ছবি: এএফপি।
ব্রিটেনে ছাড়পত্রের পরে এ বার ভারতেও জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের ছাড়পত্র চেয়ে আবেদন জানাল ফাইজ়ার বায়োএনটেক সংস্থা। গত ৪ ডিসেম্বর ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া বা ডিসিজিআই-এর কাছে ওই ছাড়পত্র চেয়ে আবেদন জানিয়েছে ফাইজ়ার। সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা না হলেও, ভারতের মাটিতে কোনও ধরনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ না করেই ওই সংস্থার সরাসরি প্রয়োগের অনুমতি চাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
গত বুধবার ব্রিটেনে করোনার টিকা ব্যবহারের ছাড়পত্র পেয়েছে ফাইজ়ার। সে দেশের সরকার জানিয়েছে, আগামী মঙ্গলবার থেকে তাদের দেশে টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হবে। প্রাথমিক পর্বে দু’কোটি মানুষকে দু’ডোজ় টিকা দেওয়ার জন্য ৪ কোটি টিকা লাগতে চলেছে বলে জানিয়েছে বরিস জনসনের সরকার। ফাইজ়ার সংস্থা তাদের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের তৃতীয় পর্যায়ে প্রায় ৪৩ হাজার ব্যক্তির উপরে প্রতিষেধক প্রয়োগ করে দাবি করেছে, তাদের টিকা ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কার্যকর। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে ফাইজ়ারের ভারতীয় শাখা ডিসিজিআইয়ের কাছে চিঠি লিখে আবেদন করেছে, এ দেশে ওই টিকা বিদেশ থেকে আমদানি করে ব্যবহারের অনুমতি দিক সরকার। ২০১৯ সালের ‘নিউ ড্রাগস অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে’র নীতির উল্লেখ করে ওই অনুমতি চেয়েছে ওই সংস্থা।
বিদেশি কোনও ওষুধ সংস্থা ডিসিজিআইয়ের অনুমতি পাওয়ার পরেই তাদের প্রতিষেধক ভারতের বাজারে ছাড়তে পারে। কিন্তু সেই ছাড়পত্রের আগে সেই বিদেশি প্রতিষেধকের অন্তত দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বাধ্যতামূলক বলেই মত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। সেই কারণেই কোনও বিদেশি প্রতিষেধক ভারতীয় স্বেচ্ছাসেবকদের উপরে ইতিবাচক না ক্ষতিকর, কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে, তা পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফলাফল খতিয়ে দেখেই তবেই তার ছাড়পত্র দিয়ে থাকে ডিসিজিআই। বর্তমানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা সংস্থার কোভিশিল্ড ও রাশিয়ার স্পুটনিক ভি টিকা সেই নিয়ম মেনেই প্রথমে দ্বিতীয় পর্বের পরীক্ষা শেষ করে এখন তৃতীয় পর্বে রয়েছে। তৃতীয় পর্বের প্রয়োগ শেষ হওয়ার পরে সেই ফলাফলের ভিত্তিতেই ভারতে তাদের টিকা ব্যবহারের ছাড়পত্র চাইবে বিদেশি দুই সংস্থা। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, দুই বিদেশি সংস্থা যখন নিয়ম মেনে ভারতে টিকার পরীক্ষা করছে, তখন ফাইজ়ার কোন যুক্তিতে বিদেশের মাটিতে হওয়া প্রয়োগের ভিত্তিতে ভারতে ছাড়পত্রের অনুমতি চাইল? স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ২০১৯ সালের নতুন নিয়মে ওই ছাড়ের কথা বলা রয়েছে। যার ভিত্তিতে ওই আবেদন করেছে সংস্থা। কিন্তু পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ছাড়াই ফাইজ়ারকে ওই টিকা প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হবে কি না, তা ঠিক করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: মোট আক্রান্তের ৯৪ শতাংশই সুস্থ, এক দিনে আক্রান্ত ৩৬ হাজার ১১, দেশে ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৪৮২
আরও পড়ুন: ১৭ স্বেচ্ছাসেবকের উপরে স্পুটনিক ভি পরীক্ষা পুণেতে
বায়োএথিক্স বিষয়ক স্বাস্থ্য গবেষক অনন্ত ভানের কথায়, “এটি একটি নতুন ভাইরাস। তা ছাড়া ফাইজারের টিকা এমআরএনএ জাতীয় প্রতিষেধক। বর্তমানে এ দেশে যেগুলির পরীক্ষামূলক প্রয়োগের তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে, সেগুলি থেকে আলাদা। ফলে ওই প্রতিষেধক ভারতের পরিবেশে কতটা কার্যকরী হবে, তা আমাদের কাছে অজানা। ফলে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। সেই কারণেই কোভিশিল্ড বা স্পুটনিকের এ দেশে প্রয়োগের ফলাফলের দিকে নজর রাখা হচ্ছে।’’ ভান মনে করেন, ‘‘ফাইজ়ারকে যদি পরীক্ষা ছাড়াই দেশে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়, তা হলে তা অন্য উদাহরণ তৈরি করবে। ভবিষ্যতে অন্য বিদেশি ওষুধ সংস্থাগুলি ফাইজ়ারের উদাহরণ টেনে পরীক্ষামূলক প্রয়োগে ছাড় চাইবে। সরাসরি এ দেশে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমতি চাইবে।’’ তবে আংশিক ভিন্ন মতও রয়েছে। দেশে অতিমারির পরিস্থিতিতে যেখানে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা ফি দিন মারা যাচ্ছেন, সেখানে ফাইজ়ারকে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিষেধক ব্যবহারের ছাড়পত্র দেওয়া যেতে পারে বলেই মনে করছেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজি-র সিনিয়র বিজ্ঞানী তথা ভাইরোলজিস্ট উপাসনা রায়। যদিও তিনিও জরুরি ভিত্তিতে অনুমতির পাশাপাশি যে কোনও বিদেশি প্রতিষেধকের অন্তত মানবদেহে তৃতীয় পর্বের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পক্ষে। তাঁর কথায়, “ফাইজ়ার সংস্থাকে জরুরি ভিত্তিতে অনুমতি দেওয়া হবে কি হবে না, তা ঠিক করবে সরকার। যদি ফাইজ়ার সংস্থা অনুমতি পায়, তা হলে তারা জরুরি ভিত্তিতে যাদের ওই প্রতিষেধক দেবে, (আমজনতাকে ওই টিকা দেওয়ার আগে) সেই টিকাকরণকেই সমান্তরাল ভাবে তৃতীয় পর্বের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বলে ধরা হোক।’’ তবে ভারতের মতো দেশে আমজনতাকে দেওয়ার প্রশ্নে ফাইজ়ারের টিকা কতটা সফল হতে পারবে, তা নিয়েও সংশয়ে উপাসনা। তুলনায় দাম বেশির পাশাপাশি ওই টিকা সংরক্ষণে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রা প্রয়োজন। উপাসনার কথায়, “ভারতে কিছু বড় শহরে ওই পরিকাঠামো থাকলেও, গ্রামীণ এলাকায় তা থাকা মুশকিলের। ফলে ওই টিকা নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা বেশ চ্যালেঞ্জের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy