E-Paper

ক্যাপ্টেনই খেলুন, সচিন বিশেষ গা লাগাচ্ছেন না

বক্তৃতার শেষে দিল্লি থেকে আসা সাংবাদিকের সঙ্গে প্রচারসভার মঞ্চে বসেই ইংরেজিতে আলাপচারিতা শুরু করেন সচিন। সামনে হাঁটু মুড়ে বসে থাকা গ্রামের মানুষ হাঁ করে কাণ্ডকারখানা দেখে।

sachin pilot

ভোটের প্রচারে সচিন পাইলট। —নিজস্ব চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:২২
Share
Save

‘আয়ো রে আয়ো...’

দু’দিকে সর্ষের খেত। তার মাঝে সরু রাস্তা ধরে গাড়ির কনভয় এসে থামে। এত ক্ষণ লাল, কমলা, সবুজ, হলুদ শাড়ির ঘোমটা প্রায় নাক অবধি টানা ছিল। এ বার ঘোমটা সরিয়ে হাসি মুখ দেখা যায়।

‘আয়ো রে আয়ো, সচিন পাইলট আয়ো!’

দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ, পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির হোয়ার্টন স্কুলের প্রাক্তনী গাড়ি থেকে নামেন। জয়পুর থেকে টঙ্ক হয়ে জাতীয় সড়ক গিয়েছে সওয়াই মাধোপুর। সেই সড়ক থেকে আরও পাঁচ কিলোমিটার ভিতরে ছোট্ট লবাদর গ্রাম। গাঁয়ের সরপঞ্চ টঙ্কের বিধায়কের মাথায় পাগড়ি পরিয়ে দেন। গলায় গাঁদা ফুলের মালা জমে ওঠে।

“অন্য দলের প্রার্থী এসে ঘুরে গিয়েছেন?’’ ঘুরে গিয়েছেন শুনে সচিন পাইলট বলেন, “সকলের কথা শুনবেন। তার পরে ভোটটা হাত চিহ্নে, কংগ্রেসকেই দেবেন। ফুলের মালা, পাগড়ি দিলে হবে না। ২৫ নভেম্বর ভোটটা দিতে যেতে হবে। কেউ রুটি বানাতে চলে গিয়েছে, কেউ ক্ষেতে জল দিতে গিয়েছে, এ সব বললে হবে না। সব কাজ ফেলে আগে ভোট দিতে হবে।” সুদর্শন, হাসি মুখের বিধায়কের কথা শুনে গাঁয়ের নতুন বউটি সাহস করে জবাব দেয়, “ওই দিন আগে আপনাকে ভোট দিতে যাব। তার পরে রুটি বানাব। মরদ আমার তত ক্ষণ না খেয়ে থাকবে।” সচিনও হেসে ফেলেন কথা শুনে।

বক্তৃতার শেষে দিল্লি থেকে আসা সাংবাদিকের সঙ্গে প্রচারসভার মঞ্চে বসেই ইংরেজিতে আলাপচারিতা শুরু করেন সচিন। সামনে হাঁটু মুড়ে বসে থাকা গ্রামের মানুষ হাঁ করে কাণ্ডকারখানা দেখে। রাজস্থান বিধানসভায় ২০১৩ সালে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ছিল ২১। সচিন তখন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। ২০১৮ সালে বেড়ে হল দু’শোর মধ্যে একশো। “দেখুন, ওই পাঁচ বছর অনেক রক্ত-ঘাম ঝরিয়েছি। ধর্না, বিক্ষোভ, পুলিশের লাঠিচার্জ, অনেক লড়াই। তার ফলেই কংগ্রেসের আসন ২১ থেকে বেড়ে ১০০ হয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় এসেছিলাম”, সচিন মনে করিয়ে দেন।

কংগ্রেস সরকার গড়লেও সচিনের উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ জুটেছিল। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের সঙ্গে তাঁর বিবাদের শুরু সেই থেকে। দু’বছর পরে মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিতে বিদ্রোহ করেছিলেন সচিন। ফল হয়েছিল উল্টো। উপমুখ্যমন্ত্রী, প্রদেশ সভাপতি, দুই পদই গিয়েছে। এখন শুধুই টঙ্কের বিধায়ক। তবে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটিতে সদ্য জায়গা পেয়েছেন। তা বলে কংগ্রেস রাজস্থানের নির্বাচনে জিতে ফের ক্ষমতায় এলেও তিনিই মুখ্যমন্ত্রী হবেন, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। অশোক গহলৌত বলে রেখেছেন, তাঁর সরকারের কাজকে সামনে রেখেই দল নির্বাচনে নেমেছে। অতএব, জিতলে তিনিই ‘অটোম্যাটিক’ মুখ্যমন্ত্রী! সচিন মানতে চান না। বলেন, “কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হয়নি। দল জিতলে বিধায়কদের মন বুঝে কংগ্রেস হাইকমান্ড ঠিক করবে, কে হবেন।”

পাঁচ বছর অন্তর রাজস্থানে ক্ষমতা বদল হয়। সেই নিয়মে এ বার রাজস্থানে বিজেপির ক্ষমতায় আসার কথা। রাজস্থানের রুখা মাটির শুখা বাতাসে খবর ভাসছে, বিধানসভা ভোট হারা ম্যাচ জেনে নিজের বিধানসভা কেন্দ্র টঙ্কের বাইরে তেমন গা লাগাচ্ছেন না সচিন। ভাবখানা এমন, গহলৌত যখন ক্যাপ্টেন, তিনিই হারা ম্যাচ জিতিয়ে দেখান! সচিন মানতে চান না। যুক্তি দেন, “কর্নাটকে কংগ্রেস জেতার পরে ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজস্থানেও ক্ষমতায় আসার জায়গায় রয়েছে। কারণ, বিজেপি গত পাঁচ বছরে বিরোধীর ভূমিকা পালন করতেই পারেননি। বিজেপি শেষ বেলায় জনতা আক্রোশ যাত্রা বার করেছিল। তাতে না ছিল জনতা, না ছিল আক্রোশ। কী ভাই সব, ঠিক কি না?” লবাদর গ্রামের গুজ্জররা তাঁদের নিজের জাতের নেতার কথায় সায় দিয়ে ঘাড় নাড়েন।

প্রশ্নটা করতেই হয়, বিজেপির কি দরকার? বিরোধীর ভূমিকায় তো আপনিই ছিলেন! আপনিই তো গহলৌত সরকারের খুঁত তুলে ধরে আক্রমণ চালাচ্ছিলেন! সচিন জবাব দেন, “তাতে সরকারের লাভই হয়েছে। হাজার হোক মানুষের কাছে এসে তো জবাব দিতে হয়।”

তা হলে কি গহলৌত-পাইলট ঝগড়া মিটে গিয়েছে? রাজেশ পাইলটের ছেলে হাসি মুখে বলেন, “আমি মল্লিকার্জুন খড়্গে, রাহুল গান্ধীর কথায় ফরগেট, ফরগিভ অ্যান্ড মুভ অন নীতি নিয়েছি।” বলেই সামনে জিজ্ঞাসু মুখে বসে থাকা গ্রামের মানুষকে বলেন, “ইনি কী জিজ্ঞাসা করছেন জানেন? গহলৌত সাহেব ও আমার যে ঝগড়া চলছিল, সেটা কি মিটে গিয়েছে? ওটা তো ব্যক্তিগত লড়াই ছিল না। জনতার সমস্যা, নীতির লড়াই ছিল।”

আরও অনেক গ্রামে যাওয়া বাকি। উঠে পড়েন সচিন পাইলট। হয়তো এ বার নয়। হয়তো পাঁচ বছর পরে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ মিলতে পারে। আরও অনেক পথ চলা বাকি। ‘বোল বস্তি, মাতা কি’ বলে জয়ধ্বনি দেন। ‘সচিন পাইলট জিন্দাবাদ’ স্লোগান ওঠে। গাঁয়ের মানুষ বছর পঁয়তাল্লিশের বিধায়ককে নিয়ে গিয়ে মন্দিরের সামনে দাঁড়িপাল্লার এক দিকে বসান। অন্য দিকে লাড্ডু চাপিয়ে ওজন করা হয়। সচিনের ওজনের সমান ৮৩ কিলো লাড্ডু গাঁয়ে বিলি হয়। পাগড়ি মাথায় ঝুলো গোঁফের বুড়ো থেকে কচিকাঁচারা মিষ্টি মুখ করে বাড়ি ফেরে। গাঁয়ের নতুন বউটির স্মার্টফোনের অ্যালবামে সচিন পাইলটের মিষ্টি হাসির ছবিটি রয়ে যায়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Rajasthan Assembly Election 2023 Sachin Pilot Congress Ashok Gehlot BJP

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।