বাড়ির পরিচারিকা আচমকা গরহাজির। এ দিকে গোটা সংসারের কাজ পড়ে। ঘরবাড়ি অপরিচ্ছন্ন। এই সমস্যার সমাধানে ১৫ মিনিটের মধ্যে বাড়িতে পরিচারিকা ডেকে নেওয়ার পরিষেবা চালুর ঘোষণা করেছে একটি অ্যাপ নির্ভর পরিষেবা সংস্থা। তা নিয়েই উত্তাল নেট-দুনিয়া। অভিযোগ উঠেছে, সাধারণ মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যের নামে কর্মীদের শোষণ করা হচ্ছে। গিগ কর্মী বা অ্যাপ নির্ভর পরিষেবা সংস্থার কর্মীদের সংগঠনের প্রশ্ন, মানুষ কি যন্ত্র? চাইলেই কি তাঁকে ছেঁটে ফেলা যায়?
অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ি ডেকে নেওয়া বা রেস্তরাঁর খাবার বা মুদিখানার জিনিসপত্র, আনাজ, মাছ মাংস বাড়িতে আনিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা বহু দিন ধরেই চলছে। বহু সংস্থা ওষুধ পৌঁছে দেওয়া বা বাড়ির কলের মিস্ত্রি পৌঁছে দেওয়ার পরিষেবা চালু করেছে। সেই পথে হেঁটে আরবান কোম্পানি সংস্থা সম্প্রতি ‘ইনস্টা মেড’ পরিষেবা চালুর কথা ঘোষণা করেছে। আরবান কোম্পানির দাবি, মোবাইলের অ্যাপে বুকিংয়ের ১৫ মিনিটের মধ্যে পরিচারিকা পৌঁছে যাবেন বাড়িতে। বাসন মাজা থেকে ঘর মোছা, রান্নার কাজে হাত লাগানো থেকে ঘরগৃহস্থালির বাকি কাজ করে দেবেন। খরচ লাগবে ঘণ্টায় মাত্র ৪৯ টাকা। তবে সেটা ন্যূনতম মজুরি। কাজ অনুযায়ী মজুরি বাড়বে।
উবার, ওলা-য় যাঁরা ট্যাক্সি চালান বা সুইগি-জ্যোমাটোর মতো সংস্থায় যাঁরা খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন, তাঁদের ন্যূনতম বেতন, রোজগারের নিশ্চয়তা ও সামাজিক সুরক্ষা নিয়ে বহু দিন ধরেই বিতর্ক রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের অন্দরমহলেও এই বিষয়ে আইন তৈরি নিয়ে চর্চা চলছে। এর মধ্যে ১৫ মিনিটের মধ্যে পরিচারিকার পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হওয়ায় গিগ কর্মীদের সংগঠন প্রতিবাদের রাস্তা নিয়েছে।
অ্যাপ নির্ভর কর্মীদের সর্বভারতীয় সংগঠন আইএফএটি-র সাধারণ সম্পাদক শেখ সালাউদ্দিনের যুক্তি, এই ১৫ মিনিটের পরিচারিকা বুকিংয়ের পরিষেবা গিগ কর্মী ও পরিচারিকাদের শোষণ ছাড়া আর কিছু নয়। এখানে কর্মীদের অধিকার ও সম্মানের থেকে দ্রুত গতিতে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সালাউদ্দিনের বক্তব্য, “গিগ কর্মীরা যন্ত্র নন। আরবান কোম্পানি কর্মীদের যে কোনও সময়ে ছেঁটে ফেলার মতো করে ব্যবহার করছে। তাঁদের উপরে প্রবল চাপ তৈরি করে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের পরিবেশের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। এখানে অবাস্তব রকম ভাল কাজের প্রত্যাশা তৈরি করা হচ্ছে। অথছ কাজের নিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষা, কর্মীদের সুবিধা বলে কিছু নেই। বাড়ির পরিচারিকাদের অবস্থা এমনিতেই করুণ। তাঁদের ই-কমার্স সংস্থাগুলি এখন পণ্যে পরিণত করছে।” সালাউদ্দিনের দাবি, এই ধরনের পরিষেবা চালুর আগে গিগ ও অ্যাপ নির্ভর প্ল্যাটফর্মকে কর্মী সংগঠনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। তার আগে এই পরিষেবা বন্ধ রাখতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হবে। সরকারি নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
এই প্রশ্নের মুখে আরবান কোম্পানি জানিয়েছে, ১৫ মিনিটের মধ্যে পরিচারিকা পরিষেবা আপাতত চালু হচ্ছে শুধুই মুম্বইয়ে। পরীক্ষামূলক ভাবে। তবে কর্মীদের জন্য আরবান কোম্পানি সংস্থা দায়বদ্ধ। এই নতুন পরিষেবায় পরিচারিকারা ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা আয় করতে পারবেন। তার সঙ্গে সংস্থার পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্য বিমার বন্দোবস্ত থাকবে। কাজের সময়ে দুর্ঘটনা বা মৃত্যু হলে দুর্ঘটনা ও জীবন বিমার বন্দোবস্তও থাকবে। সংস্থার দাবি, যাঁরা মাসে ১৩২ ঘণ্টা কাজ করবেন, অর্থাৎ মাসের মধ্যে ২২ দিন অন্তত ৬ ঘণ্টা করে কাজ করবেন, তাঁদের মাসে অন্তত ২০ হাজার টাকা আয় নিশ্চিত।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)