জবলপুরের এক হাসপাতালে মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্তের চিকিৎসা। শনিবার। পিটিআই
কোভিডের মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চোখে জল এসে গিয়েছিল। আবেগরুদ্ধ গলায় তিনি সবাইকে কোভিডের টিকা নিয়ে ফেলার অনুরোধ করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর আর্জির ২৪ ঘন্টার মধ্যে দেশের রাজধানীতেই প্রতিষেধকের অভাবে ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের টিকাকরণ বন্ধ হয়ে গেল।
১ মে থেকে খাতায়-কলমে ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের টিকাকরণ শুরু হয়েছিল। কিন্তু মোদী সরকার এর দায় নেয়নি। অনেক রাজ্য টিকার অভাবে কমবয়সিদের টিকা দেওয়া শুরুই করতে পারেনি। দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরীবালের সরকার নিজের খরচে টিকা দিতে শুরু করেছিল। কিন্তু টিকা ফুরিয়ে যাওয়ায় শনিবারের পর থেকে তা বন্ধ হয়ে গেল।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর কটাক্ষ, ‘‘দেশে টিকা নেই। জিডিপি সবথেকে কম। কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা সবথেকে বেশি। সরকারের প্রতিক্রিয়া কী? প্রধানমন্ত্রী কাঁদছেন।’’
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর চোখ ভিজে আসার পরেই নাগরিক সমাজে প্রশ্ন উঠেছিল, এ কি কুম্ভীরাশ্রু? টুইটারে ট্রেন্ড করছিল ‘#ক্রোকোডাইলটিয়ার্স’, ‘#নৌটঙ্কি’! আজ রাহুল সেদিকে ইঙ্গিত করে টুইট করেছেন, ‘কুমিরেরা নির্দোষ!’
বিরোধীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, টিকাকরণের গতি কমে গেলে অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়বে। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম মনে করিয়ে দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ভারতকে টিকাকরণের শ্লথ গতি বিষয়ে সতর্ক করেছিল। যদি টিকাকরণের গতি না-বাড়ানো হয়, তা হলে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ রোখা যাবে না। অর্থনীতিতে এর ধাক্কা লাগবে।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রাক্তন অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু আজ পরিসংখ্যান তুলে ধরে দেখিয়েছেন, এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে আর্থিক বৃদ্ধির হারেও ভারতের স্থান একেবারে নীচের সারিতে। আবার প্রতি ১০ লক্ষে মৃত্যুর হারও ভারতে সবথেকে বেশি। তাঁর বক্তব্য, এটা আশ্চর্যের। কারণ ভারত টিকা উৎপাদনে প্রথম সারির দেশগুলির অন্যতম। ছয় বছর আগেও ভারত বিশ্বের দ্রুত গতির অর্থনীতিগুলির অন্যতম ছিল। আইএমএফ-এর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, মাথা পিছু জিডিপি-র হিসেবে ভারত এখন বাংলাদেশেরও পিছনে। গোটা বিশ্বে ভারতের স্থান ১৪৮তম। কেনিয়া, অ্যাঙ্গোলা, বাংলাদেশেরও পিছনে।
বিরোধীদের তোপের মুখে মোদী সরকারের যুক্তি, চলতি বছরের মধ্যেই দেশের ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সকলের টিকাকরণ হয়ে যাবে। আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রক দাবি করেছে, রাজ্যগুলিকে ৪৫ বছরের বেশি বয়সিদের জন্য টিকা জোগানো হচ্ছে। ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের জন্য রাজ্য টিকা কিনতে পারে। বেসরকারি হাসপাতালও টিকা কিনতে পারে। টিকা সংস্থাহগুলি যেহেতু রাজ্য সরকারের থেকে বেসরকারি হাসপাতালকে বেশি দামে টিকা বিক্রি করছে, তাই সেখানেই তারা আগে টিকা জোগাবে কি না, তা নিয়ে আগেই প্রশ্ন উঠেছিল। আজ অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে দাবি জানিয়েছেন, বেসরকারি হাসপাতালকে টিকা বিক্রি করা বন্ধ হোক। তারা ২ থেকে ২৫ হাজার টাকা দামে টিকা বিক্রি করছে। এ দিকে রাজ্য সরকার ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের মধ্যে যাদের আগে টিকা দিতে চাইছে, তাদের জন্য টিকা মিলছে না।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের দাবি, অগস্ট থেকে ডিসেম্বরে ২১৬ কোটি ডোজ় টিকা মিলবে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ পাল্টা মনে করিয়েছেন, জুলাইয়ের মধ্যে ৩০ কোটি ভারতীয়কে টিকা দেওয়া হবে বলে জানুয়ারি মাসে দাবি করেছিল মোদী সরকার। এখনও পর্যন্ত মাত্র ৪.১ কোটি মানুষের টিকাকরণ হয়েছে। এখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ২০২১-এ সকলের টিকাকরণের দাবি করছেন। বাস্তবে ২১ মে সারাদিনে মাত্র ১৪ লক্ষ টিকা দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর চোখের জলকেই কটাক্ষ করে জয়রাম বলেন, ‘‘আমাদের টিকা দরকার, কুম্ভীরাশ্রু নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy