব্ধ (লক-ডাউন) করার কথা ঘোষণা করবেন মোদী?
এ দিন বক্তৃতা শোনার পরে অনেকেই প্রশ্ন তুললেন, শুধু রবিবার ১৪ ঘণ্টার ‘জনতা কার্ফু’ করে সত্যিই কি খুব লাভ হবে? যদি সকলকে বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে থাকার আহ্বান জানানোই উদ্দেশ্য হয়, তা হলে ওই দিনই বিকেল পাঁচটায় বাড়ির দরজা-বারান্দা-ব্যালকনিতে পাঁচ মিনিটের জন্য এসে হাততালি দিতে কিংবা ঢোল-ঘণ্টা বাজাতে বলার অর্থ কী? জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাঁরা জরুরি পরিষেবা দিয়ে চলেছেন, তাঁদের ঋণ স্বীকার অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু ওই ভাবে তা করতে গিয়ে বরং জমায়েতের আশঙ্কা বাড়বে না কি? রাজ্যসভায় তৃণমূলের নেতা সুখেন্দুশেখর রায়ের কটাক্ষ, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা নাটুকে। তিনি চাইছেন রবিবার যেন সমস্ত নাগরিক হাততালি দেয়, গান গায়, ঢোল বাজায়। ইটালীয়দের অনুকরণ। কী নিষ্ঠুর রসিকতা!’’
অনেকে মনে করছেন, রবিবারের এই ১৪ ঘণ্টার কসরৎ আসলে নেহাতই মহড়া। হাঁড়ির চাল টিপে ভাতের হাল বোঝার চেষ্টা। সম্ভবত বুঝে নেওয়ার চেষ্টা যে, পরিস্থিতি বিগড়োলে কতটা সম্ভব হবে ওই ‘জনতা কার্ফুর’ মেয়াদ বাড়ানো। কে বলতে পারে যে, তখন এই তালি-ঢোলের আওয়াজকেই কার্ফুর প্রতি আমজনতার পূর্ণ সমর্থন বলে প্রচার করবেন না প্রধানমন্ত্রী? প্রশ্ন উঠেছে, ধর্না চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় শাহিন বাগের বিক্ষোভকারীরা কী করবেন, তা নিয়েও?
মোদীর বক্তৃতায় সরকারি উদ্যোগের কথা সে ভাবে চোখে না-পড়ায় সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। বিরোধীদের বক্তব্য, এ যেন সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হল। কেন্দ্র এমন ভয়ঙ্কর সঙ্কটে কী ভাবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াবে, কী ভাবেই বা নিশ্চিত করা হবে সকলের জন্য চিকিৎসা— সে সবের উল্লেখ কোথায়? সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির বক্তব্য, ‘‘(রোগ প্রতিরোধে) সরকার কতটা তৈরি কিংবা কী কী পদক্ষেপ তারা করেছে, খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, এত বিজ্ঞাপিত বক্তৃতাতেও তা এড়িয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী।’’
ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘আরও অনেক বিষয়ে শুনতে চেয়েছিলাম। করোনা-প্রতিরোধ ব্যবস্থা, তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পুঁজি, রাজ্যগুলির জন্য সহায়তা, ব্যাপক ভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার বন্দোবস্ত, সমস্ত রাজ্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার দিগ্নির্দেশ।’’ ইঙ্গিত, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এ সব মেলেনি। করোনা মোকাবিলায় সরকারের পাশে দাঁড়িয়েও কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেনের দাবি, ‘‘যত জনের রোগ পরীক্ষা হচ্ছে, জনসংখ্যার অনুপাতে তা খুবই কম। এ দিকে অবিলম্বে নজর দিক কেন্দ্র।’’ আরএসএস নেতা সুরেশ ভাইয়াজি জোশী জানিয়েছেন, ‘‘সঙ্কল্প এবং সংযমের মন্ত্রে জনতা কার্ফু সফল করতে রবিবার পথে নামবেন সঙ্ঘের সমস্ত সদস্যই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy