পঞ্জাবের নতুন মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চন্নীর সঙ্গে বৈঠক করেন নভজ্যোত সিংহ সিধু। সেই বৈঠকে যোগ দিতে প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই রওনা হচ্ছেন তিনি। বৃহস্পতিবার পাটিয়ালায়। পিটিআই
গাঁধী পরিবার বনাম কংগ্রেস পরিবার!
গত এক বছর ধরে সনিয়া গাঁধী দলের মধ্যে বিদ্রোহ ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিলেন। নানা ভাবে বিক্ষুব্ধদের ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা চলছিল। পঞ্জাব-কাণ্ড এক ধাক্কায় সেই চেষ্টায় জল ঢেলে দিল। একদিকে সনিয়া-রাহুল গাঁধীর অনুগামীরা, অন্য দিকে গাঁধী পরিবারের দিকেই প্রশ্ন তোলা কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতাদের জি-২৩ গোষ্ঠীতে আড়াআড়ি ভাবে বিভাজিত কংগ্রেসের অন্দরমহলের ছবি প্রকাশ্যে চলে এল।
পঞ্জাবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদে নভজ্যোৎ সিংহ সিধুকে বসিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে অমরেন্দ্র সিংহকে হঠানোর মতো সিদ্ধান্ত কে নিচ্ছেন, তা নিয়ে গত কালই কপিল সিব্বল প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, কংগ্রেসে এখন কোনও নির্বাচিত সভাপতি নেই। ফলে কে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তা কেউ জানেন না। আসলে যে রাহুলই পিছন থেকে সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, সে দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন তিনি।
আজ গাঁধী পরিবারের অনুগামীরা সিব্বলের মতো ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতাদের দিকে আঙুল তুলে প্রশ্ন ছুড়েছেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকতে তাঁদের মন্ত্রী করেছে। বিরোধী আসনে থাকতেও রাজ্যসভায় পাঠিয়েছে। সিব্বলরা কংগ্রেসের জন্য কী করেছেন? কেন তাঁরা দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুখ খুলে কংগ্রেসকে পিছন থেকে ছুরি মারছেন? উল্টো দিকে সিব্বলের পাশে দাঁড়িয়ে গুলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মা, মণীশ তিওয়ারির মতো নেতারা যুক্তি দিয়েছেন, সিব্বলের প্রশ্ন কংগ্রেস নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলেছে বলেই তাঁর বাড়িতে লোক পাঠিয়ে হামলা করানো হচ্ছে। এত দিন নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেস বাক্-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলত। আজ কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধরা দলের মধ্যেই বাক্-স্বাধীনতার সংস্কৃতি কোথায় গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বিক্ষুব্ধ নেতাদের প্রশ্ন, কংগ্রেসে যে নির্বাচিত সভাপতি নেই, সনিয়া গাঁধীকে অন্তর্বর্তী সভানেত্রী করে দল চলছে, রাহুল সভাপতি না হতে চাইলেও পিছন থেকে দল চালাচ্ছেন, তা নিয়ে গাঁধী পরিবারের অনুগামীরা কী বলবেন? ভূপেশ বঘেল, অজয় মাকেনের মতো গাঁধী পরিবারের আস্থাভাজন বলে পরিচিত কংগ্রেস নেতাদের জবাব, ২০১৯-এর লোকসভায় দলের হারের দায়িত্ব নিয়ে রাহুলের পদত্যাগের পরে কংগ্রেস নেতারাই সনিয়াকে অন্তর্বর্তী সভানেত্রী করেছিলেন। তিনিই দলের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। সিব্বলের এ সব নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা বিরক্তিকর। মাকেনের মতো দিল্লির কংগ্রেস নেতাদের প্রশ্ন, সিব্বলের কোনও সাংগঠনিক প্রেক্ষাপট না থাকলেও তাঁকে সনিয়া কেন্দ্রে মন্ত্রী করেছিলেন, রাজ্যসভায় পাঠিয়েছেন। তিনি কত বার কংগ্রেসের কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন?
গুলাম নবি, আনন্দ শর্মা, সিব্বল, তিওয়ারি-সহ ২৩ জন কংগ্রেস নেতা গত বছরের অগস্টে সনিয়াকে চিঠি লিখে সক্রিয় নেতৃত্ব, সাংগঠনিক নির্বাচনের দাবি তুলেছিলেন। তার পরে সভাপতি পদে নির্বাচন হবে বলে ঠিক হলেও এখনও তা হয়নি। পঞ্জাবে সিধুর পদত্যাগ ঘিরে কংগ্রেসের দোলাচলের মধ্যে বুধবার সিব্বল ফের কংগ্রেসের বেহাল দশা নিয়ে মুখ খোলেন। তার পরেই তাঁর দিল্লির বাড়িতে ‘রাহুলের অনুগামী’ বলে পরিচিত যুব কংগ্রেসের কর্মীরা বিক্ষোভ দেখান। সিব্বলের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আজ সিব্বলের পাশে দাঁড়িয়ে কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধরা অভিযোগ তুলেছেন, সিব্বলের বাড়িতে এই ‘গুণ্ডাগিরি’ পরিকল্পিত ভাবে করানো হয়েছে। তাঁদের ইঙ্গিত রাহুলের ঘনিষ্ঠ নেতাদের দিকেই। রাজ্যসভায় কংগ্রেসের উপদলনেতা আনন্দ শর্মা সনিয়া গাঁধীর কাছে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির দাবি তুলেছেন।
আজ গুলাম নবি বলেন, ‘‘দলের মধ্যে কোনও অংশ থেকে কোনও পরামর্শ এলে তাকে ধামাচাপা দেওয়ার বদলে স্বাগত জানানো উচিত। গুণ্ডাগিরি কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’’ গুলামের যুক্তি, সিব্বল সংসদের ভিতরে, বাইরে কংগ্রেসের অনুগত কর্মী। আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘কংগ্রেসের বাক্-স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়ানোর ইতিহাস রয়েছে। মতভেদ গণতন্ত্রেরই অঙ্গ। অসহিষ্ণুতা, হিংসা কংগ্রেসের সংস্কৃতি, মূল্যবোধ নয়।’’ পঞ্জাবের কংগ্রেস সাংসদ মণীশের যুক্তি, পরিকল্পনা করে সিব্বলের বাড়িতে গুণ্ডাগিরি করানো হয়েছে। যাঁরা এই কাজ করিয়েছেন, তাঁদের মাথায় রাখা উচিত, সিব্বল আদালতের ভিতরে-বাইরে কংগ্রেসের হয়ে লড়েন। তাঁর মতামত অস্বস্তিকর হতে পারে। কিন্তু তাতে হিংসার লাইসেন্স মেলে না।
বুধবার রাতে মূলত যুব কংগ্রেসের কর্মীরাই সিব্বলের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। আজ যুব কংগ্রেসের সভাপতি শ্রীনিবাস বি ভি সিব্বলকে উদ্দেশ করে প্রশ্ন করেছেন, ‘‘দলের সভানেত্রী ও নেতৃত্ব তিনিই, যিনি আপনাকে সংসদে পাঠিয়েছেন। দলের সুসময়ে আপনাকে মন্ত্রী করেছেন। বিপক্ষে থেকেও রাজ্যসভা সাংসদ করেছেন। নানা দায়িত্ব দিয়েছেন। এখন লড়াইয়ের সময়ে আপনি কী করছেন?’’ তাঁর বক্তব্য, রাহুল গাঁধী আগেই বলে দিয়েছেন, কেউ বিজেপি-আরএসএসকে ভয় পেলে তিনি কংগ্রেস ছেড়ে চলে যাতে পারেন।
দলের মধ্যে এই বিভাজন ও বচসার সমাধান কোথায়, কেউই সে উত্তর দিতে পারেননি। কিন্তু এতে যে কংগ্রেসের কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে, তা সকলেই মানছেন। কংগ্রেসের মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, ‘‘প্রবীণ নেতাদের এই ভাবে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে দেখে আমরা সত্যিই মর্মাহত। তবে আমরা নিরাশ নই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy