রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
একলব্য ও তাঁর কাটা বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ!
জাতিগণনার দাবি তুলে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস সামাজিক ন্যায়ের কথা বলছে। দলিত, ওবিসি, আদিবাসীদের ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে জনসংখ্যার ভাগ অনুযায়ী সংরক্ষণের কথা বলছে। সেই রাজনৈতিক ভাষ্যে আজ রাহুল গান্ধী এ বার নতুন চরিত্র তুলে আনলেন। মহাভারতের একলব্য। নিচু জাতের বলে দ্রোণাচার্য তাঁকে অস্ত্রশিক্ষা দিতে রাজি হননি। তার পরেও নিজের চেষ্টায় দক্ষ ধনুর্ধর হয়ে ওঠা একলব্যকে বঞ্চিত করতে ‘গুরুদক্ষিণা’ বাবদ কৌশলে তাঁর বুড়ো আঙুল কেটে নিয়েছিলেন।
আজ সংবিধানের পঁচাত্তর বছরের যাত্রা নিয়ে বিতর্কে লোকসভায় রাহুল গান্ধী অভিযোগ তুলেছেন, একলব্যের আঙুল কেটে নেওয়ার মতোই মোদী সরকার দেশের তরুণদের বঞ্চিত করছে। আদানি গোষ্ঠীকে সমস্ত সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছে। আদানির হাতে সমস্ত সম্পদ তুলে দিচ্ছে। বেসরকারিকরণ, সরাসরি নিয়োগের ফলে দেশের দলিত, ওবিসি, আদিবাসীরা সংরক্ষণের সুযোগ পাচ্ছেন না, তাঁদের বুড়ো আঙুল কাটা যাচ্ছে। মুম্বইয়ের ধারাভি আদানির হাতে তুলে দিয়ে সেখানকার ছোট ব্যবসায়ীদের আঙুল কেটে নেওয়া হয়েছে। যাঁরা সেনার চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, অগ্নিবীর চালু করে তাঁদের আঙুল কেটে নিচ্ছে। হাথরসের দলিত তরুণীর ধর্ষণ ও সম্ভলে মন্দির-মসজিদ বিবাদের উদাহরণ দিয়ে বিজেপির দিকে দলিত-সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যের অভিযোগ তুলে রাহুল বলেন, ‘‘সংবিধান ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ, জন্মস্থানের ভিত্তিতে বৈষম্যে বাধা দেয়। আপনারা বিদ্বেষ ছড়ান। সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেন। সংবিধানে এ সব কোথায় লেখা আছে?”
লোকসভায় বিরোধী দলনেতা হিসেবে রাহুল গান্ধীর প্রথম বক্তৃতার ‘থিম’ ছিল অভয়মুদ্রা। তা বোঝাতে ডান হাত তুলে দেখিয়েছিলেন। আজ একলব্যের চরিত্র তুলে ধরতে সাদা টি-শার্ট পরিহিত রাহুল সেই ডানহাতের বুড়ো আঙুল লুকিয়ে উল্টো করে দেখিয়েছেন। মিনিট কুড়ির মাথায় আচমকাই বক্তৃতা শেষ করার আগে রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন, ইন্ডিয়া জোট জাতিগণনা করাবে।সংরক্ষণের ৫০ শতাংশের ঊর্ধ্বসীমা ভেঙে দেবে।
রাহুল গান্ধীর এই বক্তৃতার পরে স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর সঙ্গে শুক্রবার সংবিধান নিয়ে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরার প্রথম বক্তৃতার তুলনা শুরু হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে অধিকাংশ সাংসদেরই মত, প্রিয়ঙ্কা প্রথম বক্তৃতাতেই ঠাণ্ডা মাথায় ধীরেসুস্থে সময় নিয়ে সব বিষয় তুলে ধরেছিলেন। বিজেপিকে নিশানা করলেও পাল্টা আক্রমণের সুযোগ দেননি। সেই তুলনায় রাহুলের বক্তৃতায় ঝাঁঝ থাকলেও তিনি বিজেপির হাতে লোপ্পা বল তুলে দিয়েছেন। যেমন, একলব্যের কথা বলতে গিয়ে ছয়-সাত বছরের যুবক বলেছেন। তপস্যার কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, তপস্যার অর্থ হল ‘শরীর মে গর্মি পয়দা করনা’। তা নিয়ে সংসদের ভিতরে, বাইরে বিজেপির নেতারা হাসিঠাট্টা করতে ছাড়েননি। রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘‘এ সব কে শেখান? রাহুল গান্ধীর গৃহশিক্ষক বদল করা প্রয়োজন।’’ তৃণমূল সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহার মতে, ‘‘অনেকেরই মনে হয়েছে, রাহুল গান্ধীর বক্তৃতা ছোট হয়েছে। আরও একটু বলা উচিত ছিল। তবে বক্তৃতা ভাল লেগেছে। কিন্তু আমার মতে প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর বক্তৃতা অনেক ভাল ছিল।’’
দাদা রাহুলের বক্তৃতার পরে প্রিয়ঙ্কা নিজে অবশ্য বলেছেন, আদানি গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে গিয়ে তরুণদের বঞ্চিত করা নিয়ে রাহুল যা বলেছেন, একদম ঠিক। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমার বক্তৃতা থেকে আদানি শব্দ মুছে দেওয়া হয়েছে। কেন? আদানি কি অসংসদীয় শব্দ? ওঁরা যে কারও নাম নিতে পারেন, আমরা আদানির নামোচ্চারণ করতে পারব না?”
আদানির মতোই রাহুল আজ ফের বিনায়ক দামোদর সাভারকরকে নিশানা করায় বিজেপি শিবির উত্তেজিত হয়েছে। সংবিধান নিয়ে বিজেপিকে নিশানা করতে গিয়ে আজ সাভারকরের নাম না করে তাঁকে নরেন্দ্র মোদীর ‘সুপ্রিম লিডার’ হিসেবে কটাক্ষ করেছেন রাহুল। তিনি বলেন, সংবিধান তৈরির পরে সাভারকর লিখেছিলেন, ‘এই সংবিধানের সবথেকে খারাপ দিক হল, এতে কিছুই ভারতীয় নেই। সংবিধানের থেকেও মনুস্মৃতি বড়। বেদের পরে সবথেকে পূজনীয়। মনুস্মৃতি মেনে দেশ চালানো উচিত’। রাহুল এক হাতে সংবিধান ও অন্য হাতে মনুস্মৃতি নিয়ে বিজেপি নেতাদের প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনারা কি মনুস্মৃতি মেনে চলেন? আপনারা যদি সংবিধানকে সম্মান করেন, তা হলে তো আপনারা সাভারকরের অপমান করছেন।’’
সাভারকরকে নিশানার পরে বিজেপি নেতারা পাল্টা জবাবে বলেছেন, খোদ ইন্দিরা গান্ধী সাভারকরকে দেশের সুপুত্র বলেছিলেন। তাঁর স্মৃতিতে ডাকটিকিট প্রকাশ করেছিলেন। সাভারকরের স্মারকের জন্য চাঁদা দিয়েছিলেন। শিবসেনার একনাথ শিন্দের পুত্র, সাংসদ শ্রীকান্ত শিন্দে প্রশ্ন তোলেন, সাভারকরের প্রতি ইন্দিরা গান্ধীর ভাবনা নিয়ে রাহুল কী বলবেন? রাহুল জবাবে বলেন, ‘‘আমি ঠাকুমাকে প্রশ্ন করেছিলাম। উনি বলেছিলেন, সাভারকর ব্রিটিশদের সঙ্গে সমঝোতা করেছিলেন। চিঠি লিখে ক্ষমা চেয়েছিলেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy