পঞ্জাবে প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ের নিরাপত্তা লঙ্ঘন নিয়ে বিজেপির বিক্ষোভ। শুক্রবার দিল্লিতে। ছবি—পিটিআই।
পঞ্জাবের কৃষক সংগঠনের বিক্ষোভে প্রধানমন্ত্রীর কনভয় আটকে যাওয়াকে বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা প্রাণঘাতী হামলার ষড়যন্ত্র বলে তুলে ধরতে চাইছেন। তার জবাবে কংগ্রেস আজ পাল্টা প্রশ্ন তুলল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কি জাতীয় নিরাপত্তার সমস্যার থেকেও নিজের নিরাপত্তা নিয়ে বেশি চিন্তিত?
কংগ্রেসের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদীর উপরে পঞ্জাবে ‘প্রাণঘাতী হামলার চেষ্টা’ হয়েছিল বলে ভাবাবেগ তৈরি করে বিজেপি আসলে উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে ফায়দা তুলতে চাইছে।
কংগ্রেস নেতা, রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে আজ বলেন, ‘‘অন্য কোনও প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি প্যাংগং হ্রদ ও অরুণাচল প্রদেশে সীমান্তে জাতীয় নিরাপত্তায় খামতির দিকে নজর দিতেন। কিন্তু গত ৭০ বছরে এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী নিজের নিরাপত্তার বিপদ নিয়ে বেশি চিন্তিত।’’ পঞ্জাবের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নভজ্যোত সিংহ সিধু বলেন, ‘‘পঞ্জাবে তাঁর প্রাণের আশঙ্কা হয়েছিল বলে প্রচার করে নরেন্দ্র মোদী অন্য রাজ্যে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছেন।’’
ফিরোজপুরে যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রীর কনভয় আটকে যাওয়ার প্রকাশিত ছবি বা ভিডিয়োয় এত দিন দেখা গিয়েছিল, কৃষকদের বিক্ষোভ, রাস্তা জুড়ে তাঁদের বাস-গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় উড়ালপুলের উপরে প্রধানমন্ত্রীর কনভয় আটকে রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ের কাছে চলে এসেছিলেন বলেও বিজেপি অভিযোগ তুলেছিল। আজ একটি নতুন ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বিজেপির পতাকা হাতে কয়েক জন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নামে তাঁর গাড়ির পাশেই জয়ধ্বনি দিচ্ছেন। মল্লিকার্জুনের প্রশ্ন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কি নিজের দলের কর্মীদের থেকেই নিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়ে চিন্তিত?’’
আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ দাবি করেছেন, ড্রোন বা টেলিস্কোপিক রাইফেল দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করা হতে পারত। পঞ্জাবের ফিরোজপুরে প্রধানমন্ত্রীর কনভয় আটকে যাওয়ার পরেই বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা বলতে শুরু করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ‘মওত কি কগার’ বা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। তাঁকে প্রাণে মারার ‘সাজিশ’ বা ষড়যন্ত্র হয়েছিল। বস্তুত প্রধানমন্ত্রী নিজেই ভাটিন্ডা থেকে দিল্লি ফেরার সময় বিমানবন্দরে রাজ্যের আধিকারিকদের বলেছিলেন, তিনি বেঁচে ফিরতে পেরেছেন বলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে যেন তাঁর তরফে ধন্যবাদ জানিয়ে দেওয়া হয়। সেই সুরেই গিরিরাজ বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর কনভয় আটকে যাওয়াটা কাকতালীয় নয়, তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র। উনি মহাদেবের আশীর্বাদে বেঁচে গিয়েছেন। ঠিকমতো তদন্ত হলে এই ষড়যন্ত্রের যোগাযোগের সূত্র মুখ্যমন্ত্রীর দফতর এবং উপরতলা পর্যন্ত মিলবে।’’
কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছে, এই গোটা ভাষ্যের পিছনেই রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগেও ভীমা কোরেগাঁও কাণ্ডে সমাজকর্মী, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবীদের গ্রেফতারের পরে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, মাওবাদীরা প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ছক কষেছে এবং সমাজকর্মীদের কাছ থেকে তার প্রমাণ মিলেছে। সিধু বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী শুধু বিজেপির নন, দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর প্রাণের মূল্য বাচ্চারাও জানে। বিজেপি, আরএসএস যত তিরঙ্গা উড়িয়েছে, তত তিরঙ্গা দিয়ে তো পঞ্জাবের ভূমিপুত্রদের মৃতদেহ ঢাকা হয়েছে।পঞ্জাবে তাঁর প্রাণের আশঙ্কা ছিল বলে উনি পঞ্জাবের সংস্কৃতির অপমান করছেন। পুরোটাই নাটক।’’
ফিরোজপুরের স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবার কৃষকদের বিক্ষোভে প্রধানমন্ত্রীর সভায় যাওয়ার পথে বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের গাড়ি আটকে গিয়েছিল। কৃষক বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর কনভয় ওই পথে আসছে, তা তাঁদের জানাই ছিল না। পুলিশ সে কথা বললেও তাঁরা ভেবেছিলেন, অবরোধ সরানোর জন্য মিথ্যে বলা হচ্ছে। আটকে পড়া বিজেপির কর্মী-সমর্থকরাই কনভয়ের কাছে গিয়ে ‘নরেন্দ্র মোদী জিন্দাবাদ’ স্লোগান তোলেন। মল্লিকার্জুনের প্রশ্ন, ‘‘নিজের দলের কর্মীদের থেকেই প্রাণের ঝুঁকি ছিল বলে কি পঞ্জাবের মানুষ ও কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চন্নীর বদনামের চেষ্টা হচ্ছে?’’
চন্নী আজ নিজে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে কেউ গুলি ছুড়লে তিনি সামনে নিজের বুক পেতে দেবেন। কিন্তু বিজেপি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার বিচ্যুতির জন্য কংগ্রেসকেই দায়ী করছে। আজ রাজেন্দ্র আগরওয়াল, লকেট চট্টোপাধ্যায়-সহ বিজেপির সাংসদরা সংসদ চত্বরে গান্ধী মূর্তির সামনে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান। হিন্দু যুবা বাহিনীর একদল সদস্য আকবর রোডে কংগ্রেসের সদর দফতরের বাইরে বিক্ষোভ দেখান। কংগ্রেস কর্মীরাও অজয় মিশ্র টেনির পদত্যাগের দাবিতে পাল্টা স্লোগান তোলেন।
কংগ্রেস নেতা মধুসূদন মিস্ত্রি বলেন, ‘‘এ সব অমিত শাহ, বিজেপির নির্দেশে হচ্ছে। পুলিশ মদত দিচ্ছে। দফতরে হাত পড়লে কংগ্রেসের লোকেরাও ছেড়ে কথা বলবে না। আমি গুজরাতের নেতা। আমি জানি, উনি কী ধরনের নাটুকে।’’ গতকাল বিজেপি নেতারা প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনায় রাজ্যে রাজ্যে পুজো পাঠ করে মৃত্যুঞ্জয়মন্ত্র জপ করেছিলেন। কংগ্রেস মুখপাত্র গৌরব বল্লভের কটাক্ষ, আন্দোলনে নিহত কৃষকদের জন্য বিজেপি নেতাদের মৃত্যুঞ্জয়মন্ত্র জপ করা উচিত ছিল।
পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, বিজেপির নতুন শরিক অমরেন্দ্র সিংহর অভিযোগ, চন্নী, সিধু-সহ কংগ্রেস নেতারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন। পাকিস্তান সীমান্তবর্তী রাজ্য পঞ্জাবে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার প্রশ্ন যথেষ্ট গুরুতর বিষয়। তাঁকে সমর্থন জানিয়ে কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতা মণীশ তিওয়ারির যুক্তি, প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে দশ কিলোমিটার দূরে ছিলেন। পাকিস্তানের কামানের পাল্লা ৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। দেশের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার বিষয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy