দিল্লির লোকনায়ক হাসপাতালের বাইরে আইসিইউ শয্যার অপেক্ষায় বসে ইউনুস খান (বাঁ দিকে)। ভাইরাল হওয়া বিনয় শ্রীবাস্তবের টুইট (ডান দিকে)। পোস্ট করেছিলেন ‘৩১’ দেখানো অক্সিমিটারের ছবিও। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া
‘‘অবস্থা কতটা খারাপ হলে সবার সামনে কোনও চিকিৎসা ছাড়াই একজনের প্রাণ চলে যায়?’’... কথা শেষ হয় না। বলতে বলতে কান্নায় গলা বুজে আসে হর্ষিত শ্রীবাস্তবের।
২৩ডি আনন্দপুরম বিকাশ নগর, সেক্টর ১২, লখনউ ২২৬০২২। এই ঠিকানাতেই বাবার নিথর দেহ সঙ্গী করে সোমবার রাত কেটেছে হর্ষিত ও তাঁর পরিজনের। ঠিকানাটা টুইটারে জানিয়েছিলেন তাঁর বাবা, বিনয় শ্রীবাস্তবই। অক্সিজেন চেয়ে যেখানে পারছিলেন আকুল আবেদন করছিলেন ফ্রি ল্যান্স সাংবাদিক, বছর পঁয়ষট্টির বিনয়। কোনও আবেদনেই কাজ হয়নি। বাড়িতেই পরিজনদের চোখের সামনে মৃত্যু হয়েছে বিনয়ের। তাঁর কাতর আবেদনের সেই টুইটগুলি এখন ভাইরাল।
রবিবার আনন্দবাজারকে হর্ষিত জানালেন, শুক্রবার রাত থেকেই তাঁর বাবার শরীর খারাপ হতে থাকে। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে। তাঁর বাবা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নাম হ্যাশট্যাগে লিখে জানান কোনও হাসপাতাল ফোন ধরছে না। তখন তাঁর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৫২ বলেও জানান। রাতে আত্মীয়ের বাড়িতে থাকা অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে আসেন পেশায় ব্যবসায়ী হর্ষিত। রাতটুকুর ব্যবস্থা হয়। তিনি জানান, শনিবার সকালে একাধিক হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করলেও করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট না থাকায় কোনও হাসপাতালেই তাঁদের ভর্তি নেওয়া হয়নি বলে জানান হর্ষিত।
শনিবার দুপুর ২টো নাগাদ নাগাদ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর মিডিয়া অ্যাডভাইসার শলভমণি ত্রিপাঠী বিনয়ের টুইটের উত্তর দিয়ে বিশদ তথ্য চান। সেখানেই নিজের নাম, ঠিকানা, শারীরিক অবস্থার তথ্য দেন বিনয়। হর্ষিতের কথায়, ‘‘দুপুরে আমি কোনওরকমে খাওয়াই বাবাকে। তারপরেই হঠাৎ করে অক্সিজেনের মাত্রা হঠাৎই আরও কমে যেতে থাকে।’’
টুইটারে এখনও রয়েছে বেলা ৩টে ১৫-তে করা বিনয়ের টুইট, ‘‘আমার অক্সিজেনের মাত্রা ৩১। কখন কেউ আসবে?’’ অক্সিমিটারের ছবিও দেন তিনি। বেলা ৪টে ২১ নাগাদ হর্ষিত টুইট করে জানান, তাঁর বাবা মারা গিয়েছেন। শনিবার সারারাত বাড়িতেই ছিল বিনয়ের দেহ। রবিবার বেলায় কয়েকজন আত্মীয়ের সাহায্যে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করেন হর্ষিত। কথা বলতে বলতেই কেঁদে ফেলছেন তিনি। বললেন, ‘‘কোনও সাহায্য পাইনি। এ ভাবে কারও মৃত্যু হতে পারে?’’
বিনয়ের টুইটেই নিজের ঠাকুরদার জন্য সাহায্য চেয়ে নিজের নম্বর দিয়ে কাতর আবেদন করেছিলেন প্রণব। শনিবার দুপুরে শলভকে তিনি লেখেন, ‘‘স্যর বারবার বলছি, দয়া করে সাহায্য করুন। অক্সিজেনের মাত্রা ৫৫ হয়ে গিয়েছে।’’ নয়ডার বাসিন্দা, হোটেল ম্যানেজমেন্টের ছাত্র প্রণব রবিবার আনন্দবাজারকে জানান, তাঁর ঠাকুরদা করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এ পজিটিভ প্লাজমার প্রয়োজন ছিল। সেটা তাঁরা কোনওভাবেই জোগাড় করতে পারেননি। শলভের থেকে ফোন এসেছিল, তবে তার আগেই শনিবার বিকেলে তাঁর ঠাকুর্দা মারা যান।
কেবল হর্ষিত বা প্রণবের নয়, করোনা পরিস্থিতিতে সাহায্য চেয়ে এমন কাতর আর্তি ছড়িয়ে রয়েছে টুইটার জুড়েই। শনিবার রাতেই ভাইরাল হয়েছিল ইউনুস খান নামে এক রোগীর ছবি যিনি দিল্লির লোকনায়ক হাসপাতালের বাইরে আইসিইউ শষ্যার অপেক্ষায় বসে রয়েছে। মুখে অক্সিজেনের নল লাগানো। টুইটারেই এ দিন দুপুরে একজন জানিয়েছেন, ওই রোগী আপাতত বাড়িতেই রয়েছেন। পরিজনেরা তাঁর জন্য তিনটি অক্সিজেনের সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করতে পেরেছেন। এ ছাড়াও দিল্লির নানা হাসপাতালে আসা শ্বাসকষ্টের রোগীদের, শয্যা না পেয়ে অপেক্ষারত রোগীদের হৃদয়বিদারক ভিডিয়ো টুইটারে ভাইরাল হয়। ছড়িয়ে পড়ে বারাণসীর শ্মশানের ছবিও। শনিবার টুইটারে ট্রেন্ডিংও ছিল ‘অক্সিজেন’।
দেশের কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে টুইটারে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অনেকেই। বিরোধীদের সুরেই অনেকে লিখেছেন, যখন দেশে কোভিড পরিস্থিতি সঙ্গে লড়ার কথা তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রতিদিন বাংলায় নির্বাচন লড়তে যাচ্ছেন! বিনয়-হর্ষিতের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও নিজে করোনা আক্রান্ত হওয়ার আগে অবধি প্রচার করেছেন বাংলায়। স্বজনহারা হর্ষিতের ক্ষোভ, ‘‘বাংলার লোভে কি ওঁরা সব ভুলে যাচ্ছেন?’’
প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে যখন এমনই ক্ষোভের খোঁজ মিলছে সমাজমাধ্যমে, তখন অনেকে নিজস্ব প্রশাসনিক ক্ষমতার বাইরেও যতটুকু সম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন যুব কংগ্রেসের জাতীয় সভাপতি বি ভি শ্রীনিবাস, আপ বিধায়ক দিলীপ পাণ্ড্য। অনেকেই তাঁদেরকে বিভিন্ন টুইটে ট্যাগ করছেন। বিনয়ের ক্ষেত্রে না পারলেও একাধিক ক্ষেত্রে সাহায্য করছেন শলভ মণি ত্রিপাঠীও। ইউটিউবার ধ্রুব রাঠীও রবিবার টুইটে রেমডিসিভিয়ার ও প্লাজমা যাঁদের প্রয়োজন তাঁদের সকলের নাম নিয়ে একটি তালিকা তৈরির কাজ শুরু করছেন। সেখানে ঠাণে, দিল্লি, নয়ডা, গাজিয়াবাদ, বেঙ্গালুরু, রায়পুরের মতো বিভিন্ন জায়গা থেকে আবেদন করছেন রোগীর পরিজনেরা। সকলেই বাঁচতে চান, বাঁচাতে চান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy