ছবি: রয়টার্স।
কিট-বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না কেন্দ্রের।
করোনা-সংক্রমণ পরীক্ষায় এত দিন কিটের অভাব ছিল দেশে। বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে চিন থেকে যদিও বা ‘র্যাপিড অ্যান্টিবডি’ পরীক্ষার পাঁচ লক্ষ কিট এল, তিন দিনের মধ্যেই তার কিটের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল। ওই কিট ঠিক ফল দিচ্ছে না বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে অভিযোগ জানাল রাজস্থান-সহ একাধিক রাজ্য। যার জেরে রাজ্যগুলিকে ওই অ্যান্টিবডি কিটের মাধ্যমে পরীক্ষা আপাতত দু'দিন বন্ধ রাখতে বলল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)।
আইসিএমআর জানিয়েছে, তাদের বিজ্ঞানীরা চিনা কিট পরীক্ষা করবেন। যদি দেখা যায় ওই কিট সত্যিই ত্রুটিপূর্ণ, তা হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে বলে তা পাল্টে দেওয়া হবে। দু'দিনের মধ্যে রাজ্যগুলিকেও ফের নির্দেশিকা দেওয়া হবে। এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ বলেন, ‘‘আইসিএমআরের নির্দেশিকা মেনেই পরীক্ষা চলছে। আজও ২২০টি র্যাপিড টেস্ট হয়েছে। নতুন নির্দেশ পেলে তা মানা হবে।’’
আরও পড়ুন: ছেলে কাঁধে ৩০০ মাইল হেঁটে গ্রামে ফিরেও ‘ঘর’ পেলেন না দয়ারাম
আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, বিকেল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৩৬ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। যার ফলে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৮,৯৮৫। মৃত ৬০৩ জন। আইসিএমআর সূত্রের খবর, আজ পর্যন্ত সাড়ে চার লক্ষ মানুষ করোনা-সংক্রমিত কি না, সেই পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে ওই পরীক্ষা হয়েছে প্রথাগত ‘আরটিপিসিআর’ কিটের মাধ্যমে। তাতে কোনও সমস্যা হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের একাংশের মতে, দেশে পরীক্ষা কম হচ্ছে বলে বিরোধীরা লাগাতার প্রশ্ন তোলায় প্রথাগত পরীক্ষার সঙ্গেই অ্যান্টিবডি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই অনুসারে গত সপ্তাহে চিন থেকে কিট এলে তা বিভিন্ন রাজ্যের হাতে তুলে দেয় আইসিএমআর। তার পরেই রাজ্যগুলি থেকে অভিযোগ আসতে থাকে।
মূল অভিযোগ করেছে রাজস্থান। সেই রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রঘু শর্মা জানিয়েছেন, ১৬৮ জন সংক্রমিতের নমুনা নিয়ে ওই অ্যান্টিবডি কিটে পরীক্ষা করলে কী ফল আসে, তা দেখা হয়েছিল। কিন্তু মাত্র ৫.৪% নমুনা পজ়িটিভ হয়েছে। অর্থাৎ বাকিদের সংক্রমণ হয়নি বলে দেখিয়েছে চিনা কিট। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘বলা হয়েছিল, ওই চিনা কিট অন্তত ৯০ শতাংশ নির্ভুল ফল দেবে। কিন্তু মাত্র সাড়ে পাঁচ শতাংশ ফল ঠিক হওয়ায় ওই কিটের ব্যবহার কার্যত অর্থহীন।’’ আইসিএমআর জানাচ্ছে, এর পরে আরও দুই রাজ্য অভিযোগ তোলে, ঠিক ফল দিচ্ছে না চিনা কিট। তার প্রেক্ষিতেই আপাতত দু'দিনের জন্য ওই কিটের ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংস্থার কমিউনিকেবল ডিজ়িজ শাখার প্রধান রমন গঙ্গাখেদকর আজ সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘৬ থেকে প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ঠিক ফল দিচ্ছে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা (দিল্লিতে ৭১ শতাংশ ঠিক)। ফারাক এতটা বেশি হওয়ায় সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। তাই ওই পরীক্ষা আপাতত বন্ধ থাকছে।’’ তবে তিনি জানান, এগুলি ‘এই প্রথম তৈরি হওয়া’ (ফার্স্ট জেনারেশন) কিট। সম্ভবত তাই ভুলভ্রান্তি থাকছে।
আরও পড়ুন: আরও খারাপ দিন আসতে চলেছে, সতর্ক করল হু
কেন্দ্রীয় সংস্থাটি মনে করিয়ে দিয়েছে যে, অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় সন্দেহভাজনের রক্তের নমুনা নেওয়া হয়ে থাকে। তিনি অন্তত সাত দিন আগে সংক্রমিত হয়ে থাকলে তবেই রক্তে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি মিলতে পারে। কিন্তু সংক্রমণের সাত দিনের মধ্যে ওই পরীক্ষা করা হলে ভাইরাসের আক্রমণ সত্ত্বেও অ্যান্টিবডির চিহ্ন মিলবে না। এ ক্ষেত্রে প্রথাগত ও অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় দু’রকমের ফল আসে। তার থেকেই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। রাজস্থান-সহ তিন রাজ্যের ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সময়ে আক্রান্তদের নমুনা কত দিনে অ্যান্টিবডি পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy