Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus in India

শ্বশুরকে পিঠে করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অসমের নীহারিকা

শ্বশুরের জ্বর ও কোভিডের উপসর্গ দেখা দেওয়ায় নীহারিকা তাঁকে পরীক্ষা করাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেকের সাহায্য চেয়েও পাননি।

নীহারিকার এই ছবিই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

নীহারিকার এই ছবিই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২১ ০৬:৫৫
Share: Save:

পরনের গোলাপি মেখলা, আঁচল কোমরে কষে আঁটা। অবলীলায় এক জনকে কাঁধে চাপিয়ে হেঁটে চলেছেন এক মহিলা। পিঠ আঁকড়ে ঝুলছেন এক বৃদ্ধ। কোভিড আক্রান্ত শ্বশুরকে পিঠে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া নীহারিকা দাসের এই ছবি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। অসমের অভিনেত্রী থেকে বিহার-মুম্বই-চেন্নাইয়ের বহু মানুষ কুর্নিশ জানাচ্ছেন অসমের নগাঁও জেলার নীহারিকাকে। কিন্তু জনপ্রিয়তা, ভাইরাল হওয়া, মানুষের কুর্নিশে আপাতত পাত্তা দেওয়ার অবস্থায় নেই নিজেও কোভিডে আক্রান্ত নীহারিকার। একটাই চিন্তা, একা হাতে নিজেকে আর শ্বশুরমশাইকে কী ভাবে সামলাবেন! কর্মসূত্রে রাজ্যের বাইরে থাকেন স্বামী সূরজ। ভাটিগাঁওয়ের বাড়িতে ৭৫ বছর বয়সি থুলেশ্বরের দেখভাল, সংসার সামলানো সব নীহারিকাই করেন।

শ্বশুরের জ্বর ও কোভিডের উপসর্গ দেখা দেওয়ায় নীহারিকা তাঁকে পরীক্ষা করাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেকের সাহায্য চেয়েও পাননি। তাই শ্বশুরমশাইকে পিঠে ফেলেই তিনি রওনা হন রহা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে থুলেশ্বরবাবুর কোভিড ধরা পড়ে। কোভিড ধরা পড়ে বৌমারও। স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে থুলেশ্বরবাবুকে হাসপাতাল ও নীহারিকাকে হোম আইসোলেশনে পাঠানো হয়। কিন্তু অসহায় শ্বশুরকে একা ছাড়তে রাজি হননি নীহারিকা। বসে থাকেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসক সঙ্গীতা ধর দু’জনকেই অ্যাম্বুল্যান্সে ভোগেশ্বর ফুকনানি হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

হাসপাতালে জেনারেল ওয়ার্ড থেকে নিয়ম করে এসে আইসিইউতে ভর্তি শ্বশুরের সেবা করছিলেন নীহারিকা। সেই ভিডিয়োও ছড়িয়ে পড়েছে। কখনও বউমা শ্বশুরের কপালে চুমু খেয়ে সাহস দেন। কখনও মজা করেন। কখনও বলেন, “এটা আইসিইউ দেউতা (বাবা), ভয় পাবেন না। বুড়ো হয়ে ঢুকেছেন, ডেকা (যুবক) হয়ে বেরোবেন।” কখনও তাঁকে বলতে শোনা যায়, “দেউতা আপনার কোনও চিন্তা নেই। কাঁদবেন না একদম। আমি তো আছি আপনার ভরসা। আর আমার আছেন আপনি।”

কিন্তু থুলেশ্বরবাবুর অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় গত কাল তাঁকে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। আসতে পারেননি নীহারিকা। তিনি ভিডিয়ো বার্তায় হাতজোড় করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, “শ্বশুরের রক্ত লাগবে শুনছি। তাঁর পাশে কেউ নেই। আমার নিজের শরীর ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। শক্তি শেষ হয়ে আসছে। দয়া করে আমায় গুয়াহাটির একই হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। না হলে শ্বশুরমশায়কে সাহায্যের কেউ থাকবে না।”

নীহারিকার ছবি ও ভিডিয়ো দেখে মুগ্ধ অভিনেত্রী আইমি বরুয়া বলেন, “নারীশক্তির অনন্য চেহারা নীহারিকা।” অবশ্য অনেকেই মন্তব্য করছেন, পিঠে করে শ্বশুরকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টির পিছনে যে পরিকাঠামোর অভাব, সরকারি সদিচ্ছার অভাব, দারিদ্রের যন্ত্রণা লুকিয়ে রয়েছে— তার সমালোচনা ও সংশোধন হওয়া বেশি প্রয়োজন।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in India Covid Patient
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy