তবু ভিড়: সংক্রমণ রুখতে উত্তরপ্রদেশের ১৫টি জায়গা অর্থাৎ হটস্পট সিল করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তার পরেই কেনাকাটার ব্যস্ততা নয়ডায়। বুধবার। ছবি: প্রেম সিংহ
লকডাউনের শেষ সপ্তাহে নজরদারি আরও বাড়িয়ে করোনা-সংক্রমিতদের চিহ্নিতকরণ এবং রাজ্যগুলির চিকিৎসা পরিকাঠামোর উন্নয়নে জোর দিল কেন্দ্রীয় সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, দেশে আজ রাত পর্যন্ত আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৫২৭৪। সুস্থ হয়েছেন ৪১০ জন। মৃত ১৪৯ জন। যাঁদের মধ্যে ৩২ জন মারা গিয়েছেন এবং ৭৭৩ জন সংক্রমিত হয়েছেন গত কাল থেকে আজ বিকেলের মধ্যে। দেশে এত অল্প সময়ে করোনায় এত মৃত্যু এই প্রথম।
আক্রান্তদের একটি নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আটকে রাখতে ‘ক্লাস্টার নিয়ন্ত্রণ’ নীতি আগেই নিয়েছে মোদী সরকার। সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে রাজ্যগুলির সঙ্গে একযোগে বিভিন্ন ‘হটস্পটে’ কাজ করছে কেন্দ্র। আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল বলেন, “আগামী কয়েক দিনে আমাদের মূল লক্ষ্য, সংক্রমিতদের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের খুঁজে বার করা। কারণ, এক জন আক্রান্ত ব্যক্তিও যদি স্বাস্থ্য পরিষেবার গণ্ডিতে না আসেন, তা হলে এত দিনের লড়াই ব্যর্থ হয়ে যাবে।”
কেন্দ্রের বক্তব্য, এই কারণেই যেখানে সংক্রমণ বেশি, সেখানে রাজ্যের সহযোগিতায় আক্রান্তদের খুঁজে বার করায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে আগরওয়াল জানান, পুণে সেন্ট্রাল এলাকা ও মুম্বইয়ের কোলবা এলাকায় ঘরে-ঘরে গিয়ে সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। সমীক্ষা চলছে, দিল্লির নিজামুদ্দিন ও দিলশাদ গার্ডেন এলাকাতেও। এই ‘হটস্পট’-গুলির ৩৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকার প্রত্যেক বাসিন্দাকে নিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা হচ্ছে, সেখানে কারও সাম্প্রতিক সফরের বা করোনা-আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার নজির রয়েছে কি না। রক্তচাপ, মধুমেহ বা কিডনির সমস্যার মতো ‘ক্রনিক’ রোগ যাঁদের রয়েছে, তাঁদের উপরে আলাদা নজর রাখা হচ্ছে। নিভৃতবাসীদের উপরে প্রযুক্তির সাহায্যে নজর রাখা ছাড়াও তাঁদের অবসাদে ভোগা রুখতে মনোবিদদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ১১ই মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা মোদীর, লকডাউন বৃদ্ধি চেয়ে সওয়াল
স্বাস্থ্য যুগ্মসচিব জানান, করোনা-রোগীদের আশি শতাংশেরই শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকে। উপসর্গও সামান্য। তাই স্থিতিশীল ও সঙ্কটজনক রোগীদের কোথায়, কী ভাবে রেখে চিকিৎসা করা উচিত, তা রাজ্যগুলিকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। এ ছাড়া ভ্রান্ত ধারণার বশে করোনা-আক্রান্ত বা আক্রান্ত সন্দেহে কাউকে মারধর, চিকিৎসক ও নার্সদের বাড়ি-ছাড়া করার মতো ঘটনা রুখতে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কেউ এই ধরনের ভুল প্রচার চালালে রাজ্যগুলিকে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেছে কেন্দ্র।
এরই মধ্যে আজ রাত থেকে উত্তরপ্রদেশের ১৫টি জেলার ১০৪টি ‘হটস্পট’ এবং দিল্লির ২০টি হটস্পট সিল করে দেওয়া হচ্ছে। মূলত পূর্ব দিল্লি এবং তার সংলগ্ন গৌতম বুদ্ধ নগর ও গাজ়িয়াবাদ ছাড়াও মেরঠ, লখনউ, কানপুর, বারাণসী, শামলি, বুলন্দশহর, ফিরোজাবাদ, সীতাপুরের মতো জেলায় গোষ্ঠী-সংক্রমণের আশঙ্কায় এই সিদ্ধান্ত। ‘হটস্পট’ এলাকায় আনাজের বাজার ও মুদির দোকানও বন্ধ থাকবে। দোকানের লোক ঘরে জিনিস পৌঁছে দেবে। অপ্রয়োজনে বাড়ি থেকে বেরোনো রুখতে রাজ্যগুলিকে পুলিশি পাহারা বাড়াতে বলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। দিল্লি, জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখে মাস্ক পরাও বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
হরিয়ানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজ জানিয়েছেন, দিল্লির তবলিগি জামাতে যোগ দিয়ে এসেও কেউ রাজ্যের কাছে সেই তথ্য গোপন করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, সংক্রমিত ও মৃতের সংখ্যার নিরিখে রাজ্যগুলির মধ্যে শীর্ষে মহারাষ্ট্র। অন্যতম ‘হটস্পট’ মুম্বইয়েও আজ থেকে বাইরে বেরোলেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে পুরসভা। অফিসে, মিটিংয়ে এমনকি গাড়ির মধ্যেও মুখাবরণ পরতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে রাজ্য জুড়ে সকলকেই মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন। বান্দ্রায় পুরসভা পরিচালিত কে বি ভাবা হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা আজ বিক্ষোভ দেখান। কর্মী-সংগঠন জানায়, ওই হাসপাতালে সম্প্রতি করোনায় এক মহিলার মৃত্যু হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ প্রথমে বিষয়টি গোপন করেছিলেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি, তাঁদের নিভৃতবাসে পাঠানো হোক। কারণ, তাঁদের মধ্যে কয়েক জন ওই রোগীর সংস্পর্শে এসেছিলেন।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy