পহেলগাম নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হলেও সেখানে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন গরহাজির রইলেন, তা নিয়ে আজ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে মোদীকে নিশানা করলেন। তাঁর অভিযোগ, দেশের দুর্ভাগ্য যে, প্রধানমন্ত্রী পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলা নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে যাননি। অথচ তিনি বিহারে নির্বাচনী জনসভা করেছেন। একে লজ্জাজনক বলেও আখ্যা দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি।
পহেলগামের হামলার পরেই সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলার প্রশ্নে কংগ্রেস মোদী সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিল। সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলতে মোদী সরকারকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকারও অনুরোধ করেছিল। কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকে সন্ত্রাসের মোকাবিলার প্রশ্নে সরকারের পাশে থাকার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তার পরেও কংগ্রেসের বিভিন্ন নেতা পহেলগাম নিয়ে বিভিন্ন রকমের মন্তব্য করছেন। তা নিয়ে বিরক্ত কংগ্রেস সভাপতি খড়্গে ও রাহুল গান্ধী আজ কংগ্রেস নেতাদের মুখ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কংগ্রেসের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দলীয় মুখপাত্রদের বাইরে যে যা বলছেন, তার কোনওটাই দলের অবস্থান নয়।
কংগ্রেসের কর্নাটক সরকারের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া সম্প্রতি পহেলগামের প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছিলেন। বিজেপি অভিযোগ তুলেছে, সিদ্দারামাইয়া পাকিস্তানের সুরে কথা বলছেন। আজ সিদ্দারামাইয়ার সভায় বিজেপি প্রতিবাদ দেখালে তিনি পুলিশ অফিসারকে হাত তুলে চড় দেখিয়ে নতুন বিতর্ক বাধান। জম্মু-কাশ্মীরের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তারিক হামিদ কাররা আবার পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার পক্ষে সওয়াল করেছেন। প্রবীণ নেতা মণিশঙ্কর আইয়ার প্রশ্ন তুলেছেন, পহেলগামের হামলা দেশভাগের অমীমাংসিত সমস্যার ফল কি না! মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস বিধায়ক বিজয় ওয়াডেট্টিওয়ার আবার প্রশ্ন তুলেছেন, সন্ত্রাসবাদীদের হাতে কি পর্যটকদের খুন করার আগে তাদের ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করার সময় থাকে? কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর আবার কার্যত সরকারের পক্ষে দাঁড়িয়ে বলেছেন, নিশ্ছিদ্র গোয়েন্দা ব্যর্থতা বলে কিছু হয় না। ইজরায়েলের গোয়েন্দা ব্যবস্থাতেও ফাঁকফোকর থাকে। কংগ্রেসের নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, তারুর কি বিজেপির হয়ে সওয়াল করছেন? এই বিতর্ক ধামাচাপা দিতেই আজ কংগ্রেস জানিয়ে দিয়েছে, এর কোনওটাই কংগ্রেসের অবস্থান নয়।
দলের অবস্থান স্পষ্ট করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে আজ জয়পুরে ‘সংবিধান বাঁচাও’ জনসভা থেকে কংগ্রেস সভাপতি বলেন, ভারতের দিকে যে চোখ তুলে তাকাবে, তাকে যথাযথ শাস্তি দিতে কংগ্রেস সকলের আগে দাঁড়িয়ে থাকবে। কিন্তু একই সঙ্গে মোদীকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশের দুর্ভাগ্য যে পহেলগামে হামলার পরে সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যোগ দেননি। এটা লজ্জার। মোদী বিহারে নির্বাচনী সভায় বক্তৃতা করেন। কিন্তু দিল্লিতে সর্বদলীয় বৈঠকে আসতে পারেন না। আমি সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছিলাম, প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা উচিত। কারণ দেশের স্বাভিমানে আঘাত লাগলে সবাইকে একজোট হতে হয়। আমরা চেয়েছিলাম, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজের পরিকল্পনার কথা জানান। সকলের থেকে উপদেশ নিন। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকেও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমরা সরকারের সঙ্গে থাকব। সর্বদলীয় বৈঠকে বলেছিলাম, এই কঠিন সময়ে সরকারের যে কোনও পদক্ষেপে আমরা তাদের সঙ্গে থাকব।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)