Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in India

DELTA PLUS STRAIN: ভয়ঙ্কর ডেল্টা প্লাসে তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা, উদ্বিগ্ন কেন্দ্র চিঠি দিল তিন রাজ্যকে

ইতিমধ্যেই ডেল্টা প্লাস স্ট্রেনের কারণে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে ব্রিটেনে। আরও ৯টি দেশে চোখ রাঙাচ্ছে ডেল্টা প্লাস।

তৃতীয় ধাক্কার বার্তা নিয়ে উপস্থিত ডেল্টা প্লাস স্ট্রেন।

তৃতীয় ধাক্কার বার্তা নিয়ে উপস্থিত ডেল্টা প্লাস স্ট্রেন। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২১ ০৭:৩৫
Share: Save:

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঝড়ের রেশ কাটতে না-কাটতেই তৃতীয় ধাক্কার বার্তা নিয়ে উপস্থিত ডেল্টা প্লাস স্ট্রেন। ইতিমধ্যেই ভারতের তিন রাজ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে ওই নতুন স্ট্রেনটি।

মূল করোনাভাইরাসের থেকে চরিত্র বদল করা ডেল্টা প্লাস স্ট্রেনটি সংক্রমণের নিরিখে প্রবল শক্তিশালী। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এক বার ওই স্ট্রেন ছড়াতে শুরু করলে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা কার্যত দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে। ইতিমধ্যেই ডেল্টা প্লাস স্ট্রেনের কারণে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে ব্রিটেনে। আমেরিকা, রাশিয়া, চিন, পোলান্ড, সুইৎজ়ারল্যান্ড, জাপান-সহ ৯টি দেশে চোখ রাঙাচ্ছে ডেল্টা প্লাস। ভারতে ইতিমধ্যেই তিনটি রাজ্যে ২২ জন আক্রান্ত হয়েছেন ওই স্ট্রেনে। দুশ্চিন্তার বিষয় হল, এত দিন যে পদ্ধতিতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা হয়ে এসেছে, ডেল্টা প্লাসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে তা-ও কাজ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ডেল্টা প্লাসের সংক্রমণকে একেবারে গোড়াতেই বাঁধা না-গেলে দ্বিতীয় ঢেউয়ের চেয়েও বেশি মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন। এমস অধিকর্তা রণদীপ গুলেরিয়া-সহ একাধিক বিশেষজ্ঞ বলছেন, যে ভাবে লকডাউন উঠতেই কোভিড বিধিকে অগ্রাহ্য করে জনতা রাস্তায় নেমে পড়েছে, তাতে তৃতীয় ঢেউ অবশ্যম্ভাবী এবং আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে তা ভারতে আছড়ে পড়বে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারকে তৈরি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী।

ডেল্টা প্লাসকে গোড়াতেই রুখতে আজ মহারাষ্ট্র, কেরল ও মধ্যপ্রদেশকে সতর্ক করে দিয়েছে কেন্দ্র। স্বাস্থ্য মন্ত্রক চিঠিতে জানিয়েছে, মহারাষ্ট্রের রত্নগিরি ও জলগাঁও, কেরলের পলক্কড় ও পঠানামথিট্টা এবং মধ্যপ্রদেশের ভোপাল ও শিবপুরী জেলার করোনা আক্রান্তদের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করে ২২ জনের শরীরে ডেল্টা প্লাস স্ট্রেনের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পল বলেন, ‘‘অন্যান্য দেশে ডেল্টা স্ট্রেনের কারণে অনেকে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এই স্ট্রেন দ্রুত গতিতে ছড়ায় ও খুব অল্প সময়ে বহু মানুষকে আক্রমণ করে।’’ বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেল্টা প্লাস স্ট্রেনের সম্পর্কে বিশদে এখনও জানা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে এই স্ট্রেন আগামী দিনে কী ভাবে চরিত্র বদল করবে, তা

নিয়েও কারও বিশেষ কোনও ধারণা নেই। ভারতে টিকাকরণে ব্যবহৃত মূল দু’টি প্রতিষেধক কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন ডেল্টা স্ট্রেনের বিরুদ্ধে কার্যকরী হলেও ডেল্টা প্লাসের বিরুদ্ধে সেগুলির কার্যকারিতা সম্পর্কে এখনও তেমন কিছুই জানাতে পারেননি স্বাস্থ্যকর্তারা। আজ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ বলেন, ‘‘পরে এই বিষয়ে জানানো হবে।’’

প্রাথমিক ভাবে আজ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে তিন রাজ্যকে সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, প্রবল সংক্রামক ডেল্টা প্লাস স্ট্রেনের ভাইরাস ফুসফুসের কোষকে আরও দৃঢ় ভাবে আঁকড়ে থাকে। ফলে ফুসফুসের ক্ষতি হয় বেশি। এ ছাড়া এই স্ট্রেনের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভীষণ ভাবে কমে যায়। সেই কারণে যে এলাকাগুলিতে ডেল্টা প্লাসের নমুনা পাওয়া গিয়েছে, সেখানে নজরদারি কয়েক গুণ বাড়ানো দরকার। চিঠিতে তিন রাজ্যের মুখ্যসচিবের উদ্দেশে বলা হয়েছে— ওই এলাকাগুলিকে অবিলম্বে কনটেনমেন্ট জ়োন হিসেবে ঘোষণা করে সেখানে গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য পরীক্ষা বাড়াতে হবে, আক্রান্তরা কাদের সংস্পর্শে এসেছেন, তা দ্রুত চিহ্নিত করতে হবে। ডেল্টা প্লাস ছড়ানো এলাকাগুলিতে একশো শতাংশ টিকাকরণে জোর দিতেও বলা হয়েছে। বিনোদ পলের কথায়, ‘‘তৃতীয় ঢেউ রুখতে হলে দরকার কঠোর কোভিড বিধি পালন ও দ্রুত টিকাকরণ।’’

ডেল্টা প্লাস স্ট্রেনটিকে কী ভাবে উল্লেখ করা হবে, তা নিয়ে আজ কেন্দ্রের তরফে কিছুটা দোলাচল চোখে পড়ে। প্রথমে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বিবৃতিতে সেটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ (উদ্বেগজনক) বলা হয়েছিল। পরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব সাংবাদিক বৈঠকে সেটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ অর্থাৎ নজরদারির আওতায় থাকা ভ্যারিয়েন্ট বলেন। রাতে ফের সেটিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলেই চিহ্নিত করেছে কেন্দ্র।

দ্বিতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলায় সরকারের কোথায় খামতি ছিল, তা নিয়ে কংগ্রেস আজ একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। রাহুল বলেন, ‘‘তৃতীয় ঢেউ আরও ভয়ঙ্কর হবে। অক্সিজেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেড, ওষুধের বন্দোবস্ত করতে হবে। আমার হিসেবে, দ্বিতীয় ধাক্কায় সরকারি হিসেবের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা অন্তত ৫-৬ গুণ বেশি।’’ সম্প্রতি বারাণসীর স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে অনলাইনে কথার সময়ে চোখের জল ফেলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আজ রাহুল বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর চোখের জলে স্বজনহারা পরিবারের চোখের জল মুছবে না। তাঁর চোখের জল নয়, অক্সিজেন বাঁচাতে পারত ওই সব মানুষদের। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বাংলার ভোটে লড়ছিলেন। নজর ছিল অন্য কোথাও।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in India COVID19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE