জিতিন প্রসাদ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা সুদক্ষিণা দেবীর বিয়ে হয়েছিল শাহজাহানপুরের জমিদার জ্বালা প্রসাদের সঙ্গে। জ্বালা প্রসাদ শুধু জমিদার ছিলেন না, ব্রিটিশ সরকারের আইসিএস অফিসারও ছিলেন। ইতিহাস বলে, সুদক্ষিণাই প্রথম বাঙালি মহিলা, ব্রিটিশ জমানায় আগরা ও অবধকে নিয়ে তৈরি যুক্তপ্রদেশে (ইউনাইটেড প্রভিন্স) যাঁর বিয়ে হয়েছিল।
সুদক্ষিণা দেবী পূর্ণিমা দেবী নামেও পরিচিত ছিলেন। জ্বালা প্রসাদ ও সুদক্ষিণার একমাত্র ছেলে কুমার জ্যোতি প্রসাদের পুত্র জিতেন্দ্র প্রসাদ ছিলেন উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা। প্রয়াত জিতেন্দ্র কংগ্রেস সভাপতি পদে সনিয়া গাঁধীর বিরুদ্ধে প্রার্থীও হয়েছিলেন।
সেই জিতেন্দ্রর ছেলে জিতিন প্রসাদকে এ বার কংগ্রেস নেতৃত্ব এআইসিসি-তে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব দিয়ে পাঠাচ্ছেন। বাংলায় বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে। তা কি জিতিনের সঙ্গে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের যোগাযোগের কথা মাথায় রেখে? প্রশ্ন শুনে এআইসিসি-র এক নেতা হাসতে হাসতে বলেন, “দু’বছর পরে তো উত্তরপ্রদেশেই বিধানসভা ভোট। জিতিন কি নিজের রাজ্য ছেড়ে প্রপিতামহীর রাজ্যে গিয়ে খুশি হবেন! ওঁকে তো উত্তরপ্রদেশ থেকেই সরিয়ে দেওয়া হল। অপরাধ, শীর্ষ নেতৃত্বে এই অনিশ্চয়তায় তিনি খুশি ছিলেন না। তাই সনিয়াকে লেখা চিঠিতে সই করেছিলেন।” জিতিন নিজে টুইট করে সনিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশের এক নেতা বলেন, “দেওয়াল লিখন অবশ্য স্পষ্ট ছিল। প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা উত্তরপ্রদেশের ভোটের প্রস্তুতিতে এক গুচ্ছ কমিটি তৈরি করেছিলেন। তার কোনওটাতেই জিতিনের স্থান হয়নি।”
সনিয়া গাঁধী শনিবারই আমেরিকা রওনা হয়েছেন তাঁর চিকিৎসার জন্য। প্রতি বছরই শারীরিক পরীক্ষার জন্য তাঁকে আমেরিকা যেতে হয়। এ বছর অতিমারির জন্য সেই যাওয়া পিছিয়েছে। সনিয়ার সঙ্গে যাচ্ছেন রাহুল। মা-ছেলের সেই যাওয়ার ঠিক আগে দলের এই রদবদলে জিতিন একা নন, ক্ষুব্ধ অনেকেই। শুক্রবার রাতে কংগ্রেসের সাংগঠনিক রদবদলে গাঁধী পরিবারের প্রতি আস্থাভাজনরাই গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন বলে ফের দলের অন্দরে অভিযোগ উঠেছে। ক্ষুব্ধ কংগ্রেস নেতাদের মতে, ফারাক হল, আগে সনিয়ার আস্থাভাজনরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতেন। এখন রাহুলের আস্থাভাজনরা সেই দায়িত্ব পাচ্ছেন।
এই রদবদলে রাহুলের সভাপতি পদে প্রত্যাবর্তনের বার্তা থাকলেও তাতে কংগ্রেসের সংগঠন চাঙ্গা হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দলের দুরবস্থা নিয়ে মুখ খুলে সাসপেন্ড হওয়া সঞ্জয় ঝা-র কটাক্ষ, “টাইটানিকের ডেকের চেয়ার এদিক ওদিক করে কি আর জাহাজডুবি থেকে বাঁচা যায়!”
রাহুল-শিবিরের যুক্তি, যে সব রাজ্যে কংগ্রেস ভাল অবস্থায় নেই, সেখানে বেশি পরিশ্রম করতে হবে বলে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যেমন মণিকম টেগোরকে তেলঙ্গানা, দীনেশ গুণ্ডু রাওকে তামিলনাড়ু, এ চেল্লাকুমারকে ওড়িশার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজস্থানের জিতেন্দ্র সিংহ পেয়েছেন অসমের দায়িত্ব। ভোটমুখী বাংলার দায়িত্ব জিতিন প্রসাদের সামনে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ। রাহুল শিবিরের এক নেতা বলেন, “মনমোহন সরকারের আমলে জিতিন প্রসাদের মতো নেতারা রাহুলের সুবাদেই কেন্দ্রে মন্ত্রিত্ব পেয়েছিলেন। এখন তাঁদের সংগঠনে প্রমাণ করতে হবে।”
বিক্ষুব্ধ নেতাদের পাল্টা প্রশ্ন, জিতেন্দ্র এত দিন ওড়িশায় থেকে দলের কী উন্নতি করেছেন? জম্মু-কাশ্মীরের দায়িত্ব পাওয়া রজনী পাটিলের দায়িত্বে হিমাচলে দলে প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। অবস্থা সামলাতে এখন রাজীব শুক্লকে পাঠাতে হচ্ছে। তাঁদের মতে, কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতেও নতুন জায়গা মেলা নেতানেত্রীদের মধ্যে সেই সলমন খুরশিদ, মীরা কুমারের মতো গাঁধী পরিবারের আস্থাভাজনদেরই ভিড়। সনিয়াকে চিঠি লিখে ক্ষোভ জানানো শশী তারুর বা মণীশ তিওয়ারি সেখানে জায়গা পাননি।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, লোকসভার সাংসদ মণীশ তিওয়ারিকে খুব শীঘ্রই কোনও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। অধীর চৌধুরীকে লোকসভায় দলনেতা করায় মণীশের ক্ষোভ ছিল। এখন অধীরকে পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ায় তাঁর জায়গায় মণীশকে লোকসভার দলনেতার দায়িত্ব দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy