প্রতীকী ছবি।
ফাইজ়ারের পথেই জরুরি ভিত্তিতে টিকা ব্যবহারের অনুমতি চাওয়ার হিড়িক পড়ে গেল! পরীক্ষামূলক পর্বের ফল হাতে আসার আগেই সরকারের কাছে টিকা প্রয়োগের অনুমতি চেয়ে প্রথমে ফাইজ়ার, তার পরে সিরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটক আবেদন জানাল নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাছে। এই ভয়টিই করছিলেন বিশেষজ্ঞেরা। পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শেষ হওয়ার আগে আগে এ ভাবে নতুন একটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গণটিকাকরণ করার অনুমতি চাওয়াটা কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
ব্রিটেনে তাদের প্রয়োগের ফলাফলের ভিত্তিতে এ দেশে কোনও পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ছাড়াই ব্যবহারের অনুমতি চায় ফাইজ়ার সংস্থা। ২০১৯ সালের নিউ ড্রাগস অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নীতির উল্লেখ করে ওই অনুমতি চেয়েছিল ওই সংস্থা। ফাইজ়ারের বিষয়টি সামনে আসতেই গত কাল সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়াও ভারতে জরুরি ভিত্তিতে তাদের কোভিশিল্ড প্রতিষেধক ব্যবহারের জন্য ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই)-এর অনুমতি চায়। হায়দরাবাদের ভারত বায়োটেক সংস্থা আজ সন্ধ্যায় কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধকের দ্বিতীয় দফার প্রয়োগের অন্তর্বর্তী ফলাফলের ভিত্তিতে ডিসিজিআইয়ের কাছে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের আর্জি জানিয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, তিনটি আবেদন বিশেষজ্ঞ কমিটি খতিয়ে দেখবে। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে তারা মতামত জানাবে। ভারত বায়োটেক এ নিয়ে নীরব থাকলেও, সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদার পুনাওয়ালা আজ টুইট করেন, “প্রতিশ্রুতি মতোই, প্রথম মেড-ইন-ইন্ডিয়া প্রতিষেধক কোভিশিন্ড জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহার করার অনুমতি চেয়েছে সিরাম ইনস্টিটিউট। এতে বহু লোকের জীবন বাঁচবে।” অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা সংস্থার কোভিশিল্ড প্রতিষেধকের ভারতে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ও উৎপাদনের দায়িত্বে রয়েছে সিরাম।
আরও পড়ুন: সংস্কার প্রয়োজন, কৃষকদের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর
আরও পড়ুন: জুলাইয়ের মধ্যে ৩০ কোটিকে টিকা, লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্রের
নভেম্বরের শেষে পুণেতে সিরামের গবেষণা কেন্দ্র গিয়ে কাজকর্মের অগ্রগতি দেখে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইজ়ার আবেদন করায় আর দেরি না-করে রবিবারই ছাড়পত্রের জন্য আবেদন জানাল সিরাম। সংস্থার সিইও তাঁদের উদ্যোগকে ‘অমূল্য সমর্থন’ জোগানোর জন্য সরকার ও ‘মোদীজি’-কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন টুইটে। আজ সিরামের দেখানো পথেই হাঁটল ভারত বায়োটেক।
ফাইজ়ার আবেদন করার পরেই বায়োএথিক্স বিষয়ক স্বাস্থ্য গবেষক অনন্ত ভান আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, “এর ফলে অন্য সংস্থাগুলি একই পথে হাঁটতে উৎসাহিত হবে। ফাইজ়ারকে ছাড় দিলে অন্যরাও তখন সেই উদাহরণ দেখিয়ে সরকারের কাছে সব ক’টি পর্বের প্রয়োগের ফলাফল আসার আগেই ছাড়পত্র চাইবে। বাস্তবে সেটাই হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ফলাফল আসার আগেই তা প্রয়োগের ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগজনক।
ব্রিটেনে আগামিকাল থেকে ফাইজ়ারের টিকা দেওয়ার কাজ শুরু হচ্ছে। ভারতেও জরুরি ভিত্তিতে তাদের টিকা ব্যবহার করার অনুমতি চেয়েছে ফাইজ়ার। তবে ভারত মূলত ভরসা রাখছে সিরামের কোভিশিল্ডেই। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুক্তি, ফাইজ়ারের টিকার দাম বেশি। বিদেশে তৈরি হওয়ায় আমদানি খাতে বিস্তর বিদেশি মুদ্রা লাগবে। তা ছাড়া, সিরামের টিকা মাইনাস ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে হয়। সেই পরিকাঠামো দেশে আছে। কিন্তু ফাইজ়ারের টিকা সরংক্ষণ করতে হয় মাইনাস ৭০ ডিগ্রিতে। ভারতে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো দুর্বল। ওই মানের উন্নত কোল্ড চেন পরিকাঠামো নতুন করে গড়ে তোলা কার্যত অসম্ভব। এ বার ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন নিয়েও একই রকম তুলনামূলক বিশ্লেষণে নামতে হবে সরকারকে। প্রতিযোগিতায় দাম কমার আশায় আছে সরকার। তাতে গণ টিকাকরণের খরচ কমবে। কিন্তু পরীক্ষার পুরো ফল জানার আগেই প্রতিষেধক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়াটা কতটা নিরাপদ বা বিপজ্জনক, সেটা ভেবে সিদ্ধান্তের দায়-দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy