Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Central Government

‘পক্ষপাত’ অক্সিজেন নিয়ে! কাঠগড়ায় কেন্দ্র

কোভিড পরিস্থিতি প্রায় এক হওয়া সত্ত্বেও মোদী নিজের রাজ্য গুজরাতে ১,২০০ টন অক্সিজেন পাঠিয়েছেন, কিন্তু রাজস্থান পেয়েছে মাত্র ১২৪ টন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৪০
Share: Save:

ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণের দাপটে হাসপাতালের শয্যার আকাল। অক্সিজেনের সঙ্কটও তৈরি হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অক্সিজেন জোগান নিয়েও রাজনীতির অভিযোগ তুলেছে রাজস্থান, মহারাষ্ট্রের মতো বিরোধী দল শাসিত রাজ্যগুলি। আজ বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানকে পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, অক্সিজেন, রেমডেসিভিয়ার এবং করোনা মোকাবিলার অন্য যাবতীয় সরঞ্জাম রাজ্যকে সরবরাহ করবে কেন্দ্র। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন জোগানের আশ্বাস দিলেও বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি বঞ্চিত হচ্ছে। রাজস্থানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রঘু শর্মার অভিযোগ, কোভিড পরিস্থিতি প্রায় এক হওয়া সত্ত্বেও মোদী নিজের রাজ্য গুজরাতে ১,২০০ টন অক্সিজেন পাঠিয়েছেন, কিন্তু রাজস্থান পেয়েছে মাত্র ১২৪ টন।

পাশাপাশি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, অলওয়ারের ভিওয়ান্ডিতে যে তরল অক্সিজেন প্ল্যান্ট রয়েছে, সেটির নিয়ন্ত্রণ এতদিন ছিল রাজ্যের হাতে। সে জন্য করোনার প্রথম দফায় অক্সিজেনের ঘাটতি মালুম হয়নি রাজ্যে। কিন্তু এ বারে যেখানে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন প্রয়োজন, সেই সময়ে সমস্ত অক্সিজেন প্ল্যান্ট এবং অক্সিজেন সরবরাহ নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণ কব্জা করেছে কেন্দ্র। ‘‘পর্যাপ্ত অক্সিজেনের জোগান না-থাকলে কী ভাবে সঙ্কটজনক রোগীদের বাঁচানো সম্ভব হবে?’’ প্রশ্ন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর। প্রতিষেধকের ঘাটতি নিয়েও কেন্দ্রকে নিশানা করেছেন রঘু।

অন্য দিকে রেমডেসিভিয়ার নিয়ে বিতর্কের পরে বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চ আজ জানিয়েছে, প্রয়োজনের ভিত্তিতে রেমডেসিভিয়ার ইঞ্জেকশন সরবরাহ করা হোক। এর সঙ্গে সঙ্গেই কেন্দ্র ও মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে আদালত জানতে চেয়েছে, কোন কোন মাপকাঠির নিরিখে বিভিন্ন রাজ্য এবং জেলাগুলিতে রেমডেসিভিয়ার সরবরাহ করা হচ্ছে? ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, যদি দেশে মোট সংক্রমণের ৪০ শতাংশ মহারাষ্ট্রে থাকে, রেমডেসিভিয়ার জোগানেও সেই অনুপাত বজায় রাখা উচিত।

আজ এমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া অবশ্য জানিয়েছেন, রেমডেসিভিয়ার কোনও ম্যাজিক বুলেট কিংবা মৃত্যু কমানোর ওষুধ নয়। অন্য কোনও ‘অ্যান্টি ভাইরাল’ ওষুধ না থাকায় রেমডেসিভিয়ার ব্যবহার করা হচ্ছে।

অক্সিজেন ও রেমডেসিভিয়ার নিয়ে চাপান-উতোরের মধ্যেই গুজরাতের বিজয় রূপাণী সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তথ্য গোপনের। অভিযোগ, রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিলেও ভাবমূর্তি বজায় রাখতে করোনায় মৃতের সংখ্যা কমিয়ে দেখাচ্ছে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি রুপাল ঠক্কর নামে এক মহিলা করোনায় আক্রান্ত হয়ে শালবি হাসপাতালে ভর্তি হন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর। কিন্তু ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা হয়েছে, হৃদ্‌রোগে মৃত্যু হয়েছে ওই মহিলার। এ রকম বহু করোনা রোগীর মৃত্যুর কারণ আড়াল করা হয়েছে বলে
অভিযোগ উঠেছে। যেমন, ১৬ এপ্রিল রাজ্যের প্রকাশিত বুলেটিনে জানানো হয়, ৮১ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু আমদাবাদ, সুরাত, রাজকোট, বডোডরা, গাঁধীনগর, জামনগর এবং ভাবনগরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ওই দিন ৬৮৯ জনের শেষকৃত্য হয়েছে কোভিড বিধি মেনে। এ ভাবেই স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে হাসপাতাল, শ্মশান ও কবরস্থান থেকে প্রাপ্ত তথ্যের অমিল দেখা যাচ্ছে। উত্তরপ্রদেশেও একই অভিযোগ উঠেছে।

এ দিকে সংক্রমণের শীর্ষে থাকা মহারাষ্ট্র গত কাল ছ’টি রাজ্যকে (কেরল, গোয়া, গুজরাত, দিল্লি ও এনসিআর অঞ্চল, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড) ‘সংবেদনশীল’ চিহ্নিত করে জানিয়েছে, এই ৬ রাজ্য থেকে কোনও ব্যক্তিকে মহারাষ্ট্রে ঢুকতে হলে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট দেখাতে হবে।

গত কয়েক দিনের মতো আজও নয়া নজির তৈরি হচ্ছে দেশে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, আজ করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা দেড় কোটি পেরিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিতের সংখ্যা প্রায় পৌনে তিন লক্ষ ছুঁইছুঁই। এই নিয়ে টানা পাঁচ দিন দু’লক্ষের গণ্ডি অতিক্রম করল সংক্রমণ। দৈনিক মৃতের সংখ্যাও ১,৬০০ পেরিয়েছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে শ্বাসকষ্টের সমস্যা তীব্র আকার নিচ্ছে। নীতি আয়োগের সদস্য ভি কে পলের বক্তব্য, এই দফায় শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি শারীরিক ব্যথাতেও কাবু হচ্ছেন বহু মানুষ। মোট আক্রান্তের ৭০ শতাংশের বয়সই চল্লিশোর্ধ্ব। তবে বয়স্কদের অবস্থা তুলনামূলক ভাবে বেশি সঙ্কটজনক বলে জানিয়েছেন আইসিএমআরের ডিজি বলরাম ভার্গব।

কোভিড পরিস্থিতিতে আগামীকাল, মঙ্গলবার থেকে ৯ জুন পর্যন্ত দিল্লির বিদ্যালয়গুলিতে গরমের ছুটি ঘোষণা করেছে কেজরীবাল সরকার।

গত কাল কেন্দ্র জানিয়েছে, করোনার জেরে বিপর্যস্ত মহারাষ্ট্র-সহ ১২টি রাজ্যে মেডিক্যাল অক্সিজেনের জোগান বাড়ানো হচ্ছে। মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের প্রস্তাবের নিরিখে রেলের তরফে জানানো হয়েছে, করোনা মোকাবিলায় গ্রিন করিডর তৈরি করে ‘অক্সিজেন এক্সপ্রেস ট্রেন’ চালানো হবে। গত ২৪ ঘণ্টায় বিপুল সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন মহারাষ্ট্র (৬৮,৬৩১), দিল্লি (২৫,৪৬২) এবং কর্নাটকে (১৯,০৬৭, এর মধ্যে শুধু বেঙ্গালুরুতে সংখ্যাটা ১৩ হাজার ছুঁইছুঁই)।

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Central Government Oxygen Cylinder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy