জি২০-র নৈশভোজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমন্ত সরেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী (বাঁ দিকে) ও অন্যরা। ছবি: হেমন্তের এক্স হ্যান্ডল থেকে।
ভাটিয়ালি গান শোনানো হয়েছিল নৈশভোজের অনুষ্ঠানে। অতিথিদের বসার একেকটি গোলটেবিলের নাম রাখা হয়েছিল দেশের এক একটি নদীর নামে। শনিবার রাতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর জি২০ সম্মেলন উপলক্ষে নৈশভোজে কে কোথায় বসবেন, তা আগে থেকেই নির্দিষ্ট করা ছিল। মেনুতে কোনও আমিষ পদ ছিল না। সেই নিরামিষ নৈশভোজই রাজনীতির জল্পনা, তর্কবিতর্কে মশলা জুগিয়ে দিল। এক হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া আর কোনও কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নৈশভোজে যোগ দেননি। দিল্লিতে অনুষ্ঠান হলেও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালই আসেননি। বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিহারের নীতীশ কুমার, ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সোরেন, তামিলনাড়ুর এম কে স্ট্যালিন নৈশভোজে যোগ গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে মমতা ও নীতীশকে নিয়ে রাজনৈতিক চর্চা হয়েছে সব থেকে বেশি।
রাজ্য রাজনীতিতে কংগ্রেস থেকে সিপিএম প্রশ্ন তুলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন নৈশভোজে অমিত শাহ, যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে এক টেবিলে বসলেন? সরকারি ভাবে বলা হচ্ছে, কে কোথায় বসবেন, তা আগে থেকেই ঠিক ছিল। মমতার সঙ্গে এক টেবিলে অমিত শাহ, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাও ছিলেন। তবে তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে কংগ্রেস-সিপিএম নেতারা প্রশ্ন তোলার সুযোগ হাতছাড়া করেননি।
লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘কয়েক বছর আগে যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। সেখানে বাঙালিদের হেনস্থা করা হচ্ছিল বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী তকমা দিয়ে, সেই বিষয়ে কথা বলেছিলাম। তখন বাংলায় আমাকে ‘বিজেপির এজেন্ট’ বলে দাগিয়ে দিয়েছিল তৃণমূল। এখন জি২০ নৈশভোজে বিরোধীদের বেশির ভাগ মুখ্যমন্ত্রী যখন যাননি, সেই সময়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী গিয়েছেন। যোগীজির পাশেই বসেছেন। কী কথা হয়েছে, তা নিয়ে কিছু বলবেন কি না, জানি না। তবে পুরনো কথা একটু মনে করিয়ে দিলাম!’’ নীতীশ, হেমন্তদের সঙ্গে কথাবার্তার পাশাপাশি মমতার সঙ্গে প্রহ্লাদ জোশী-র মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদেরও সৌজন্য বিনিময় হয়। সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, “পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির যোগী-শাহ-ওম বিড়লা-সহ এক টেবিলে মহানন্দে! ডাল মে কুছ কালা তো হ্যায়ই!”
বিহারের নীতীশ কুমার বিজেপির সঙ্গে জোট ভেঙে কংগ্রেস-আরজেডির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। নৈশভোজে নরেন্দ্র মোদী তাঁর সঙ্গে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের আলাপ করিয়ে দিয়েছেন। মোদী আবার নিজেই সেই ছবি সমাজমাধ্যমে তুলে দিয়েছেন। বিরোধী ইন্ডিয়া জোটে তেমন গুরুত্ব না পেয়ে নীতীশ আবার বিজেপির হাত ধরবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা উস্কে দিয়েছে এই ছবি। বিহারে বিজেপির শরিক, হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চার নেতা জিতন রাম মাঝি বলেছেন, “যে ভাবে নীতীশ জি২০ নৈশভোজে গিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে বাইডেনের আলাপ করিয়েছেন, নীতীশ মোদীর মুখ দেখতে চাইতেন না, কিন্তু গত কাল ওঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন, এ সব ভবিষ্যতের রাজনীতির ইঙ্গিত করে।”
নৈশভোজের সময় ভারতীয় সঙ্গীতের বৈচিত্র তুলে ধরতে ‘গন্ধর্ব অতোদ্যম’ নামের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল. তাতে হিন্দুস্তানি, কর্নাটকী রাগসঙ্গীতের সঙ্গে ছিল লোকগান ও আধুনিক গানও। পশ্চিমবঙ্গের ভাটিয়ালি ছিল সেই তালিকায়। কর্নাটক, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীরা নৈশভোজে ছিলেন না। তেলঙ্গানার কে চন্দ্রশেখর রাও, কেরলের বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও গরহাজির ছিলেন। সনাতন ধর্ম নিয়ে ডিএমকে বনাম বিজেপির বাকযুদ্ধ চললেও দক্ষিণ ভারত থেকে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন হাজির ছিলেন। মোদী তাঁর সঙ্গেও বাইডেনের আলাপ করিয়ে দেন। মোদী হিমাচলের কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী সুখুকে জড়িয়ে ধরে ছবি তোলেন। সুখু জানিয়েছেন, তিনি এই ফাঁকে হিমাচলের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও কেন্দ্রীয়
অর্থ সাহায্যের প্রয়োজনের কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
কংগ্রেস নেতারা এ দিনও কংগ্রেস সভাপতি ও রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিজেপি মনে করিয়েছে, বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডাও জি২০-র নৈশভোজে আমন্ত্রণ পাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy