ফাইল চিত্র।
ফি দিন নতুন রেকর্ড গড়ছে করোনা সংক্রমণ। প্রশ্ন উঠেছে, এক বছর আগে করোনা ভাইরাসের যে স্ট্রেনটি ভারতে সক্রিয় ছিল, বর্তমানে কি তার থেকেও শক্তিশালী কোনও স্ট্রেন কার্যকর রয়েছে? তার ফলেই কি সংক্রমণ এমন লাফ দিয়ে বাড়ছে? বিজ্ঞানীদের মতে, বর্তমানে যে স্ট্রেনগুলি ভারতে রয়েছে, সেগুলির মধ্যে কিছু স্ট্রেন সংক্রমণের প্রশ্নে প্রবল শক্তিশালী। যা সংক্রমণ বাড়ার জন্য অনেকাংশে দায়ী। কিন্তু একই সঙ্গে বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, আগের স্ট্রেনই হোক বা নতুন শক্তিশালী স্ট্রেন—সকলেরই আক্রমণের পদ্ধতি এক। সেই নাক ও মুখ দিয়েই ঢোকে করোনার সব স্ট্রেন। মাস্ক পরলেই যা আটকানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাস্ক পরার মতো সামান্য নিয়ম মানলেই আজ নতুন করে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মুখে পড়ত না দেশ। তৈরি হত না লকডাউনের মতো পরিস্থিতি। পরিস্থিতি সামলাতে কোভিড সতর্কবিধি মেনে চলার পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব বৃহত্তর জনসংখ্যাকে প্রতিষেধকের আওতায় নিয়ে আসার পক্ষে বিজ্ঞানীরা।
বর্তমানে ভারতে করোনা যে একাধিক স্ট্রেন পাওয়া গিয়েছে, সেগুলির অন্যতম ব্রিটেন স্ট্রেন। মূলত ব্রিটেন বা ইউরোপ থেকে আগত যাত্রীদের মাধ্যমেই ওই স্ট্রেনটি ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে পঞ্জাবে যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, তার জন্য অনেকাংশেই দায়ী ব্রিটেন স্ট্রেন। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-সংস্থার এপিডিমিয়োলজি ও কমিউনিকেবল ডিজ়িজ় শাখার প্রধান সমীরণ পাণ্ডা বলেন, ‘‘অতীতের করোনা ভাইরাস বা বর্তমানের স্ট্রেনের তুলনায় ব্রিটেন স্ট্রেন সংক্রমণের প্রশ্নে অনেক বেশি শক্তিশালী। এদের সংক্রমণ ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু এরা দ্রুত ছড়ালেও চরিত্রগত ভাবে ঘাতক নয়।’’ সমীরণবাবুর ব্যাখ্যা, নতুন বা পুরনো যে স্ট্রেনই হোক না কেন, তাদের ছড়িয়ে পড়ার জন্য মানবশরীর প্রয়োজন। তাই উভয় ক্ষেত্রেই বাঁচার একমাত্র উপায়, মাস্ক পরে থাকা। কিন্তু তা না পরে আমরাই সংক্রমণকে ডেকে এনেছি।’’
পরিস্থিতি সামলাতে বৃহত্তর জনগণকে প্রতিষেধকের আওতায় নিয়ে আসার পক্ষে কেন্দ্র। সেই কারণে নীতি পাল্টে ছাড় দেওয়া হয়েছে বিদেশি প্রতিষেধকে। গত জানুয়ারি মাসে জাতীয় সেরো সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দেশের ৭৫ ভাগ মানুষ করোনা সংক্রমণের শিকার হতে পারেন। সমীরণবাবুর মতে, করোনা থেকে বাঁচতে হলে বৃহত্তর জনসংখ্যার মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি বা গোষ্ঠী প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে। সাধারণত দু’ভাবে এই গোষ্ঠী প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। ভাইরাস নিজ গতিতে জনগোষ্ঠীকে সংক্রমিত করে জনগণের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তোলে। কিন্তু তাতে বয়স্ক মানুষদের মৃত্যুর হার অনেকটাই বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দ্বিতীয়টি হল, প্রতিষেধকের মাধ্যমে জনগোষ্ঠীতে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা। মৃত্যুহারকে কম করতে সরকারের লক্ষ্যই হল প্রতিষেধক প্রয়োগ করে জনগোষ্ঠীর মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা।
তবে প্রতিষেধক নিলেও করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায় বলে সতর্ক করে দিয়েছেন সমীরণবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিষেধক নেওয়া থাকলে কোনও সংক্রামিত ব্যক্তির গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। প্রতিষেধক নিয়ে সংক্রমিত হলে হাসপাতালে ভর্তি করা, অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন কিংবা মৃত্যুর হার অনেকটাই কমে যায়। তাই প্রতিষেধক নেওয়ার পরেও মাস্ক পরে থাকা জরুরি।’’
সংক্রমণ যে ভাবে শহর থেকে গ্রামীণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দাবি উঠেছে লকডাউনের। আজ এমসের চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। সেখানে সংক্রমণের শৃঙ্খলকে ভাঙতে অন্তত ১০ দিনের জন্য লকডাউনের দাবি করেন চিকিৎসকদের একাংশ। লকডাউনেও সমস্যা আদৌ মিটবে বলে মনে করছেন না সমীরণবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘যে জেলাগুলিতে সংক্রমণের হার খুব কম, সেখানে লকডাউন করে লাভ কী হবে! উল্টে অর্থনীতি ফের মার খাবে।’’ পরিবর্তে তাঁর পরামর্শ, দেশের যে ৭৩৯টি জেলা রয়েছে সেগুলির শ্রেণিবিন্যাস করা প্রয়োজন। দেখা দরকার, সেই জেলাগুলিতে সংক্রমণের হার কোথায় কত। সেই অনুপাতে জেলাগুলিকে ভাগ করে প্রয়োজনে জেলাভিত্তিক কৌশল নিতে হবে।
সমীরণবাবুর মতে, জেলাভিত্তিক পরিকল্পনা করলে সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব। প্রয়োজনে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্য নিয়ে জেলায়-জেলায় সচেতনতা বাড়াতে হবে। মাস্ক পরা, ঘর থেকে বের না হওয়ার উপরে জোর দিতে হবে। প্রথম দফায় যে ভাবে বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে কোনও কোনও এলাকায় যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, প্রয়োজনে স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেই ব্যবস্থা ফের করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy