Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in India

কোভিড জয়ের টিকা কৃষ্ণের কপালে

করোনা বধে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের জন্য যে ক’টি টিকা আজ কেন্দ্রের ঘর থেকে ছাড়পত্র পেল, তার মধ্যে রয়েছে এল্লা দম্পতির হাতে গড়া সংস্থা ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনও।

সাংবাদিক বৈঠকে কৃষ্ণ এম এল্লা এবং সুচিত্রা।

সাংবাদিক বৈঠকে কৃষ্ণ এম এল্লা এবং সুচিত্রা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৫০
Share: Save:

পড়া আর পড়ানোর পাট চুকিয়ে বহু বছর পরে আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেছিলেন কৃষ্ণ এম এল্লা। সঙ্গে স্ত্রী সুচিত্রা। কিন্তু ফিরে যাওয়া আর হয়নি। প্রায় আড়াই দশক পেরিয়ে এখন নিজেদের সংস্থায় তৈরি কোভিডের টিকা ভারতের বাজারে সরবরাহের পাশাপাশি আমেরিকাতেও রফতানির পরিকল্পনা করছেন তাঁরা! করোনা বধে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের জন্য যে ক’টি টিকা আজ কেন্দ্রের ঘর থেকে ছাড়পত্র পেল, তার মধ্যে রয়েছে এল্লা দম্পতির হাতে গড়া সংস্থা ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনও। এ জন্য কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের (আইসিএমআর) সঙ্গে জোট বেঁধেছিল তারা।

১৯৯৬ সালে পথ চলতে শুরু করা ভারত বায়োটেকের লকারে এখন ১৬০টি মেধাস্বত্ব (পেটেন্ট)। ২০১৯ সালের মার্চে ওষুধ বহুজাতিক জিএসকে-র কাছ থেকে চিরন বেরিং কেনার পরে তারাই জলাতঙ্ক রোগের টিকার বৃহত্তম উৎপাদক। উপচে পড়ছে কৃষ্ণের ব্যক্তিগত স্বীকৃতির ঝুলিও। নতুন ব্যবসা শুরুতে সাফল্যের দরুন দেশে-বিদেশে হরেক সম্মান। সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কমিটির সদস্যও। আক্ষরিক অর্থেই সাফল্যের অমৃতে কানায়-কানায় পূর্ণ জীবন। কিন্তু কর্পোরেট দুনিয়ায় কান পাতলেই শোনা যায়, এর পিছনের কঠিন সঙ্কল্প আর লড়াইয়ের আখ্যান।

নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি ভারতে ফিরে কৃষ্ণ যখন ওষুধ এবং টিকা তৈরির সংস্থা গড়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তখন ভারতে উদারিকরণের হাওয়া বইতে শুরু করেছে মাত্র পাঁচ বছর। ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে তাই সরকারি নিয়ম, নিয়ন্ত্রণ আর ছাড়পত্র আদায়ের সমস্যা পায়ে-পায়ে। এই পরিস্থিতিতে তাই ওষুধ ব্যবসার মতো ক্ষেত্রে ঝাঁপ দেওয়া মুখের কথা ছিল না। বিশেষত যে সংখ্যায় লাইসেন্স আর অনুমোদন লাগে সেখানে। কিন্তু কৃষ্ণ বুঝেছিলেন, সস্তায় দক্ষ কর্মীর বিপুল জোগানের জেরে আগামী দিনে ওষুধ, প্রতিষেধক তৈরির বাজারে অন্যতম প্রধান শক্তি হয়ে উঠতে পারে ভারত। ব্যবসার অনিশ্চিত দরিয়ায় ঝাঁপ খানিকটা সেই ভরসাতেই।

আরও পড়ুন: ডিসিজিআইয়ের সিদ্ধান্ত আজ, কোভিশিল্ডের পরে সায় কোভ্যাক্সিনে

আরও পড়ুন: টিকা শুরুর আগেই তুঙ্গে রাজনীতি!

কিন্তু এই রাস্তা বাছাই সহজ ছিল না। আমেরিকায় উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি। মলিকিউলার বায়োলজির গবেষক হিসেবে সুনাম। সাউথ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর নিশ্চিন্ত জীবন। এই সমস্ত কিছু ছেড়ে দেশে ফিরে নিজের সংস্থা তৈরির চেষ্টাকে তখন ‘অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্খা’ হিসেবে দেখেছিলেন অনেকে। তবে পাশে ছিলেন সুচিত্রা। তিনি অর্থনীতি ও সমাজ বিজ্ঞানে স্নাতক। বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ও রিয়েল এস্টেট ম্যানেজমেন্টে তাঁরও ডিপ্লোমা দুই আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এই দম্পতির হাতে গড়া সংস্থার ওয়েবসাইট খুললেই চোখে পড়ে, স্বাস্থ্য পরিষেবায় সরকারি খরচে বহু কোটি ডলার বাঁচানোর দাবি। সিএমডি কৃষ্ণের বার্তা, ‘আমাদের লক্ষ্য রোগমুক্ত আগামী’। অনেকের বক্তব্য, এই পণ আর বিশ্বব্যাপী বিশাল বাজারের সম্ভাবনা আঁচ করেই কোভিডের টিকা আবিষ্কারে ঝাঁপিয়েছিল তাঁর সংস্থা।

শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত না-হওয়ায়, এই সংস্থার ব্যবসা কিংবা মুনাফার বহর আঁচ করা শক্ত। কিন্তু ঝুঁকি নেওয়ার ছাতি যে চওড়া, তা নিশ্চিত। অনেকের কটাক্ষ, এই ‘আত্মনির্ভর ভারতের’ ডাকের মধ্যে দেশীয় সংস্থা হিসেবে ছাড়পত্র পেতে হয়তো বাড়তি সুবিধা হবে ভারত বায়োটেকের। বিশেষত যেখানে তারা জোট বেঁধেছে আইসিএমআরের সঙ্গে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতেও যে কোভ্যাক্সিন সসম্মানে জয়ী হতে পারে, তার প্রমাণ দিতে আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দুনিয়ায় তা রমরমিয়ে বিক্রি করতে চায় ভারত বায়োটেক।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy