নয়াদিল্লি, ৬ মার্চ: কলকাতায় নির্বাচন কমিশনের অফিসে গিয়ে তৃণমূল যখন একই এপিক নম্বরে বিভিন্ন রাজ্যের ভোটার কার্ড থাকার প্রতিবাদ জানিয়ে এল, তখন দিল্লিতে এই বিষয়টি নিয়ে সংসদের আসন্ন বাজেট অধিবেশনে ঝড় তোলার হুঙ্কার দিল তাদের সংসদীয় দল। আজ তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “ভোটারের পরিচয়পত্রের কারচুপির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংযোগের যে অভিযোগ উঠেছে তা অবশ্যই আসন্ন অধিবেশনে তোলা হবে। এটা নেহাতই ছাপার বা টাইপের ভুল নয়। যে হেতু ভোটারের সচিত্র পরিচয়পত্রের নম্বরের সঙ্গে তাঁর ভোটদানের বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে, এপিক নম্বরের ডুপ্লিকেট হলে ভোটদান বাধা পাবে। কমিশনের হ্যান্ডবুকে স্পষ্ট লেখা রয়েছে এপিক নম্বর অভিন্ন (ইউনিক), তা তিনটি অক্ষর এবং ৭টি সংখ্যা নিয়ে তৈরি হয়। এবং এই তিনটি অক্ষর (যাকে ফাংশনাল ইউনিক সিরিয়াল নম্বর বলা হয়) প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য আলাদা। ফলে দুই বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটারের এই তিনটি অক্ষর মিলে যাওয়া অসম্ভব। কিন্তু সেটাই হচ্ছে।”
বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল ইতিমধ্যেই এসপি, আপ, উদ্ধবপন্থী শিবসনা, এনসিপি-র মতো বিরোধী দলের সঙ্গে সমন্বয় করে চলছিল। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে গত কয়েক
বছরের ‘অ্যালার্জি’ কাটিয়ে ভোটার তালিকার কারচুপির অভিযোগের এই বিষয়টিতে একসঙ্গে আক্রমণ শানাবে কি না, তৃণমূল তা নিয়ে সংশয়ে ছিল। হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রের নির্বাচনে এই নির্বাচনী কারচুপির কারণে ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে, এমন অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। বিষয়টি নিয়ে ভোটের পর সাংবাদিক বৈঠকও করেছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। এই প্রসঙ্গে ডেরেক জানিয়েছিলেন, তৃণমূল কোনও ঘটনা ঘটার আগেই সতর্কবার্তা দেয়, ঘটনার পরে প্রতিক্রিয়া দেয় না। তবে এ দিন তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, কংগ্রেস তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। সূত্রের খবর, ভোটার তালিকার কারচুপি নিয়ে সংসদে আন্দোলনের রাশ নিজের হাতেই রাখতে চায় তৃণমূল।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, এই ভোটার তালিকা কারচুপির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দলের মধ্যেই একটি গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের সঙ্গে সমন্বয়ও করা হচ্ছে। কংগ্রেস মেনে নিচ্ছে যে হরিয়ানায় এই কারচুপির কারণেই, ভাল জায়গায় থাকা সত্ত্বেও ভোটে হারতে হয়েছে। আটকাতে পারেনি দল। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষে রাজ্য নেতৃত্বকে সে সময় সতর্ক করা হলেও, গুরুত্ব দেয়নি হরিয়ানা কংগ্রেস। মহারাষ্ট্রেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে অনুমান তাদের, কিন্তু সেটাও বুঝে ওঠা যায়নি। আপাতত সব বিরোধী দল এক সঙ্গে মিলে সংসদে বিষয়টি নিয়ে গলা চড়িয়ে নির্বাচন কমিশন তথা সরকারকে চাপে রাখতে চাইছে, যাতে পরে বিভিন্ন রাজ্যে ভোটের আগে ফের কোনও ‘কারচুপি’ না হয়।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)