Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in India

দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে সতর্কবার্তা থাকলেও প্রস্তুতি ছিল না, অবশেষে স্বীকার করল কেন্দ্র

এপ্রিল মাসে পৌঁছে কোনও কোনও মডেল পরিস্থিতির পূর্বাভাস দেওয়া শুরু করে। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে তখন।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২১ ০৫:১৯
Share: Save:

আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কা যে দেশে এত প্রবল আকার নেবে, তা ভাবতে পারেননি বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য কর্তারা। প্রস্তুতিতেও খামতি থেকে গিয়েছে। যার ফলে সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক গণস্বাস্থ্য সংস্থাগুলিও বলছে, প্রথম দফার সংক্রমণ কমে আসায় নরেন্দ্র মোদী সরকার যে ভাবে আনন্দে লাফালাফি শুরু করেছিল, দ্বিতীয় ঢেউয়ের সতর্কতা তারা কানেই তোলেনি। তারই ফল ভুগতে হচ্ছে মানুষকে। পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে আজ সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে— আগামী দিনে মূলত গ্রামীণ ভারত বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে।

গত জানুয়ারি মাসে গোটা দেশে রক্ত বা সেরো সমীক্ষা করেছিল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ। তখনই দেখা গিয়েছিল, প্রথম ধাক্কায় দেশের মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ করোনার শিকার হয়েছেন। নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পলের কথায়, “তখনই বোঝা গিয়েছিল দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ করোনা আক্রমণের শিকার হতে পারেন।” ভারতের মতো জনবহুল দেশে ৮০ শতাংশের কাছাকাছি মানুষের আক্রান্ত হওয়ার পরিস্থিতি থাকলে, প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা নির্ণয় করা যে দুঃসাধ্য, তা স্বীকার করে নিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। বিনোদ পলের কথায়, সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ধাক্কায় কত লোক এ দেশে আক্রান্ত হতে পারে, কোনও মডেলের পক্ষে তার প্রকৃত পূর্বাভাস দেওয়া হয়নি।

সূত্রের মতে, ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছিল। প্রথম সংক্রমণের ঢেউ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও দ্বিতীয় ঢেউ অকল্পনীয় গতিতে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ফলে মে মাসে সংক্রমণের চিত্র দেশে কতটা খারাপ হতে পারে, সেই সময়ে তা কেউই আঁচ করতে পারেননি। এপ্রিল মাসে পৌঁছে কোনও কোনও মডেল পরিস্থিতির পূর্বাভাস দেওয়া শুরু করে। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে তখন।

বিনোদ পলের কথায়, “দ্বিতীয় ধাক্কায় পরিস্থিতি অবনতির জন্য সাধারণ মানুষের ভূমিকাও অনেকাংশে দায়ী। মাস্ক না-পরা, কোভিড প্রটোকল মেনে না চলা এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। আমজনতা নিয়ম মেনে চললে পরিস্থিতি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হত। সরকার মানুষকে কোভিড সতর্কবিধি মেনে চলার কথা বললেও জনতার বড় অংশ তাতে কর্ণপাত করেননি।” তবে করোনা চলে গিয়েছে, করোনার বিরুদ্ধে জয় পাওয়া গিয়েছে— মোদী সরকারের এই মনোভাবও অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক গণস্বাস্থ্য সংস্থাগুলি।

বর্তমান যে পরিস্থিতি, তাতে আগামী এক-দেড় মাস গ্রামীণ ভারত মূলত বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। করোনার প্রথম ধাক্কায় প্রধানত বড় শহরগুলি আক্রান্ত হয়েছিল। দ্বিতীয় ধাক্কায় দেখা যাচ্ছে, মাঝারি ও ছোট শহর পেরিয়ে সংক্রমণের ঢেউ ছোট শহর বা গ্রামীণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। বিনোদ পল বলেন, “অতিমারির সময়ে সংক্রমণ এ ভাবেই ছড়ায়। শহরে ছড়ানোর নতুন জায়গা না-পেলে সংক্রমণ তখন গ্রামীণ এলাকায় এগোতে থাকে। পরিযায়ী শ্রমিকদের শহর থেকে গ্রামে ফিরে যাওয়া এই প্রক্রিয়াকে দ্রুত করে।” স্বাস্থ্য কর্তাদের মতে, দ্বিতীয় দফায় কেন্দ্র লকডাউন ঘোষণা না-করলেও, যে ভাবে বিভিন্ন রাজ্যগুলি নিজেদের মতো লকডাউন ঘোষণা করেছে, তাতে শহর থেকে ফের গ্রামে ফেরা শুরু হয়ে গিয়েছে। যা সংক্রমণকে দ্রুত গ্রামীণ ভারতের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আগামী দিনগুলোয় গ্রামীণ ভারতকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করা যে বড় চ্যালেঞ্জ, তা স্বীকার করে নিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্তারা।

এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, শহরগুলিতে তাও কিছুটা হলেও স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ছিল। কিন্তু গ্রামীণ ভারতের পরিকাঠামোর অপ্রতুলতার কথা মাথায় রেখে সরকার এখন থেকেই সেখানে নিভৃতবাস, স্কুল-কলেজগুলিতে স্বাস্থ্যশিবির বানানোর কাজে হাত লাগিয়েছে। আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল দাবি করেন, চলতি সপ্তাহে দেশের বেশ কিছু প্রান্তে, মূলত শহরগুলিতে করোনা সংক্রমণে রাশ টানা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু দেশের গ্রামীণ এলাকায় সংক্রমণ বাড়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। যা রোখাই এখন সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in India COVID19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE