ছবি: এপি।
লকডাউনের ফলে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমছে বলে গত কাল দাবি করেছিল মোদী সরকার। তা সত্ত্বেও রবিবার থেকে সোমবারের মধ্যে ২২৭টি নতুন সংক্রমণ ধরা পড়ল কী করে? হতাশ স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, কিছু এলাকার মানুষ সহযোগিতা করছেন না। করোনার লক্ষণ দেখেও প্রশাসনকে খবর দিচ্ছেন না তাঁরা। সচেতনতায় ঘাটতিও প্রকট। দিল্লির নিজামুদ্দিন এলাকার ধর্মীয় সম্মেলনটির আয়োজকদের দিকেও আঙুল উঠছে।
আজ রাত পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেব, দেশে করোনায় মোট মৃত্যু ৩৫টি। কিন্তু তেলঙ্গানায় গত কালের ৬টি মৃত্যু, পশ্চিমবঙ্গের তিনটি মৃত্যু এখনও দিল্লির খাতায় ওঠেনি। কেরলে আজ আরও এক জনের মৃত্যু হয়েছে। ইনদওরে মারা গিয়েছেন এক জন। মুম্বইয়ে গত কাল মৃত দুই অশীতিপরের দেহেও সংক্রমণ মিলেছে বলে খবর।
বিভিন্ন রাজ্য থেকে পাওয়া তথ্য যোগ করে আজ রাতে সংবাদমাধ্যমের একাংশ দাবি করেছে, দেশে আসলে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৪৭ জনের। মোট সংক্রমণের সংখ্যা ১৫৪৫। যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওয়েবসাইট বলছে, দেশে মোট সংক্রমণ ১৩৯৭টি। সংবাদ সংস্থা পিটিআই আবার জানিয়েছে, আজ সন্ধে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১৪১৮।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেবে নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে ১৪৬ জনের। সেরে উঠেছেন ১২৩ জন। অসম ও ঝাড়খণ্ডে আজ প্রথম কোভিড-১৯ রোগীর সন্ধান মিলেছে। মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে অবশ্য সেই তথ্য নেই।
কেন এমন ঘটছে? স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল দু’দিন আগে ওয়েবসাইটের উপরে অত্যধিক চাপ পড়ার কথা বলেছিলেন। আজ তাঁর যুক্তি, নতুন কোনও করোনা-রোগীর খোঁজ পাওয়া গেলেই তাঁর সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে সংক্রমণের ইতিহাস নিশ্চিত ভাবে জানা হচ্ছে। ফলে সর্বশেষ তথ্য পরিবেশনে দেরি হচ্ছে।
কেরলে মোট সংক্রমিত ২১৫ জন। আজ তিরুঅনন্তপুরম মেডিক্যাল কলেজে প্রয়াত ৬৮ বছরের করোনা-রোগীর উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা ছিল, ডায়ালিসিসও চলত। তিনি বিদেশে যাননি, তবে অসুস্থ হওয়ার আগে একটি বিয়ে ও শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তাঁর বাড়ি যেখানে, সেই পোথেনকোডে এলাকার একটি স্কুল এবং ব্যাঙ্কেও গিয়েছিলেন। ব্যাঙ্কের ওই শাখাটি বন্ধ করে কর্মীদের কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে।
মধ্যপ্রদেশ সরকার আজ জানিয়েছে, ইনদওরের চন্দননগরে করোনা-আক্রান্ত হয়ে ৪৯ বছরের এক মহিলা মারা গিয়েছেন। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবিটিসের এই রোগীরও বিদেশ সফরের ইতিহাস নেই।
অসমে আজ প্রথম করোনা-সংক্রমণ ধরা পড়ায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়াল তিন। দিল্লির ধর্মীয় অনুষ্ঠানটিতে অসমের চারশোরও বেশি মানুষ যোগ দেওয়ায় সংক্রমণের আশঙ্কা ছিলই। সন্ধেয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা টুইটারে জানান, শিলচর মেডিক্যাল কলেজে এক রোগীর করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়েছে। করিমগঞ্জ জেলার বদরপুরের বাসিন্দা, ৫২ বছরের এই প্রৌঢ় সম্প্রতি দিল্লি থেকে ফিরলেও ওই ধর্মীয় অনুষ্ঠানটিতে যাননি। সরকারি সূত্রের খবর, তিনি লিউকোমিয়া ও ডায়াবিটিসে আক্রান্ত। চিকিৎসার জন্যই দিল্লি গিয়েছিলেন। তবে ওই ব্যক্তির ছেলে বলেন, ‘‘বাবা দিল্লির জামা মসজিদে নমাজ পড়তে গিয়েছিলেন। সেখানে ওই ধর্মীয় সম্মেলনে হাজির থাকা অনেকেই গিয়েছিলেন। তাই সেখানেও সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে।’’ প্রৌঢ়ের এখন অবস্থা স্থিতিশীল।
ঝাড়খণ্ডের প্রথম করোনা-রোগী অবশ্য মালয়েশীয়। পুলিশ-সূত্রে খবর, ১৭ জন বিদেশি-সহ ২২ জনের একটি দল গত ১৬ মার্চ রাজধানী এক্সপ্রেসে রাঁচী আসে। দলটিতে মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নেদারল্যান্ডস, বাংলাদেশের নাগরিক আছেন। লকডাউনে তাঁরা আটকে পড়েন। রাঁচীর হিন্দপীঢ়ী এলাকায় একটি ধর্মীয় স্থানে ছিল দলটি। প্রশাসন দলটিকে কোয়রান্টিন করে। এই দলেরই বছর পঁচিশের এক মালয়েশীয় যুবতীর শরীরে করোনার চিহ্ন মেলে।
মহারাষ্ট্রে শুধু আজকেই ৩ জন নার্স-সহ ৫৯ জনের করোনা-সংক্রমণ ধরা পড়েছে। রাজ্যে মোট সংক্রমণ ৩০২। দিল্লির ধর্মীয় সম্মেলনে তামিলনাড়ু থেকে সব চেয়ে বেশি পুণ্যার্থী গিয়েছিলেন। আজ সে রাজ্যে আরও ৫৭ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। মূলত ওই সম্মেলন থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা মাথায় রেখেই দেশে করোনার ‘হট স্পট’-এর সংখ্যা বাড়িয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। দিল্লিতে আজ নতুন সংক্রমণ ২৩টি।
অন্ধ্রে হোম-কোয়রান্টিনে থাকা প্রায় ২৫ হাজার মানুষের মোবাইলে নজর রাখছে সরকার। এ জন্য ‘কোভিড অ্যালার্ট ট্র্যাকিং সিস্টেম’ নামে একটি যান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টেরা বাড়ির ১০০ মিটার ব্যাসার্ধের বাইরে গেলেই পদক্ষেপ করা হবে। কর্নাটক ‘কোয়রান্টিন ওয়াচ’ নামে অ্যাপ এনেছে। বাড়িতে কোয়রান্টিনে থাকলে এক ঘণ্টা অন্তর ওই অ্যাপে নিজস্বী আপলোড করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিজস্বীর জিপিএস লোকেশন দেখে জানা যাবে, কেউ কোয়রান্টিন ভাঙছেন কি না। সমাজমাধ্যমে অবশ্য সমালোচনাও হয়েছে এই ধরনের পদক্ষেপের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy