Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Panchayat Election 2023

তৃণমূলের হিংসার মুখে কংগ্রেসের নিশানায় কেন্দ্রও, ফের ‘সেটিংয়ের’ তত্ত্ব অধীরের

শনিবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১৮ জনের মৃত্যুর পরেই বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক বি এল সন্তোষ গোটা বিরোধী শিবিরের দিকে আঙুল তুলেছিলেন।

Adhir Ranjan Chowdhury

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৩ ০৭:৪২
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটে হিংসাকে হাতিয়ার করে এ বার বিরোধী জোটে ফাটল ধরানোর কৌশল নিতে চাইছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আগামী সপ্তাহের গোড়ায় বেঙ্গালুরুতে বিরোধী শিবিরের বৈঠকের আগে বিজেপি প্রশ্ন তুলছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের হিংসায় কংগ্রেসের কর্মীদের মৃত্যুর পরেও কেন রাহুল গান্ধী মুখ বুজে রয়েছেন? কেন তিনি তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলছেন না?

এই প্রশ্নের মুখে প্যাঁচে পড়ে গিয়েছে কংগ্রেস। কারণ শনিবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসায় তিন জন কংগ্রেস কর্মীও নিহত হয়েছিলেন। রবিবার আরও এক জন মারা গিয়েছেন। কংগ্রেস আজ জাতীয় স্তর থেকে পশ্চিমবঙ্গের হিংসার জন্য রাজ্য প্রশাসনকে দায়ী করেছে ঠিকই। একই সঙ্গে সুকৌশলে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্যপালকেও দায়ী করেছে। সরাসরি তৃণমূল বা রাজ্য সরকারকে নিশানা না করে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেছেন, ‘‘আমি হিংসার নিন্দা করছি। নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়া উচিত। না হলে গণতন্ত্র থাকবে না।’’ কংগ্রেসের যুক্তি, কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যে ছিল। তারা কী করছিল? রাজ্যপাল নিজের দায় এড়াতে পারেন না বলেও কংগ্রেসের দাবি। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব আবার এর মধ্যে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের যোগের অভিযোগ তুলেছেন।

শনিবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১৮ জনের মৃত্যুর পরেই বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক বি এল সন্তোষ গোটা বিরোধী শিবিরের দিকে আঙুল তুলেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা দেশে বিরোধী ঐক্যের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গে মানবতার বিরুদ্ধে এই অপরাধের দায় প্রতিটি বিরোধী দলের নেতানেত্রীকে নিতে হবে।’’ অন্যান্য বিরোধী দলের পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলে। কিন্তু কংগ্রেসের সে উপায় নেই। কারণ কংগ্রেসের কর্মীরাও প্রাণ হারিয়েছেন। তা বুঝে কংগ্রেসকে আরও অস্বস্তিতে ফেললে বিজেপি নেতারা সরাসরি রাহুলকে নিশানা করেছেন।

বিজেপির আইটি সেলের প্রধান, পশ্চিমবঙ্গের সহ-পর্যবেক্ষক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অমিত মালব্য প্রশ্ন তুলেছেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেস কর্মীদের মৃত্যুর পরে রাহুল গান্ধী কি এই রক্তপাতের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করার সাহস সঞ্চয় করতে পেরেছেন? না কি কাপুরুষতা ও রাজনৈতিক কায়েমি স্বার্থই বড় হয়ে উঠেছে? না কি লালু প্রসাদের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁকে বিপদে ফেলবেন ভেবে ভয় পাচ্ছেন?” বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের বক্তব্য, “রাহুল গান্ধী নীরব কারণ তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জোট করতে চাইছেন। কিন্তু মমতা বলে দিয়েছেন কংগ্রেসকে বাংলায় ঢুকতে দেবেন না। রাহুল কি বাংলায় গণতন্ত্রের হত্যা নিয়ে মুখ খুলবেন? মল্লিকার্জুন খড়্গে বা অন্যান্য বিরোধী নেতারা কি পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রের হত্যা দেখতে পান না?”

বিজেপির এই প্রশ্নের মুখে আজ কংগ্রেস নেতা প্রমোদ তিওয়ারি বলেছেন, রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারও দায়ী। রাজ্যসভায় কংগ্রেসের উপ-দলনেতা তিওয়ারির বক্তব্য, “কলকাতা হাই কোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে বলেছিল। সুপ্রিম কোর্টও তাতে সম্মতি দিয়েছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে কংগ্রেসের তিন জন কর্মীও রয়েছেন, তার জন্য নিঃসন্দেহে রাজ্যের প্রশাসন দায়ী। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারও দায়ী। কারণ ওখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন ছিল।”

চোখের সামনে হিংসা হলেও কেন্দ্রীয় বাহিনী নিষ্ক্রিয় ছিল বলে অভিযোগের মধ্যে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী আজ নতুন করে ‘দিদি-মোদী সেটিং’ তত্ত্ব উস্কে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সমঝোতা করে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়। বাংলায় যাতে কিছু না করে কেন্দ্রীয় বাহিনী, যাতে দিদির ক্ষতি না করে, সেই নির্দেশ অবশ্যই দেওয়া হয়েছিল। দিল্লির সঙ্গে সমঝোতা করেছে তৃণমূল। তৃণমূলকে সুযোগ পাইয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ভোটের দিন ১২টার সময়ে বাহিনী আসছে! বাঙালকে হাই কোর্ট দেখাচ্ছেন?” তাঁর মতে, বাংলার বিজেপি নেতাদের এ নিয়ে প্রতিবাদ করা উচিত।

দিল্লিতে কংগ্রেসের প্রমোদ তিওয়ারি রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এর আগে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশও রাজ্যপালের অতিসক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। রবিবার তিওয়ারি বলেছেন, “আমি রাজ্যপালের আচরণকে সবচেয়ে বেশি দোষ দেব। কোনও দিনও দেখিনি, রাজ্যপাল নির্বাচনের দিন রাস্তায় নেমেছেন। যদি বেরিয়ে পড়ে থাকেন, তা হলে রাজ্যপালকেও দায়িত্ব নিতে হবে। কেন তিনি বার হলেন? কেন তিনি নিজের দিকে নজর টেনে পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যস্ত করে তুললেন?”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy