পহেলগাম কাণ্ড নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা ছবিকে কেন্দ্র করে এ বার রাজনৈতিক তরজায় নেমে পড়ল কংগ্রেস ও বিজেপি। বিষয়টি নিয়ে তীব্র বিতর্কের মুখে অবশ্য গভীর রাতে ‘গায়েব’ পোস্টটি মুছে দেয় কংগ্রেস।
গতকাল গভীর রাতে কংগ্রেস সমাজমাধ্যম এক্সে একটি ছবি পোস্ট করে, যাতে লেখা ছিল দায়িত্ব নেওয়ার সময়ে ‘গায়েব’ (উধাও)। তাতে কারও নাম না থাকলেও, ছবিতে দেখা যায় কুর্তা-পাজামা পরে এক মস্তকহীন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে রয়েছে। যার পোশাকআশাকের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর জামাকাপড়ের সাদৃশ্য রয়েছে। রাজনীতিকদের মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করেই ওই পোস্টটি করেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কারণ, পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরে সর্বদলীয় বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী কেন ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেসের নেতারা। কংগ্রেসের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী হামলার পরে বিহারে গিয়ে রাজনৈতিক জনসভা করতে পারেন। মন কি বাত অনুষ্ঠানের জন্য ভিডিও রেকর্ডিং করতে পারেন, কিন্তু সর্বদলীয় বৈঠক এড়িয়ে যান। ২০০৮ সালে মুম্বই হামলার দায়িত্ব নিয়ে ঘটনার পরে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। কিন্তু এ যাত্রায় সাংবাদিক সম্মেলন তো দূরস্থান, হামলার ঘটনার দায় পর্যন্ত নিতে দেখা যায়নি প্রধানমন্ত্রীকে। কংগ্রেস সূত্রের মতে, প্রধানমন্ত্রীর দায়বদ্ধতাকে তুলে ধরতেই ‘গায়েব’ পোস্টটি করা হয়েছে।
এই পোস্টের পরে পাকিস্তানের প্রাক্তন মন্ত্রী ফওয়াদ আহমেদ হুসেন চৌধুরী লেখেন, ‘গাধার মাথা থেকে শিং হারিয়ে যাওয়ার কথা শুনেছিলাম, আর এখানে তো মোদী নিখোঁজ।’’ সঙ্গে হ্যাশ ট্যাগ, ‘নটি (দুষ্ট) কংগ্রেস।’ স্বভাবতই এই সময়ে এই পোস্টে পাকিস্তানের রাজনীতিক সমর্থন করায় পাল্টা আক্রমণ করার সুযোগ পেয়ে যায় বিজেপি। দলের আইটি সেলের মুখপাত্র অমিত মালবীয় লেখেন, ‘কংগ্রেস পাকিস্তানের জনসংযোগ মুখপাত্র। কংগ্রেসের নেতারা পাকিস্তানের স্লিপার সেলের মতো কাজ করছেন।’
বিজেপির পক্ষ থেকে লন্ডনের পাক দূতের বিশেষ ভঙ্গিমার (গলা কাটার ভঙ্গি) ছবি পোস্ট করে লেখা হয়, ‘গায়েব’ পোস্টের মাধ্যমে কংগ্রেস পাকিস্তানিদের ভাষায় কথা বলছে এবং সন্ত্রাসীদের মতো আচরণ করছে। এরপর সাদা টি-শার্ট, মাথায় গান্ধী টুপি পরে এক ব্যক্তি পিঠের পিছনে ছুরি ধরে দাঁড়িয়ে আছে—এমন একটি ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে বিজেপি। যে ব্যক্তির মুখ না দেখা গেলেও শারীরিক ভাবে সাদৃশ্য রয়েছে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে। ছবির অর্থ, দেশের বিপদের সময়ে পিছন থেকে ছুরি মারছেন কংগ্রেসের ওই নেতা। বিজেপি মুখপাত্র আর পি এন সিংহ বলেন, ‘‘বিপদের দিনে পাকিস্তানকে তলে তলে সাহায্য করার জন্য মরিয়া কংগ্রেস। আসলে নিজেদের মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের জন্যই কংগ্রেস ওই কাজ করে চলেছে।’’ বিজেপি শিবিরের বক্তব্য, সংখ্যালঘু তোষণ করতে গিয়ে কংগ্রেস এখন নিজের দেশের স্বার্থ ভুলে গিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলছে। জনগণ পাকিস্তানকে যেমন ক্ষমা করবে না, তেমনি কংগ্রেসকেও করবে না।
রাতে কংগ্রেসের সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল এক নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছেন, পহেলগাম কাণ্ডের পরেই কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এককাট্টা থাকা হবে। এই নীতিতেই অটল রয়েছে দল। তাই আগামী দিনে এই নীতির বাইরে গিয়ে যদি দলের কোনও স্তরের নেতা, কর্মী বা সমাজমাধ্যমের কর্মী কোনও বক্তব্য রাখেন, তা হলে তা দলবিরোধী কাজ বলে গণ্য হবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)