প্রতীকী ছবি।
জ্বালানি তেলের দাম ফের সেঞ্চুরির দিকে এগোচ্ছে। তার মধ্যেই হু-হু করে বাড়ছে ভোজ্য তেলের দামও। শুধু সরষের তেলই নয়। কলকাতার খোলা বাজারে সয়াবিন তেল, পাম তেল, সূর্যমুখী তেল, সব কিছুরই দাম কিলো প্রতি এক লাফে ৭০ থেকে ৮০ টাকা বেড়েছে। সরষের তেলের দাম খোলা বাজারে ১২০ থেকে বেড়ে ১৮০-২০০ টাকায় ঘোরাফেরা করছে।
মেদিনীপুর থেকে কোচবিহার, সর্বত্র সর্ষের তেল ১৭০-১৯০ টাকা লিটার। দক্ষিণ দিনাজপুরের মতো উত্তরবঙ্গে যে সব জেলায় সর্ষের ফলন ভাল হয়, তেলকলও প্রচুর, সেখানেও এ বারে দাম বাড়তে দেখা গিয়েছে। এই দামবৃদ্ধির পিছনে কালোবাজারি এবং মজুত করে রাখার প্রবণতাকে দায়ী করছেন মানুষ। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধন হওয়াকেও দায়ী করছেন অনেকে।
খুচরো ব্যবসায়ীদের দাবি, পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় তাঁদেরও বর্ধিত দাম নিতে হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধির পিছনে নানাবিধ যুক্তি খাড়া করছেন। মেদিনীপুরে খোলা বাজারে এখন সর্ষের তেলের দাম প্রতি কেজি ১৭০-১৮০ টাকা। পুরুলিয়ায় গত মাসে যেখানে দাম ছিল ১৫০-১৬০ টাকা, সেটাই এই মাসে কমবেশি ১৮০ টাকা কেজি। বাঁকুড়ায় ব্র্যান্ডেড তেলের দাম ১৭০-১৮০ টাকা, সেখানে স্থানীয় মিলের তেলের দাম লিটার পিছু ১৮৯ টাকা। বীরভূমে তেলের দাম কেজি প্রতি বেড়েছে ৩০-৪০ টাকা। একই রকম ভাবে বেড়েছে পাম তেলেরও দাম। একই ভাবে হুগলি, হাওড়া, দুই বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ— সর্বত্রই সর্ষের তেলের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮০-১৯০ টাকা লিটার বা কেজি।
অথচ স্থানীয় মানুষ থেকে দোকানি, সকলেই বলছেন, গত বছর এই দাম ছিল ১২০-১৪০ টাকা প্রতি লিটার। এক বছরের মধ্যে দাম এতটা বাড়ল কেন?
ব্যবসায়ী মহলের একাংশের দাবি, বাইরে থেকে যে ভোজ্য তেল এসেছে, তার দাম বেশি। ফলে স্থানীয় বাজারেও দাম বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, ডিজেলের দাম আকাশছোঁয়া। ফলে পণ্য পরিবহণে খরচ বেড়েছে। তৃতীয়ত, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন লোপ পাওয়ায় সর্ষে থেকে সর্ষের তেল, সবই মজুত করার সুযোগ বেড়েছে। তাই দামও বেড়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুর ও কোচবিহারে তেলের দাম বাড়ার এটা বড় কারণ, বলছেন স্থানীয় মানুষ।
দক্ষিণ দিনাজপুরে এ বারে সর্ষের ফলন ভাল। কিন্তু ব্যবসায়ীরা প্রথম থেকেই দাবি করছেন, যতটা ভাল হবে ভাবা হয়েছিল, ততটা হয়নি। স্থানীয় মানুষের একাংশের অভিযোগ, সর্ষে মজুত করে দাম বাড়ানো হয়েছে। কোচবিহারেও একই ঘটনা। কোচবিহারের বাসিন্দা অশোক তালুকদার বলেন, ‘‘দ্রুত প্রশাসনকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। অতিমারির সময় তেলের দাম এ ভাবে বাড়লে মানুষ খুবই চাপে পড়বেন।’’ নদিয়ার তেলকলের মালিক মানিক গড়াইয়ের মতে, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনের সংশোধনের ফলে এই মূল্যবৃদ্ধি।
শুধু ভোজ্য তেলই নয়, গত এক-দেড় সপ্তাহে দাম বেড়েছে নিত্য পণ্যেরও। মুদি দোকানিরা জানাচ্ছেন, চাল ৪৫-৫০ টাকা কেজি, আটা ৪০-৪২ টাকা কেজি, মুসুর ডাল ১৩০-১৩৫ টাকা কেজি। চিনি ৪০-৪৫ টাকা।
মুদি দোকানি স্বপন ঘোষ বলেন, ‘‘পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে। আমাদের বেশি দামে জিনিস কিনতে হচ্ছে।’’ মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা অনিন্দিতা জানা বলছিলেন, ‘‘প্রায় সব জিনিসের দাম বেড়েছে। খুবই অসুবিধা হচ্ছে।’’
ফোরাম অব ট্রেডার্স অর্গানাইজ়েশন-এর সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্য টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলের মতে, “সর্ষের তেল মূলত আসে রাজস্থান এবং উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাঞ্চল থেকে। সর্ষে চাষিদের বড় অংশ কৃষি আইনের বিরুদ্ধে দিল্লিতে বসে রয়েছে। ফলে চাষ তেমন হয়নি। তেলকলগুলিতে উৎপাদন কমেছে। বাজারে জোগানও কমেছে।”
গত বছর ছিল এই সময় সরষের তেলের দাম ছিল ১২০ থেকে ১২৫। সেটা এখন ১৮০ টাকা।
কলকাতার দ্য পোস্তা বাজার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ আগরওয়াল বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেল, পাম তেলের দাম খুব বেড়েছে। তা ছাড়া আমাদের রাজ্যে সরষের তেলের উৎপাদন প্রায় নেই বললেই চলে। নইলে হয়তো দাম নিয়ন্ত্রণ করা যেত।”
ব্যবসায়ীদের দাবি, এ রাজ্যে সয়াবিন তেল ব্রাজিল, মেক্সিকো থেকে আসে। কোভিডে তাতে প্রভাব পড়েছে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া থেকে পাম তেলের জোগান কম। তাই দাম বাড়ছে।
আমজনতার বক্তব্য, কারণ যাই হোক, বাজার করতে গিয়ে নাকের জলে-চোখের জলে হতে হচ্ছে গৃহস্থকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy