মল্লিকার্জুন খড়্গে। —ফাইল চিত্র।
হরিয়ানা-মহারাষ্ট্রে হারের পরে ইভিএমের বদলে ব্যালট পেপারে ভোটের দাবি তুলেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। আজ সেই দাবি থেকে সরে এসে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি সার্বিক ভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কারচুপি নিয়ে প্রশ্ন তোলার সিদ্ধান্ত নিল। কংগ্রেস ঠিক করেছে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কারচুপি, নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্ব নিয়ে দেশ জুড়ে আন্দোলন করে তোলা হবে। কিন্তু শুধু নির্বাচনী কারচুপিকে দোষ দিয়ে যে লাভ হবে না, কংগ্রেসের নিজেরও যে গাফিলতি রয়েছে, তা-ও মেনে নিয়েছেন খড়্গে।
হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনে হারের পরে কংগ্রেসের প্রথম ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে আজ কংগ্রেস সভাপতি খড়্গে বলেছেন, দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা মেরামত করতে হবে। তার জন্য সাংগঠনিক রদবদল করতে হবে। কংগ্রেস নেতাদের একে অপরের বিরুদ্ধে ‘বয়ানবাজি’ বন্ধ করতে হবে। বিধানসভা নির্বাচনের এক বছর আগে থেকে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে হবে। কংগ্রেসকে নিজের ভাষ্য তৈরি করতে হবে। লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ‘উৎসাহব্যঞ্জক’ ফল সত্ত্বেও বিধানসভা ভোটে ‘ধাক্কা’-র পরে ‘কঠোর সিদ্ধান্ত’ নিতে হবে।
কংগ্রেস সভাপতির এই বক্তব্যের পরে প্রশ্ন উঠেছে, এ সব সাংগঠনিক খামতি মেরামত, ভোটের আগাম প্রস্তুতি, রদবদল, কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজটি কে করবেন? বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা? এ সব পদক্ষেপ তো কংগ্রেস সভাপতিকেই করতে হবে। তা হলে তিনি এত দিন কেন করেননি? কেন হরিয়ানা নির্বাচনের আগে ভূপিন্দর সিংহ হুডা ও কুমারী শৈলজা একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে গেলেও কংগ্রেস হাইকমান্ড তাঁদের মুখ বন্ধ করতে বলেনি? আড়াই বছর আগে উদয়পুরে কংগ্রেসের চিন্তন শিবিরে যে সব সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তা কার্যকর করা হয়নি কেন? কংগ্রেসের সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল বলেন, ‘‘এত দিন যা হয়নি, তা এ বার দ্রুত হবে। তবে কংগ্রেস কর্নাটক, তেলঙ্গানা, হিমাচল প্রদেশের ভোটে জিতেছে।তিন দিন আগে কংগ্রেস সভাপতি নিজেই বলেছিলেন, ইভিএম নয়। ব্যালট পেপারে ভোট করাতে হবে।’’ আজ কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা বলেন, ‘‘ব্যালট পেপারই একমাত্র রাস্তা বলে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’ কিন্তু পি চিদম্বরম ও শশী তারুর ভিন্ন মত জানান। তাঁদের বক্তব্য ছিল, ব্যালট পেপারে ভোট হলেও কারচুপি হতে পারে। ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তোলার বদলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কারচুপি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে। রাহুল গান্ধী হেসে খড়্গেকে বলেন, ‘‘আপনি চাবুক চালান।’’ শেষে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কারচুপি নিয়ে প্রশ্ন তোলারই সিদ্ধান্ত হয়। এই প্রক্রিয়াগত কারচুপি নিয়েই কংগ্রেস আজ নির্বাচন কমিশনকে স্মারকলিপি দিয়েছে। কংগ্রেসের প্রশ্ন, মহারাষ্ট্রে প্রতিটি নির্বাচন কেন্দ্র থেকে ১০ হাজার বিরোধী সমর্থকের নাম বেছে বেছে ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ল কেন? কেনই বা ভোটের হারের প্রাথমিক হিসেব ও চূড়ান্ত হিসেবের মধ্যে বিপুল ফারাক হল?
কংগ্রেস নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কারচুপি নিয়ে আগামী এক মাস আন্দোলন চালাবে। তারপরে কর্নাটকের বেলগাভিতে ২৬ ডিসেম্বর মহাত্মা গান্ধীর কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণের শতবর্ষ উদযাপনে বর্ধিত কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ও জনসভা হবে। এ বিষয়ে ইন্ডিয়া জোটের বাকি শরিকরাও পাশে থাকবে বলে কংগ্রেসের আশা।
কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত, দল মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আদানি ঘুষ-কাণ্ড নিয়ে আক্রমণ চালিয়ে যাবে। আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভুবনেশ্বরে বিজেপির সভায় কংগ্রেসকে পাল্টা নিশানা করে বলেছেন, কংগ্রেস ২০১৯-এ তাঁকে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ বলে আক্রমণ করেছিল। ২০২৪-এ এক বারও সে কথা বলেনি। মহারাষ্ট্রে হার নিয়ে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে মোদী বলেন, কংগ্রেস হারের রাগ ইভিএমের উপর মেটাচ্ছে। আমজনতাকে মিথ্যে বলে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কংগ্রেস পাল্টা যুক্তি দিয়েছে, মোদী নিজেও অতীতে ইভিএমের বদলে ব্যালট পেপারে ভোটের দাবি তুলেছিলেন। এখন মোদী সরকার আদানি নিয়ে আলোচনা এড়াচ্ছে বলেই সংসদের অচলাবস্থা চলছে।
মল্লিকার্জুন খড়্গে আজ বলেছেন, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, আর্থিক অসাম্য দেশের সমস্যা। জাতগণনা, সংবিধান, সামাজিক ন্যায় এ সবও বড় প্রশ্ন। কিন্তু ভোটমুখী রাজ্যে স্থানীয় বিষয় ভুলে গেলে চলবে না। তা নিয়েই রণনীতি তৈরি করতে হবে। খড়্গের প্রশ্ন, “জাতীয় বিষয় ও জাতীয় স্তরের নেতাদের ভরসায় কত দিন রাজ্যের নির্বাচন লড়া হবে?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy