Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

দিল্লি-মুম্বই-আমদাবাদে কমছে সংক্রমণ, দাবি এমস ডিরেক্টরের, কলকাতা নিয়ে উদ্বেগ

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে লকডাউন ও কন্টেনমেন্ট জোনে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ছাড়া বিকল্প নেই, বলছেন রণদীপ গুলেরিয়া।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২০ ১৯:০৩
Share: Save:

কলকাতায় যখন প্রতিদিন নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, দেশের তিন শহর দিল্লি, মুম্বই ও আমদাবাদে সংক্রমণ কমছে। এমনই দাবি করলেন দিল্লির এমস-এর ডিরেক্টর তথা করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় গঠিত ‘ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স অন কোভিড-১৯’ এর নেতৄত্বস্থানীয় সদস্য রণদীপ গুলেরিয়া। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, দেশের এই তিন মেগাসিটি এবং দক্ষিণের কয়েকটি শহরে করোনার গ্রাফ নিম্নমুখী। এর পাশাপাশি টিকা কবে আসবে, করোনা রুখতে লকডাউনের প্রয়োজনীয়তা, ভারতে কবে সংক্রমণ শিখরে পৌঁছবে সেই সব বিষয় নিয়েও কথা বলেছেন চিকিৎসক গুলেরিয়া।

ভারতে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়েছে মহারাষ্ট্রে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, মুম্বই শহর ও শহরতলিতে। দেশে সংক্রমণ শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যায় সবাইকে ছাড়িয়ে উপরে উঠে যায় মুম্বই। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ আক্রান্ত এই রাজ্যেই। শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী মহারাষ্ট্রে মোট আক্রান্ত ৩ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫০২ জন। মহারাষ্ট্রের পরেই বৄদ্ধির হার সর্বোচ্চ ছিল দিল্লিতে। রাজধানীতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৩৬৪। এখন যদিও আক্রান্তের সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে তামিলনাড়ু। উদ্বেগ ছিল গুজরাতের আমদাবাদ সংক্রমণ নিয়েও।

তবে রণদীপ গুলেরিয়া বলেছেন, এই তিন শহরেই সংক্রমণ বৄদ্ধির গ্রাফ নিম্নমুখী। তিনি বলেন, ‘‘দেশের বিভিন্ন রাজ্য বা শহরে বিভিন্ন সময়ে সংক্রমণ শিখরে পৌঁছবে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। তেমনই একটি রাজ্য দিল্লি, যেখানে সংক্রমণের হার কমছে। মুম্বই আমদাবাদ এবং দক্ষিণের কিছু শহরেও একই ভাবে সংক্রমণ কমতির দিকে। মনে হচ্ছে এই সব শহর সংক্রমণের শীর্ষে পৌঁছে এ বার নামতে শুরু করেছে।’’ যদিও এই কয়েকটি শহর ছাড়া দেশের অন্যত্র সংক্রমণ নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ রয়েছে বলেই মনে করেন এমস ডিরেক্টর। উদাহরণ হিসেবে বিহার, অসমের কথাও বলেছেন তিনি। একই সঙ্গে অবশ্য তাঁর সাবধানবাণী, সংক্রমণ কমছে মানেই ঢিলেঢালা মনোভাব নেওয়া যাবে না। বরং আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এমন ঘটছে যে, সংক্রমণ কমতেই প্রত্যেকে ভাবছেন, তাঁরা নিরাপদ এবং সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক পরা-সহ করোনা প্রতিরোধী ব্যবস্থা কমে আসছে। তাতে আবার দ্বিতীয় দফায় বাড়ছে করোনার সংক্রমণ।

আরও পড়ুন: বাজার-রাস্তায় ফের উপচে পড়া ভিড়! উধাও দূরত্ববিধি, মাস্ক পরতে অনীহা

করোনা সংক্রমণের পরিসংখ্যানেও দেখা যাচ্ছে মুম্বই, দিল্লি, আমদাবাদে সংক্রমণ পড়তির দিকে। বাণিজ্য নগরীতে জুন মাসের শেষের দিকেও যেখানে প্রতিদিন ২০০০ করে প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছিলেন, এখন সেখানে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে হাজারের আশেপাশে। ২০ জুলাই নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০৩৫, ২১ জুলাই ছিল ৯৪৫, ২২ জুলাই ১৩১০ এবং ২৩ জুলাই আক্রান্তের সংখ্যা ১২৪৫। পরিসংখ্যানের হিসেবে মুম্বইয়ের চেয়েও ভাল অবস্থায় দিল্লি। জুন মাসের শেষের দিকে রাজধানীতে প্রতিদিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছিল প্রায় ৪ হাজার করে। এখন সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ১০০০-এর আশেপাশে। ২০ জুলাই এই সংখ্যা ছিল ৯৫৪, ২১ জুলাই ১৩৪৯, ২২ জুলাই ১২২৭ এবং ২৩ জুলাই ১০৪১। আমদাবাদের পরিসংখ্যানও ইতিবাচক। গুজরাতের এই শহরে এখন প্রতিদিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা দু’শোর কম-বেশি। ২০ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ১৯৩, ১৯৯, ১৯৬ এবং ২১০। জুনের শেষের দিকে সেখানে প্রতিদিন বৄদ্ধির সংখ্যা ঘোরাফেরা করছিল ৪০০-র আশেপাশে।

আরও পড়ুন: করোনায় মৃত্যু হল কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিকের

তিন শহরের এই লেখচিত্রের সঙ্গে কলকাতার চিত্র কার্যত উল্টো। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। তার জেরে ফের সপ্তাহে দু’দিন করে সম্পূর্ণ লকডাউনের পথে হাঁটতে হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, জুন মাসের শেষের দিকে যেখানে প্রতিদিন নতুন সংক্রমণ বৄদ্ধির সংখ্যা ছিল দু’শোর কাছাকাছি। এখন সেখানে প্রতিদিন বাড়ছে সাড়ে ছ’শো থেকে সাতশোর মতো। ২০ জুলাই নতুন আক্রান্ত ছিলেন ৬৪৫। তার পর ২৩ জুলাই পর্যন্ত এই সংখ্যা ৬৫১, ৬৯২ এবং ৭৯৫। অর্থাৎ প্রতিদিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা এখনও লাফিয়ে বাড়ছে। ফলে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে রাজ্য প্রশাসনের।

কিন্তু দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিটা কেমন? কবেই বা সংক্রমণ শিখরে পৌঁছবে। সাক্ষাৎকারে রণদীপ গুলেরিয়া অবশ্য এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে চাননি। তবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে কড়া ভাবে লকডাউন এবং কন্টেনমেন্ট জোনে কঠোর নজরদারি ছাড়া যে সম্ভব নয়, তা ফের এ দিন স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসক গুলেরিয়া। তিনি বলেন, ‘‘কোনও এলাকায় ব্যাপক হারে সংক্রমণ হলে কঠোর ভাবে কন্টেনমেন্ট কৌশল নিতে হবে। শুধু লকডাউন নয়, বাড়ি বাড়ি সার্ভে করে এবং সেই মতো ব্যবস্থা নিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। একই সঙ্গে আক্রান্তদের নির্ধারণ করা, আইসোলেশন এবং লকডাউন ভীষণ ভাবে জরুরি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE