ধারাভিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ছবি: এপি।
লকডাউনের মধ্যেও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। তাই আগাম সতর্কতা নিতে এ বার সাধারণ মানুষের মধ্যে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ট্যাবলেট বিতরণ করার চিন্তাভাবনা করছে মহারাষ্ট্র সরকার। আপাতত ধারাভি বস্তিতে কোয়রান্টিনে থাকা মানুষের হাতেই এই ওষুধ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাতে করোনা প্রতিরোধ সফল হলে, অন্য যে সমস্ত এলাকা থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানেও এই ওষুধ বিতরণ করা হতে পারে।
এমনিতেই গোটা দেশের মধ্যে মুম্বইতেই নোভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। সোমবার সকাল পর্যন্ত সেখানে ১৯৮৫ জন কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন ১৪৯ জন। তাতেই এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি এলাকা ধারাভিতে বসবাসকারী ১০ লক্ষ মানুষকে নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে রাজ্য সরকারের। এখনও পর্যন্ত ধারাভিতে ৪৭ জন কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন ৫ জন।
কিন্তু আরও মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে, পরিণাম ভয়ঙ্কর হতে পারে। তাতেই আঁতকে উঠছে রাজ্য সরকার। তাই সামাজিক জনবিন্যাসের বাধ্যবাধকতার কারণেই আগাম সতর্কতা হিসাবে হাইড্রক্লোরোকুইন ট্যাবলেট বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন মহারাষ্ট্র সরকারের এক আধিকারিক। এই প্রথম ভারতে সংক্রমণ এড়াতে ভারতে গোষ্ঠী স্তরে হাউড্রক্সিক্লোরোকুইন ট্যাবলেট ব্যবহার হতে চলেছে।
সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থেকেই হাইড্রক্লোরোকুইন প্রয়োগের পরিকল্পনা। ছবি: এপি।
আরও পড়ুন: লকডাউন কোথায়, কতটা ছাড়, কাল জানাবেন প্রধানমন্ত্রী
করোনা প্রতিরোধে ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ট্যাবলেট প্রয়োগের পরিকল্পনার কথা মেনেছেন মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ টোপেও। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘ম্যালেরিয়া প্রতিরোধেই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়। তবে করোনাভাইরাস রুখতে আমেরিকায় এই এই ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে। ধারাভির মতো যে যে জায়গায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি, সেখানে এই ওষুধ ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’’
যাঁদের সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি, আপাতত শুধু তাঁদেরই এই ট্যাবলেট দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন টোপে। তাঁর কথায়, ‘‘বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে ওষুধ নষ্ট করা ঠিক হবে না। তাই যাঁদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, যাঁরা সরকারি কোয়রান্টিনে রয়েছেন অথবা সংক্রমিত কারও সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁদেরই এই ওষুধ দেওয়া হবে।’’ তবে হার্ট এবং রেটিনার উপর এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকায়, তা বুঝে শুনে ব্যবহার করতে হবে বলে জানিয়েছেন মহারাষ্ট্র অতিমারি নিয়ন্ত্রণ বিভাগের প্রযুক্তিগত উপদেষ্টা সুভাষ সালুঙ্খে।
তবে কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদন দিলে তবেই কাজ শুরু হবে বলে জানা গিয়েছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-কে প্রস্তাব দেবে মহারাষ্ট্র সরকার। খাতায় কলমে সেখান থেকে অনুমোদন মিললেই ধারাভির কোয়রান্টিনগুলিতে ওষুধ বন্টনের কাজ শুরু হবে। ধারাভিতে কর্মরত ন্যাশনাল কোভিড-১৯ টাস্কফোর্সের সঙ্গেও এ নিয়ে রাজ্য সরকারের কথা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ধারাভিতে এই পরিকল্পনা সাফল্য পেলে অন্যত্রও তা প্রয়োগ করাহতে পারে।
আরও পড়ুন: দূরে আটকে থাকা পরিজনকে জিনিসপত্র পাঠাতে চান? পার্সেল ভ্যান চালু করছে রেল
ম্যালেরিয়ার পাশাপাশি আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় হাউড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই ওষুধ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে করোনা ঠেকাতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বেই তর্ক বিতর্ক চলছে। করোনার ওষুধ তত দিন পর্যন্ত আবিষ্কার করা না যাচ্ছে, তত দিন প্রয়োজন বুঝে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগ করা যেতে পারে বলে গত মাসেই সুপারিশ করেছিল আইসিএমআর। কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনও হাউড্রক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগে সায় দিয়েছে। এমনকি এই মুহূর্তে নিউইয়র্কে প্রায় ১৫০০ করোনা আক্রান্তকে এই ট্যাবলেট দেওয়া হচ্ছে। ভারতের কাছ থেকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ২ কোটি ৯০ লক্ষ ডোজ ইতিমধ্যেই কিনে নিয়েছে মার্কিন সরকার।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy