ছবি এপি।
পশ্চিমবঙ্গে গোষ্ঠী-সংক্রমণ শুরু হওয়ার তত্ত্ব উড়িয়ে দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। উল্টে কেন্দ্রের দাবি, গোষ্ঠী-সংক্রমণ নিয়ে মাথা না-ঘামিয়ে বরং বাস্তবের মাটিতে করোনার সংক্রমণ রুখতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করুক পশ্চিমবঙ্গ। সংক্রমণ রোখার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের নানবিধ খামতির কারণেই রাজ্যে সংক্রমিতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
প্রথমে কেরল, তার পরে গত কাল পশ্চিমবঙ্গ দাবি করে, রাজ্যের একাধিক এলাকায় গোষ্ঠী-সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রকৃত চিত্রটি কী, তা জানতে আজ প্রশ্ন করা হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) রাজেশ ভূষণ দেশে কোথাও গোষ্ঠী-সংক্রমণ হয়েছে বলে মানতে চাননি। তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) গোষ্ঠী-সংক্রমণের কোনও পরিভাষা বেঁধে দেয়নি। তবে কোনও ব্যক্তি কোথা থেকে সংক্রমিত হচ্ছেন, তা খুঁজে না-পাওয়া গেলে গোষ্ঠী-সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গের গোষ্ঠী-সংক্রমণের দাবি প্রসঙ্গে রাজেশ বলেন, ‘‘দেশের কোনও কোনও এলাকা থেকে সংক্রমণের প্রচুর ঘটনা সামনে এসেছে। যার অর্থ, ওই এলাকাগুলিতে স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। সেই সংক্রমণ গোষ্ঠী পর্যায়ে ছড়িয়েছে কি না, তা নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা চলতেই পারে। কিন্তু তার চেয়েও প্রয়োজন হল গণ্ডিবদ্ধ সংক্রমিত এলাকাকে চিহ্নিত করা। ওই এলাকার ঘরে-ঘরে গিয়ে সংক্রমিতদের খোঁজ করা, তাঁদের নিভৃতবাসে পাঠানো, উপসর্গহীন সংক্রমিত মানুষদের আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা। এগুলি অনেক বেশি জরুরি।’’ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, দিল্লিতে ওই পথে হেঁটেই সাফল্য এসেছে। কমেছে সংক্রমণের সংখ্যা। বাকি রাজ্যগুলির উচিত সেই নীতি মেনেই চলা।
গোড়া থেকেই দেশের কোনও প্রান্তে গোষ্ঠী-সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলে মানেনি কেন্দ্র। যদিও ভাইরোলজিস্টদের মতে, বতর্মানে যেখানে রোজ গড়ে প্রায় ৪০ হাজার সংক্রমণ হচ্ছে, মোট সংক্রমণ ১২ লক্ষের কাছাকাছি— তখন গোষ্ঠী-সংক্রমণ শুরু হয়েছে কি না, সেই বিতর্ক অর্থহীন। এত মানুষের একসঙ্গে এক দিনে সংক্রমিত হওয়া এবং নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ফি-দিন বাড়তে থাকাই বলে দিচ্ছে, সংক্রমণ রোখার ক্ষেত্রে সাফল্য আসতে এখনও ঢের দেরি। যদিও সরকারের একাংশেরই মতে, গোষ্ঠী-সংক্রমণের কথা স্বীকার করে নিলে কেন্দ্রের দফায় দফায় লকডাউন, তার নিয়ম, বিভিন্ন রঙের কন্টেনমেন্ট জ়োন, সেগুলির জন্য আলাদা নীতি— এ সবই বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়বে।
আরও পড়ুন: নিশ্চিন্ত থাকা যাবে না কোভিড সেরে গেলেও
সেই কারণে কোনও ভাবেই কোনও রাজ্যে, এমনকি পশ্চিমবঙ্গের মতো বিরোধী রাজ্য হলেও গোষ্ঠী-সংক্রমণের তত্ত্ব মানতে রাজি নয় কেন্দ্র।
সংক্রমণ রোখার প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে আগেও সরব হয়েছে কেন্দ্র। বর্তমান পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গকে আরও অনুশাসন মেনে সংক্রমণ রোখার কাজে ঝাঁপাতে হবে বলেই মনে করছেন নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ভি কে পল। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের উচিত আরও নজরদারি বাড়ানো। পরীক্ষা বাড়াতে হবে। কন্টেনমেন্ট জ়োনেও বিশেষ সতর্কতা নিতে হবে।’’ কেন্দ্রের বক্তব্য, গোটা দেশে গড়ে আজকের দিনে প্রতি দশ লক্ষে ১৮০টি নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, প্রতি দশ লক্ষে অন্তত ১৪০টি পরীক্ষা করতে হবে। অথচ পশ্চিমবঙ্গ এখনও সেই লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়নি। মৃত্যুহারের নিরিখেও জাতীয় গড়ের চেয়ে খারাপ পশ্চিমবঙ্গের চিত্র। রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোও বিশেষ আশাপ্রদ নয় বলেই মনে করছে কেন্দ্র।
আরও পড়ুন: পুরনো রূপেই ফিরল নতুন পর্বের লকডাউনের নিয়ন্ত্রণবিধি
এমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া মনে করেন, ‘‘এর জন্য পরীক্ষা বাড়ানো ও দ্রুত সংক্রমিতদের চিহ্নিত করায় জোর দেওয়া প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্বের রাজ্যগুলিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের আনাগোনাও সংক্রমিতের সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।’’
পশ্চিমবঙ্গে গণ্ডিবদ্ধ সংক্রমিত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy