ফের প্রকাশ্যে কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্ব। —ফাইল চিত্র।
বিহার নির্বাচনে ভরাডুবির পর ফের প্রকাশ্যে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ কাজিয়া। পরিস্থিতি এতটাই চরমে যে, প্রবীণ নেতা তথা সাংসদ কপিল সিব্বলকে দল ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বসলেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী। তার পিঠোপিঠি বুধবার সন্ধ্যায় দলের নেতাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকলেন দলনেত্রী সনিয়া গাঁধী। তার অব্যবহিত আগে অধীরের এই মন্তব্য ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। তাঁদের মতে, এমনিতে গাঁধী পরিবারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত অধীর। তাঁর এই মন্তব্যের পিছনে হাইকম্যান্ডের অনুমোদন থাকার সম্ভাবনা। ফলে কংগ্রেসের অন্দরমহলের ধারণা, অধীরের মাধ্যমে সিব্বলকে বার্তা পাঠিয়েছে গাঁধী পরিবারই।
প্রসঙ্গত, সদ্যসমাপ্ত বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেসের। জোটসঙ্গী তেজস্বী যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) একক বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এসেছে। বামেরাও নিজেদের আসন বাড়াতে সফল হয়েছে। সেখানে আসনসংখ্যা বাড়ানো তো দূর, বরং আগে জেতা বহু আসনও হাতছাড়া হয়েছে কংগ্রেসের। তাদের জন্যই ‘মহাজোট’ সরকার গড়তে পারেনি বলে ইতিমধ্যেই আরজেডি শিবির থেকে অভিযোগ উঠে এসেছে। নির্বাচনী প্রচার ঘিরে কংগ্রেস নেতাদের ‘গা-ছাড়া মনোভাব’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তারা।
তবে শুধু আরজেডি-ই নয়, কংগ্রেসের অন্দরেও এ নিয়ে সরব হয়েছেন একাধিক নেতা। যাঁদের মধ্যে অন্যতম দলের রাজ্যসভা সাংসদ সিব্বল। তিনি প্রকাশ্যেই বলেছেন, ভরাডুবির কারণ খুঁজে বার করতে হলে আত্মসমীক্ষা প্রয়োজন। কিন্তু বিহারে বিধানসভা নির্বাচন হোক বা বিভিন্ন রাজ্যে উপনির্বাচন, ব্যর্থতা নিয়ে সাফাই দেওয়ার কোনও তাগিদই অনুভব করেননি দলীয় নেতৃত্ব। সমস্যাটা হয়ত চোখেই পড়ছে না ওঁদের। অথবা চোখে পড়লেও এড়িয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি হাইকম্যান্ডের কাছে অভিযোগ জানানোও আজকাল অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও অভিযোগ সিব্বলের।
আরও পড়ুন: অক্টোবরে কর্মহীন ১৮ লক্ষ, মে মাসের পর সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র কর্মসংস্থানে
প্রকাশ্যে দল সম্পর্কে সিব্বলের এই মন্তব্যে অসন্তুষ্ট কংগ্রেসের একাংশ। সেই নিয়েই এ দিন তাঁকে একহাত নেন অধীর। তিনি বলেন, ‘‘কিছু নেতার যদি মনে হয়, কংগ্রেস তাঁদের জন্য সঠিক দল নয়, তাহলে তাঁরা নতুন দল গড়তেই পারেন। অথবা অন্য কোনও দলকে প্রগতিশীল বলে মনে হলে বা এমন কোনও দল পেলে যেখানে তাঁদের স্বার্থ অক্ষুন্ন থাকবে, সেখানেও চলে যেতে পারেন তাঁরা। তা না-করে এই ধরনের আচরণে দলকে বিব্রত না করলেই পারেন। এতে দলের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হতে পারে।’’
বিহারে ভরাডুবি নিয়ে যাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, নির্বাচনী প্রচারে তাঁদের কাউকে মাঠে নামতে দেখা যায়নি বলেও সিব্বলের উদ্দেশে কটাক্ষ ছুড়ে দেন অধীর। তিনি বলেন, ‘‘দলের অভিজ্ঞ নেতাদের মুখে এই ধরনের মন্তব্য শোভা পায় না। গাঁধী পরিবারের সঙ্গে নৈকট্য রয়েছে তাঁদের। দলীয় নেতৃত্ব অথবা দলের মধ্যে সঠিক জায়গায় যাবতীয় অভাব-অভিযোগ জানাতে পারেন তাঁরা। দল পুনর্গঠন নিয়ে যদি এতই চিন্তিত হন, তাহলে সক্রিয় ভাবে মাঠে নামুন। বিহারে নির্বাচনের সময় কি তাঁদের কাউকে ভোটের ময়দানে দেখা গিয়েছিল?’’
আরও পড়ুন: গো সম্পদ রক্ষার্থে ‘গো-পরিষদ’ গঠন করার সিদ্ধান্ত নিল মধ্যপ্রদেশ সরকার
কংগ্রেস নেতৃত্বের প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব যদিও এই প্রথম নয়। এ বছর গোড়ার দিকে রাজস্থানে অশোক গহলৌতের সরকারের বিরুদ্ধে সচিন পাইলট যখন বিদ্রোহ ঘোষণা করেন, তখনও কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ বিভাজন সামনএসে গিয়েছিল। সিব্বল তখনও প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘ঘোড়া আস্তাবল থেকে বেরিয়ে গেলে কি দলের টনক নড়বে?’’ গুলাম নবি আজাদের মতো প্রবীণ নেতার সঙ্গেও সেইসময় দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল রাহুল গাঁধী ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের। এ বার বিহার নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তাই সিব্বলের উপর চটেছেন গহলৌতও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা এ ভাবে সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরা উচিত হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy