প্রতীকী ছবি।
কোভিডের টিকাকরণের জন্য বাজেটে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করে মোদী সরকার দাবি করেছিল, এই টাকায় দেশের প্রায় ৫০ কোটি মানুষের টিকাকরণ হবে। এ বার মোদী সরকার ৪৫ বছরের কমবয়সিদের প্রতিষেধকের দায় রাজ্য সরকার বা আমজনতার উপরেই ছেড়ে দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন্দ্রীয় সরকার কি ৫০ কোটি মানুষকে আদৌ প্রতিষেধক দেবে?
কোভিডের টিকাকরণের প্রথম দফায় ৩ কোটি ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী ও কোভিডের মোকাবিলায় প্রথম সারিতে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকাকরণ হয়েছিল। তার পরে ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে সকলের জন্য ও ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে যাঁদের কোমর্বিডিটি বা অন্যান্য অসুখ রয়েছে, তাঁদের জন্যও টিকাকরণ শুরু হয়েছে। এই দফায় ২৭ কোটি মানুষের টিকাকরণের লক্ষ্য নিয়েছে কেন্দ্র। এর পরে ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে সকলের জন্যই টিকাকরণের দরজা খুলে দিয়ে কেন্দ্র জানিয়েছে, এর ফলে মোট ৩৪ কোটি মানুষ টিকা নিতে পারবেন। এঁরা প্রত্যেকেই চাইলে নিখরচায় সরকারি হাসপাতালে টিকা নিতে পারবেন। কেন্দ্র জানিয়েছে, ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সিদের টিকাকরণে কেন্দ্র কোনও খরচ বহন করবে না। হয় রাজ্য নিজের খরচে বিনামূল্যে টিকা দেবে। না-হলে সাধারণ মানুষকে প্রতিষেধক কিনতে হবে।
তবে কি বাজেটে ৫০ কোটি মানুষের জন্য টিকার জন্য অর্থ বরাদ্দের কথা বলে এখন ১৬ কোটি মানুষের দায় ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছে মোদী সরকার? এই ১৬ কোটি মানুষকে কেন্দ্রীয় সরকার কেন প্রতিষেধক দিচ্ছে না? এই বিষয়ে অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা এখনও পর্যন্ত নীরব।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, মাথা পিছু প্রতিষেধক দিতে ৭০০ টাকা খরচ পড়বে ধরে নিয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকায় ৫০ কোটি মানুষের টিকাকরণ বলে অনুমান করা হয়েছিল। প্রতিষেধকের দাম ধরা হয়েছিল ডোজ় প্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। দু’ডোজ প্রতিষেধকের জন্য সর্বাধিক ৫০০ টাকা ধরে মাথা পিছু আরও ২০০ টাকা সিরিঞ্জ, নার্সের ফি, মজুত, পরিবহণের জন্য ধরা হয়েছিল। পরে অবশ্য কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন ১৫০ টাকা প্রতি ডোজ়েই কেনা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিষেধকের জন্য মাথা পিছু ৩০০ টাকাতেই খরচ মিটে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে মাথা পিছু খরচ আরও কম পড়ছে। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “এই হিসেবে ৩৫ হাজার কোটি টাকায় ৫০ কোটির বেশি মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়া সম্ভব। তা ছাড়া অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছিলেন, প্রয়োজনে তিনি আরও অর্থ বরাদ্দ করবেন।”
বরাদ্দ অনুযায়ী সম্ভব হলেও ৪৫ বছরের কম বয়সের গরিব মানুষকে সরকারি খরচে প্রতিষেধক দেওয়া হবে না কেন? অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এ বিষয়ে রাজনৈতিক স্তরেই সিদ্ধান্ত হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “কোনও জনগোষ্ঠীর ৭০ শতাংশ ব্যক্তির মধ্যে প্রতিষেধকের মাধ্যমে গোষ্ঠী প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হলেই করোনা সংক্রমণকে রুখে দেওয়া সম্ভব। কেন্দ্র তাই ৩৪ কোটি মানুষকে প্রতিষেধকের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্য নিয়েছে। গোটা দেশের মানুষকে বিনা মূল্যে প্রতিষেধক দেওয়ার অর্থ সরকারের কোষাগারে নেই।”
বিরোধীদের প্রশ্ন অন্য খাতে ব্যয় নিয়েও। সরকার যেখানে কোষাগারে এত টাকা নেই বলে সকলকে
নিখরচায় প্রতিষেধক দিতে নারাজ, সেখানে ২০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দিল্লির সেন্ট্রাল ভিস্টা তৈরি করছেন কেন? প্রায় ৯০০ কোটি টাকা খরচে নতুন সংসদ ভবনের
কাজ আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল।
এ বার রাইসিনা হিলস থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত ২০ হাজার কোটি টাকার সেন্ট্রাল ভিস্টা প্রকল্পের কাজও অতিমারির মোকাবিলার মধ্যেই শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতর তিনটি সচিবালয় তৈরির জন্য দরপত্র ডেকেছে। এতে প্রায় ৩৪০০ কোটি টাকা খরচ হবে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী বলেন, “কোভিডের সঙ্কট, পরীক্ষা হচ্ছে না, প্রতিষেধক, অক্সিজেন, আইসিইউ বেড মিলছে না। কিন্তু সরকারের অগ্রাধিকার!” রাহুল আজ একটি টুইটে তুলে ধরেছেন, কোন দেশে কত শতাংশ মানুষ এ পর্যন্ত দুই ডোজ় টিকা পেয়েছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকায় এটা ২৬.৫%, ব্রিটেনে ১৫.৯%, ইটালিতে ৭.৯%। তার পরে আছে ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রাজিল, মেক্সিকো ও ইন্দোনেশিয়া। এর পরে ভারতে জনসংখ্যার ১.৪% ও বাংলাদেশের ১% মানুষ টিকার দুই ডোজ পেয়েছেন। সঙ্গে রাহুল লিখেছেন, “ভারতের টিকা প্রয়োজন, মিস্টার মিথ্যা বলার যন্ত্র (লাইং মেশিন)!”
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রর দাবি, এখনই ২০ হাজার কোটি টাকার সেন্ট্রাল ভিস্টার কাজ বন্ধ করে সকলের জন্য নিখরচায় প্রতিষেধকের বন্দোবস্ত হোক। তাঁর বক্তব্য, “প্রধানমন্ত্রীজি, এটা আমাদের টাকা। আমাদের জীবন রক্ষায় এই টাকা খরচ করুন, আমাদের সমাধি তৈরির জন্য নয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy