ছবি: পিটিআই।
আমেরিকাকে পিছনে ফেলে দৈনিক সংক্রমণে আতঙ্কের বিশ্ব রেকর্ড গড়ল ভারত। পাশাপাশি দেখা গেল ফুটপাতে পড়ে থাকা রোগীর ভিড়ের লজ্জাজনক ছবি। ফলে অক্সিজেন, প্রতিষেধক এবং হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যার সরকারি আশ্বাস মিললেও দেশ জুড়ে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এর পাশাপাশি একটা শয্যার জন্য কোভিড আক্রান্তের স্বজনের কাকুতিমিনতি যেন গোটা দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির বেআব্রু চিত্রেরই প্রতিফলন।
কর্নাটকের বিদরে হাসপাতালের সামনের ফুটপাতে শুয়ে একের পর এক করোনা রোগী। দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীদের প্রতীক্ষা, কখন একটা শয্যা খালি হবে। ইতিমধ্যেই ৬০০ শয্যাবিশিষ্ট বিদরের ওই হাসপাতালে তিলধারণের জায়গা নেই। এক রোগী জানিয়েছেন, গত চার দিন ধরে ফুটপাতে দিনযাপন করছেন। তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য নেওয়া হলেও এখনও রিপোর্ট আসেনি। পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে, গুরুতর শ্বাসকষ্ট নিয়েও বহু রোগীকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। বিদরের ডেপুটি কমিশনার অবশ্য জানান, আতঙ্কের কিছু নেই। হাসপাতালে শুধু সঙ্কটজনক রোগীদেরই ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। এই বক্তব্যে বিতর্ক ঘনিয়েছে। একে নজিরবিহীন আখ্যা দিয়ে কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার টুইট, ‘‘হৃদয়বিদারক, বীভৎস!... ইয়েদুরাপ্পা সরকারের নিষ্ঠুর, অমানবিক, গাফিলতি ক্ষমার অযোগ্য।
খানিকটা একই চিত্র রাজধানীর সবচেয়ে বড় কোভিড হাসপাতাল লোকনায়ক জয়প্রকাশ (এলএনজেপি)-তেও। রোগী ভর্তি অ্যাম্বুল্যান্স ও গাড়ির দীর্ঘ লাইন আজও। কান্নায় ভেঙে পড়া রোগীর পরিজনের আর্তনাদেরও সাক্ষী হাসপাতাল। তেমনই এক জন আসলাম খান। স্ত্রী রুবিকে মোটরবাইকে চাপিয়ে একের পর এক হাসপাতালে ঘুরছেন তিনি। তিনটি হাসপাতালের পরে এলএনজেপি-তেও প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় হাসপাতালকর্মীকে আসলামের কাতর অনুরোধ, ‘‘আমার স্ত্রী মরে যাবে। দয়া করে ওকে ভর্তি করুন।’’ এর পরেই কান্নাভেজা গলায় বলেন, ‘‘আমি পা ধরতে রাজি। একের পর এক হাসপাতালে ফিরিয়ে দিচ্ছে... ওঁকে (স্ত্রী) কী ভাবে বিনা চিকিৎসায় মরতে দিতে পারি?’’ বহু হাসপাতালের বাইরে এমন রোগী দেখা গিয়েছে, যাঁদের কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। ক্রমশ কমছে অক্সিজেনের স্তর।
স্বাস্থ্য-সঙ্কট মেনে নিয়ে আজ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। রাজ্যবাসীর উদ্দেশে তাঁর অনুরোধ, ‘‘আগামী কিছু দিন অহেতুক বাড়ির বাইরে বেরোবেন না।’’ এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে ‘ইমার্জেন্সি’ ঘোষণার প্রস্তাব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন জেডিএস সুপ্রিমো
এইচডি দেবেগৌড়া। ডায়ালিসিসের মতো জরুরি চিকিৎসার জন্য কিছু শয্যা রেখে বাকি সমস্ত শয্যাই কোভিড চিকিৎসায় ব্যবহার করা হবে বলে আজ ঘোষণা করেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এই নিয়ম কার্যকর হবে বেঙ্গালুরুর সমস্ত সরকারি হাসপাতাল তো বটেই বেসরকারি হাসপাতালের (ন্যূনতম ৩০ শয্যাবিশিষ্ট) ক্ষেত্রেও। আজ থেকেই বেঙ্গালুরুর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে (কেএসআর বেঙ্গালুরু, যশবন্তপুর এবং বেঙ্গালুরু ক্যান্টনমেন্ট) কোভিড সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহের জন্য কিয়স্ক খুলল দক্ষিণ-পশ্চিম রেল। সরকারি নির্দেশ মোতাবেক ৫০ শতাংশ শয্যা করোনা চিকিৎসায় ব্যবহারের নির্দেশ অমান্য করায় আজ ৬৬টি বেসরকারি হাসপাতালকে নোটিস পাঠিয়েছে বৃহৎ বেঙ্গালুরু মহানগর পালিকে।
সংক্রমণের জেরে সাম্প্রতিক কালে প্রায় প্রতিদিনই আতঙ্কের নজির তৈরি হচ্ছে দেশে। সেই ধারা বজায় রেখেই আজ প্রথম বার দৈনিক সংক্রমণ পেরোল তিন লক্ষের গণ্ডি। সংখ্যাটা শুধু দেশে নয়, গোটা বিশ্বের নিরিখেই রেকর্ড! এর আগে সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণের ভয়াবহ রেকর্ডটি ছিল আমেরিকার দখলে (২,৯৭,৪৩০)। করোনায় মৃতও পেরিয়েছে ২,১০০।
মহারাষ্ট্রে সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে গত কাল ফের এক দফা বিধিনিষেধ জারি করেছে উদ্ধব ঠাকরে প্রশাসন। সরকারি ও বেসরকারি অফিস, যেগুলি করোনা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত নয়, সেগুলিতে হাজিরার ঊর্ধ্বসীমা ১৫ শতাংশে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠানে মোট ২৫ জন অংশ নিতে পারবেন। চিকিৎসা পরিষেবার মতো অত্যাবশ্যক পরিষেবার জন্য বেসরকারি গাড়ি (বাস ছাড়া) ব্যবহার করা যাবে।
সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদার পুণাওয়ালা গত কালই জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকারকে ডোজ় পিছু ৪০০ টাকা এবং বেসরকারি হাসপাতালকে ৬০০ টাকা দিতে হবে। অথচ একই প্রতিষেধক কিনতে কেন্দ্রের খরচ হচ্ছে ডোজ় পিছু ১৫০ টাকা। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আদারকে ‘ডাকাতেরও অধম’ বললেন গোরক্ষপুরের বিজেপি বিধায়ক রাধা মোহন দাস। অতিমারি বিপর্যয় আইন প্রয়োগ করে সিরাম অধিগ্রহণ করার প্রস্তাবও দিয়েছেন এই বিধায়ক। গত কাল কোভিশিল্ডের দাম ঘোষণার পরেই বিরোধী মহল প্রশ্ন তুলেছিল, ‘এক দেশ এক দাম নয় কেন?’ রাধা মোহনের বক্তব্যের প্রেক্ষিতেও বিরোধীদের নিশানায় প্রধানমন্ত্রীই। তাঁদের বক্তব্য, অতিমারি পরিস্থিতিতে যেখানে প্রতিষেধকের আকাল, সেখানে এক শ্রেণির শিল্পপতিকে আরও অর্থবান করার কৌশল নিয়েছে মোদী সরকার। সঙ্গে বিরোধীদের আরও বক্তব্য, ২০,০০০ কোটি টাকার সেন্ট্রাল ভিস্তা, আট হাজার কোটি টাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও ভিভিআইপিদের জন্য বিশেষ বিমান এবং তিন হাজার কোটি টাকার মূর্তি হলেও দেশে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি। এই প্রসঙ্গেই বিরোধীদের বক্তব্য, অক্সিজেন সঙ্কটে হাবুডুবু খাওয়া দেশকে বিপুল পরিমাণ মেডিক্যাল অক্সিজেন সরবরাহ করা স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া (সেল) এই সরকারের বিক্রির তালিকায় রয়েছে! যা সরকারের চেহারাকেই আরও স্পষ্ট করে দিচ্ছে।
এ দিকে হরিয়ানার ঝিন্দ হাসপাতাল থেকে ১৭০০-র বেশি প্রতিষেধক চুরি করেও ফেরত দিল চোর। সঙ্গে চিরকুটে লেখা, ‘‘দুঃখিত। জানতাম না এটা করোনার ওষুধ।’’ চুরি যাওয়া প্রতিষেধকের মধ্যে ১,২৭০টি কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাক্সিন ৪৪০টি। আজ সকালে বিষয়টি ধরা পড়ে। এর পরেই তড়িঘড়ি পুলিশ এবং চণ্ডীগড়ে স্বাস্থ্য দফতরের মুখ্য কার্যালয়ে খবর দেওয়া হয়। অবশ্য কয়েক ঘণ্টা বাদেই ঝিন্দের একটি থানার সামনে চায়ের দোকানের পাশে উদ্ধার হয় প্রতিষেধক ভর্তি ব্যাগ।
আজ বিধিনিষেধের পথে হাঁটল হরিয়ানার বিজেপি সরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনিল ভিজ জানিয়েছেন, আগামিকাল, শুক্রবার থেকে সমস্ত দোকান সন্ধে ৬টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে অত্যাবশ্যক নয় এমন সমস্ত পণ্যে। দিল্লি ও ঝাড়খণ্ডের পরে গত কাল লকডাউন ঘোষণা হয়েছে পঞ্জাবেও।
আজ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কংগ্রেস নেত্রী রেণুকা চৌধরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy