Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

কাজের ‘অভাব নেই’ বলে মন্ত্রী বিরোধী নিশানায়

অনেকে বলছেন, এই মন্তব্য করার জন্য এর থেকে খারাপ সময় সম্ভবত আর হয় না।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৫৮
Share: Save:

চাকরির কমতি নেই। বরং উত্তর ভারতে ঘাটতি নাকি দক্ষ কর্মীরই! রবিবার এই মন্তব্য করে ফের বিতর্ক বাধিয়ে বসলেন কেন্দ্রীয় শ্রম এবং কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত) সন্তোষ গঙ্গোয়ার। ভিন্ন প্রেক্ষিাপটে তিনি এ কথা বলেছেন দাবি করে পরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও, এ নিয়ে কেন্দ্রকে নিশানা করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা যেমন উত্তর ভারতীয়দের অসম্মান করার অভিযোগ তুলেছেন, তেমনই দেশের কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেছেন বিএসপি নেত্রী মায়াবতী।

অনেকে বলছেন, এই মন্তব্য করার জন্য এর থেকে খারাপ সময় সম্ভবত আর হয় না। কারণ, একে অর্থনীতির বেহাল দশার কথা সরকার স্বীকার করতেই চাইছে না বলে অভিযোগ উঠছে। গাড়ি বিক্রিতে ধসের জন্য নতুন প্রজন্মের অ্যাপ-ক্যাব প্রীতির কথা বলে বিস্তর বিতর্কে জড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। আর তার রেশ কাটতে-না-কাটতেই এখন গঙ্গোয়ারের এই মন্তব্য। একে তো সমস্যার কথা অস্বীকার করায় ক্ষোভ বাড়তে পারে সাধারণ মানুষের। তার উপরে সম্মানে আঘাত লাগতে পারে উত্তর ভারতীয়দের, যাঁদের একটা বড় অংশ বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক। ফলে ঠিক ওই দুই জায়গাতেই আক্রমণ শানিয়েছেন বিরোধীরা।

এ দিন গাঙ্গোয়ার বলেন, ‘‘বেকারত্বের খবরে কাগজ ছয়লাপ। কিন্তু দেশে আসলে চাকরির কোনও কমতি নেই।... বরং উত্তর ভারতে যাঁরা বিভিন্ন কাজে শূন্য পদ পূরণের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী খুঁজতে আসেন, তাঁরা অনেকেই বলেন যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না।’’ অর্থাৎ মন্ত্রীর দাবি, কাজ নয়, ঘাটতি দক্ষতারই। পরে অবশ্য এ নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধায় তাঁর দাবি— তিনি এ কথা বলতে চেয়েছিলেন সম্পূর্ণ আলাদা প্রেক্ষাপটে। বোঝাতে চেয়েছিলেন, দক্ষতার ঘাটতি পূরণে কোমর বেঁধেছে কেন্দ্র।

মন্ত্রী বিতর্কে জল ঢালতে চাইলেও তত ক্ষণে বিষয়টি নিয়ে সুর চড়িয়েছেন বিরোধীরা। প্রিয়ঙ্কার টুইট, ‘‘মন্ত্রীজি গত পাঁচ বছর সরকার আপনাদের। নতুন চাকরি নেই। পুরনো যা রয়েছে, কেন্দ্রের ডেকে আনা মন্দার জেরে তা-ও যাওয়ার পথে। কাজ পেতে নতুন প্রজন্ম সরকারের দিকে তাকিয়ে। কিন্তু আপনি ভাবছেন উত্তর ভারতীয়দের অপমান করে গা বাঁচাবেন। তা চলবে না।’’ মায়াবতীর বক্তব্য, ‘‘অর্থনীতির বেহাল দশা ঢাকা দিতে হাস্যকর মন্তব্য করছেন মোদী সরকারের একের পর এক মন্ত্রী।... উত্তর ভারতীয়দের সম্পর্কে এই মন্তব্য লজ্জাজনক। এ জন্য উচিত দেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া।’’

অর্থনীতির বেহাল দশা বিশেষত চাকরির আকালের সমস্যা ধামাচাপা দিতে গিয়ে একের পর এক বিতর্ক তাড়া করেছে মোদী সরকারকে। এনএসএসও-র যে ফাঁস হওয়া রিপোর্ট কেন্দ্র প্রথমে প্রকাশ করতেই চায়নি, সাড়ে চার দশকে সব থেকে বেশি (৬.১%) বেকারত্বের কথা বলা হয়েছিল তাতে। কখনও কাজের কথা বলতে গিয়ে পকোড়া ভাজার কথা টেনে আনায় কটাক্ষে বিঁধেছেন বিরোধীরা। হালেও গাড়ি শিল্পের দুর্দশা এবং সেখানে কাজ যাওয়ার কারণ হিসেবে নতুন প্রজন্মের অ্যাপ-ক্যাব এবং মেট্রোয় চড়তে পছন্দকে কারণ হিসেবে তুলে ধরে বিতর্ক বাধিয়েছেন নির্মলা। এ বার ফের তাতে নতুন করে ঘি ঢালল গঙ্গোয়ারের মন্তব্য।

অনেকে বলছেন, কাজের বাজারে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীদের এক বড় অংশের যোগ্যতা কিংবা দক্ষতার ঘাটতি যে রয়েছে, তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। কিন্তু দেশে চাকরির কোনও অভাব নেই বলে শুরু করে তার পরে এই কথা টেনে আনলে তার অর্থ হয় অন্য। বিতর্কের আঁচ আরও বেড়েছে তিনি আলাদা ভাবে উত্তর ভারতের কথা উল্লেখ করার কারণেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Santosh Gangwar BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE