Advertisement
২৪ অক্টোবর ২০২৪
Parliament Building

গান্ধী, অম্বেডকরের মূর্তি সরল এককোণে

নতুন সংসদ ভবন তৈরির পরে গান্ধীমূর্তি সামান্য সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যদিও নতুন ও পুরনো সংসদ ভবনের ঠিক মাঝখানেই তা রাখা হয়েছিল। এ বার একেবারে পুরনো সংসদ ভবনের পিছনে, সংসদ চত্বরের এক কোণে গান্ধীর মূর্তি সরিয়ে দেওয়া হল।

পুরনো সংসদ ভবনের পিছনে, এককোণে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধী-সহ দেশনায়কদের মূর্তি। শুরু হয়েছে বিতর্ক। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে।

পুরনো সংসদ ভবনের পিছনে, এককোণে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধী-সহ দেশনায়কদের মূর্তি। শুরু হয়েছে বিতর্ক। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২৪ ০৮:৩৯
Share: Save:

তিন দশক আগে সংসদ ভবনের প্রধান দরজার ঠিক সামনে মহাত্মা গান্ধীর ধ্যানমগ্ন মূর্তি বসানো হয়েছিল। ভাস্কর রাম ভি সুতারের তৈরি ১৬ ফুট উঁচু ব্রোঞ্জের তৈরি এই মূর্তি সংসদের গতিপ্রবাহের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গিয়েছিল। কারণ, সাংসদদের প্রতিবাদ, বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভের স্থায়ী ঠিকানা ছিল গান্ধীমূর্তির সামনের জায়গা।

নতুন সংসদ ভবন তৈরির পরে গান্ধীমূর্তি সামান্য সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যদিও নতুন ও পুরনো সংসদ ভবনের ঠিক মাঝখানেই তা রাখা হয়েছিল। এ বার একেবারে পুরনো সংসদ ভবনের পিছনে, সংসদ চত্বরের এক কোণে গান্ধীর মূর্তি সরিয়ে দেওয়া হল। সংবিধানের প্রণেতা বি আর অম্বেডকর থেকে শুরু করে ছত্রপতি শিবাজি, মহারাণা প্রতাপ, বীরসা মুন্ডা থেকে জ্যোতিরাও ফুলের মূর্তিও পুরনো সংসদ ভবনের পিছন দিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এমন এক কোণে এই সব মূর্তি জড়ো করে রাখা হয়েছে, যেখানে সাধারণত সাংসদদের যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

গান্ধীর মূর্তি আগে আলাদা ভাবে ফাঁকা জায়গায় বসানো ছিল। এখন সেটির স্থান হয়েছে অন্যান্য মূর্তির ভিড়ে। অম্বেডকরের মূর্তি সংসদ ভবনের দিকে মুখ করে বসানো ছিল। সেই মূর্তির সামনে প্রতি বছর অম্বেডকরের জন্মবার্ষিকীতে অনুষ্ঠান হত। সেই মূর্তিও সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ এই ভাবে গান্ধীমূর্তিকে পুরনো সংসদ ভবনের পিছনে নিয়ে যাওয়াকে ‘ভয়াবহ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। বিরোধীদের প্রশ্ন, বিরোধীদের জমায়েত, প্রতিবাদে ইতি টানতেই কি গান্ধীজির মূর্তির স্থান বদল? কংগ্রেস নেতা পবন খেরা অভিযোগ তুলেছেন, গুজরাতে বিজেপি সমস্ত আসন পায়নি বলে গান্ধীজির মূর্তি সরানো হয়েছে। মহারাষ্ট্রে বিজেপি ভাল ফল করেনি বলে শিবাজির মূর্তি সরানো হয়েছে। খেরার বক্তব্য, “বিজেপি অম্বেডকরের মূর্তিকেই ছাড় দিচ্ছে না। বিজেপি ৪০০ আসনে জিতে এলে কি সংবিধানকে ছাড় দিত?”

তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘সংসদ চত্বরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে, চিরাচরিত প্রতিবাদের জায়গা থেকে গান্ধীজি, অম্বেডকরের মূর্তি সরানোর সাহস দেখাল কে? তাঁদের জায়গায় কি নাথুরাম গডসে ও নরেন্দ্র মোদীর মূর্তি বসানো হবে? সরকারকে এর উত্তর দিতে হবে।’’ সিপিআই সাংসদ বিনয় বিশ্বম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। চিঠিতে তিনি বলেছেন, বিজেপি এবং আরএসএস চিরকালই গান্ধী ও অম্বেডকরকে অশ্রদ্ধা করেছে। তার ফলেই মানুষ এই ভোটে বিজেপিকে খারিজ করেছে। দক্ষিণপন্থীরা বরাবরই ইতিহাস নতুন করে লিখে, জাতীয় আদর্শদের পিছনে ঠেলে দিতে চেয়েছে। এ বার সংসদ চত্বরে সেই চেষ্টা হচ্ছে।

সংসদের সচিবালয়ের এক বিবৃতিতে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, পরিকল্পিত ভাবে এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে মূর্তিগুলি সংসদ ভবন চত্বরে, ‘প্রেরণাস্থলে’ সাজিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে দর্শকেরা সেগুলি একসঙ্গে, ভাল ভাবে দেখতে পান। বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, এর আগে মূর্তিগুলি ছড়িয়েছিটিয়ে বসানো হয়েছিল। ফলে যাঁরা সংসদ ভবন দেখতে আসতেন, তাঁরা সব মূর্তি দেখতে পেতেন না। এখন মূর্তিগুলি সংসদ ভবন চত্বরের ‘প্রেরণাস্থলে’ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে সেখানে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে দর্শকেরা মূর্তিগুলি দেখার পাশপাশি এই দেশনায়ক এবং স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জীবন সম্পর্কেও সবিস্তার জানতে পারেন। তাঁদের জীবন থেকে অনুপ্রেরণা পান এবং তাঁদের শ্রদ্ধা জানাতে পারেন। এ-ও জানানো হয়েছে, সংসদ ভবন চত্বর লোকসভার স্পিকারের আওতায় পড়ে এবং তাঁর অনুমতি নিয়েই মূর্তিগুলি আগের জায়গা থেকে সরিয়ে নতুন জায়গায় রাখা হয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE