গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এখন দেশে সংক্রমণের হার যে রকম, সেই ভাবে চললে সেপ্টেম্বরের ১ তারিখের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতে করোনায় সংক্রমিতের সংখ্যা সর্বাধিক ৩৫ লক্ষে পৌঁছে যেতে পারে। মৃতের সংখ্যা হতে পারে ১ লক্ষ ৪০ হাজার। ওই সময়ে (১-২ সেপ্টেম্বর) রাজ্যে সংক্রমিত হতে পারেন ৫৯ হাজার ৩৪০ জন। রাজ্যে মৃতের সংখ্যা পৌঁছতে পারে ২ হাজার ৩৭০-এ।
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় এই দাবি করল বেঙ্গালুরুর ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স (আইআইএসসি)’। এই মুহূর্তে দেশে সংক্রমণের হার যা, তার ভিত্তিতে আইআইএসসি-র আরও পূর্বাভাস, ওই সময়সীমার মধ্যেই দেশে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে হবে ১০ লক্ষ। তখন পশ্চিমবঙ্গে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা হবে ১৯ হাজার ৯০। আইআইএসসি ভারতীয় বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থাগুলির দ্বিজোত্তম। ফলে সেই সংস্থা এমন একটি পূর্বাভাস দিলে তা আরও বেশি মান্যতা পায়।
তবে সমীক্ষা জানিয়েছে, পরিস্থিতি যদি এখনকার চেয়ে একটু ভাল হয়, তা হলে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভারতে করোনায় সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে হবে ২০ লক্ষ। সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৪ লক্ষ ৭৫ হাজারে। আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে হবে ৮৮ হাজার।
সেপ্টেম্বরে কোন রাজ্যে করোনা সংক্রমণ কোথায় পৌঁছতে পারে তারও একটা ছবি আঁকার চেষ্টা চালানো হয়েছে আইআইএসসি-র সমীক্ষায়।
তাতে বলা হয়েছে, এখন সংক্রমণের হার যা, যদি সেই ধারাই বজায় থাকে তা হলে সেপ্টেম্বরে মহারাষ্ট্রে করোনায় সংক্রমিত হবেন ৬ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষ। তার পরেই থাকবে দিল্লি। সেখানে সংক্রমিতের সংখ্যা পৌঁছবে ২ লক্ষ ৪০ হাজারে। তামিলনাড়ুতে সংখ্যাটা হবে ১ লক্ষ ৬০ হাজার আর গুজরাতে ১ লক্ষ ৮০ হাজার। আর ওই সময় দেশে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা হবে মোট সংক্রমিতের ৩৫ শতাংশ।
করোনা রোগীর পরীক্ষা চলছে দিল্লিতে। ছবি- টুইটারের সৌজন্যে।
পশ্চিমবঙ্গে ওই সময় সংক্রমিত হবেন মোট ৫৯ হাজার ৩৪০ জন। যাঁদের মধ্যে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১৯ হাজার ৯০। সুস্থ হয়ে উঠবেন ৩৭ হাজার ৮ জন। আর মৃত্যু হবে ২ হাজার ৩৭০ জনের।
সমীক্ষা জানাচ্ছে, গোটা দেশের সঙ্গে উত্তরোত্তর খারাপ হবে এই রাজ্যের পরিস্থিতি। ৩১ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বরে রাজ্যে সংক্রমিত হবেন ২ লক্ষ ১ হাজার ৫৩০ জন। সক্রিয় রোগীর সংখ্যা হবে ৫৪ হাজার ৯২০। সুস্থ হয়ে উঠবেন ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ১৩০ জন। মৃত্যু হবে ৮ হাজার ৪৮০ জনের।
জানুয়ারিতে আরও খারাপ হবে রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি। ১-২ জানুয়ারিতে রাজ্যে সংক্রমিত হবেন ৪ লক্ষ ৯৭ হাজার ৭১০ জন। মৃত্যু হবে ২২ হাজার ১০ জনের। সক্রিয় রোগীর সংখ্যা হবে ১ লক্ষ ৪ হাজার ৪৪০ আর সুস্থ হয়ে উঠবেন ৩ লক্ষ ৭১ হাজার ২৬০ জন।
মার্চের ২২-২৩ তারিখে রাজ্যে সংক্রমিত হবেন ১০ লক্ষ ৪ হাজার মানুষ। মৃত্যু হবে ৪৮ হাজার ৩৬০ জনের। সক্রিয় রোগীর সংখ্যা হবে ১ লক্ষ ৩৮ হাজার ৫৬০। আর সুস্থ হয়ে উঠবেন ৮ লক্ষ ৫০ হাজার ২৬০ জন।
আরও পড়ুন: স্যানিটাইজ়ারে চড়া কর, কেন্দ্রের মতে যুক্তি আছে
আরও পড়ুন: হাল বুঝতে লাদাখ যাবেন রাজনাথ
সমীক্ষার আরও দাবি সংক্রমণ যদি এখনকার হারেই হতে থাকে তা হলে নভেম্বরের ১ তারিখে গোটা ভারতে সংক্রমিতের সংখ্যা পৌঁছবে ১ কোটি ২০ লক্ষে। মৃত্যু হবে ৫ লক্ষ মানুষের। জানুয়ারির তারিখে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে হবে ২ কোটি ৯০ লক্ষ। আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে পৌঁছবে ১০ লক্ষে।
তবে সংক্রমণের হার যদি এখনকার চেয়ে একটু কমে, তা হলে আগামী মার্চের শেষাশেষি ভারতে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে হবে সাড়ে ৩৭ লক্ষ। আর মৃত্যি হবে ১ লক্ষ ৯০ হাজার মানুষের।
করোনা পরীক্ষা। কর্নাটকে। -ফাইল ছবি।
এ দিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৯ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে বৃহস্পতিবার লাফ দিয়ে বেড়েছে এক দিনে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও। বিগত কয়েক দিনে ২৮-২৯ হাজারের গণ্ডিতে বাড়ছিল দৈনিক সংক্রমণ। এ দিন তা ৩২ হাজার ছাড়িয়ে গেল।
পশ্চিমবঙ্গেও রোজ কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশি (১,৫৮৯)। এই নিয়ে রাজ্যে করোনায় মোট আক্রান্ত হলেন ৩৪ হাজার ৪২৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। রাজ্যে এ পর্যন্ত রাজ্যে মোট মৃত্যু হল এক হাজার জনের।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩২ হাজার ৬৯৫ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। ২৪ ঘণ্টার নিরিখে যা এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক। এক দিনে এত সংখ্যক মানুষ এর আগে আক্রান্ত হননি। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হলেন নয় লক্ষ ৬৮ হাজার ৮৭৬ জন। আক্রান্তের সঙ্গে সংক্রমণের হারও ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিন যে সংখ্যক মানুষের টেস্ট হচ্ছে, তার মধ্যে যত শতাংশের রিপোর্ট কোভিড পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হচ্ছে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সংক্রমণের হার ৯ শতাংশ।
আক্রান্তের পাশাপাশি ধারাবাহিক ভাবে মৃত্যু বেড়ে ২৫ হাজার ছুঁইছুঁই। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার জেরে মৃত্যু হয়েছে ৬০৬ জনের। এ নিয়ে দেশে মোট ২৪ হাজার ৯১৫ জনের প্রাণ কাড়ল করোনাভাইরাস। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মারা গিয়েছেন ১০ হাজার ৯২৮ জন। মৃত্যুর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা দিল্লিতে প্রাণ গিয়েছে তিন হাজার ৪৮৭ জনের। দু’হাজার ১৬৭ জনের প্রাণহানি নিয়ে মৃত্যু-তালিকার তৃতীয় স্থানে তামিলনাড়ু। গুজরাতে দু’হাজার ৭৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন করোনার কারণে।
আক্রান্ত দ্রুত হারে বাড়লেও, ভারতে করোনা রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার পরিসংখ্যানটাও বেশ স্বস্তিদায়ক। আক্রান্ত হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ছ’লক্ষেরও বেশি মানুষ। অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ৬৩ শতাংশই সুস্থ হয়ে উঠছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২০ হাজার ৭৮৩ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট ছ’লক্ষ ১২ হাজার ৮১৪ জন করোনার কবল থেকে মুক্ত হলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy