Advertisement
E-Paper

৩ বছর আগে ফেরাই প্রাপ্তি

মোদী সরকারের চিন্তা বাড়িয়ে আটটি মূল পরিকাঠামো ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির হার জুলাইয়ে ৪.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। যা গত ছ’মাসে সর্বনিম্ন। বেকারত্ব নিয়ে অবশ্য সামান্য স্বস্তির খবর মিলেছে।

এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১৩.৫%।

এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১৩.৫%। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:১৯
Share
Save

আর্থিক বৃদ্ধির হারে ‘লম্বা লাফ’। চিনকে টপকে ফের দ্রুততম বৃদ্ধির দেশের তকমা দাবিও। কিন্তু পরিসংখ্যানে স্পষ্ট, এই লাফ সত্ত্বেও আদতে তিন বছর পরে আবার কার্যত কোভিডের আগের জায়গাতেই ফিরে গেল অর্থনীতির বহর। বুধবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যানে এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১৩.৫%। কিন্তু অতিমারির হানার আগের বছরে (২০১৯-২০) এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় এ বার ওই একই সময়ে জিডিপির বৃদ্ধি মোটে ৩.৮%।

তবে এ দিন প্রকাশিত পরিসংখ্যানে কোভিডের ধাক্কা সামলে দেশের বাজারে ফের চাহিদা বাড়ছে বলে ইঙ্গিত মিলল। সুখবর মিলছে নতুন লগ্নির দিক থেকেও। হোটেল, পরিবহণ, ব্যবসা, যোগাযোগ, পরিষেবার মতো যে সব ক্ষেত্র কোভিডের জেরে সব থেকে বেশি ধাক্কা খেয়েছিল এবং লকডাউন উঠে যাওয়ার পরেও ধুঁকছিল, সেখানেও আশার আলো দেখা গিয়েছে।

চলতি আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) বৃদ্ধির হার ১৩.৫% ছুঁয়েছে। যার অর্থ, গত বছর এপ্রিল-জুনের তুলনায় এ বছরের এপ্রিল-জুনে জিডিপি-র বহর ১৩.৫% বেড়েছে। কিন্তু কোভিডের আগের বছর, অর্থাৎ, ২০১৯-২০ সালের এপ্রিল-জুনের সঙ্গে তুলনা করলে জিডিপি বেড়েছে ৩.৮%। যার অর্থ, এপ্রিল-জুনের জিডিপি প্রাক-কোভিড বছরের এই সময়ের জিডিপি-র তুলনায় সামান্য বেশি।

তার উপরে মোদী সরকারের চিন্তা বাড়িয়ে আটটি মূল পরিকাঠামো ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির হার জুলাইয়ে ৪.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। যা গত ছ’মাসে সর্বনিম্ন। বেকারত্ব নিয়ে অবশ্য সামান্য স্বস্তির খবর মিলেছে। আজ শ্রমিক সমীক্ষা জানিয়েছে, এপ্রিল-জুনে বেকারত্বের হার জানুয়ারি-মার্চের ৯.৫ শতাংশের তুলনায় ৭.৬ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে মোট জনসংখ্যার তুলনায় চাকুরিরত কর্মীর হার প্রায় একই রয়েছে। সুতরাং, অনেকে কাজ খোঁজা ছেড়ে দিয়েছেন বলে বেকারত্বের হার খাতায়-কলমে কমছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।

এ দিন এপ্রিল-জুনের ১৩.৫% বৃদ্ধির পরিসংখ্যান প্রকাশের পরেই সাফল্য প্রচারে নেমেছে বিজেপি। দাবি, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারতের উত্থান হচ্ছে। এপ্রিল-জুনে যখন চিনের বৃদ্ধির হার মাত্র ০.৪%, তখন ভারতের তা ১৩ শতাংশের উপরে।

অর্থ মন্ত্রকের অবশ্য অনুমান ছিল, বৃদ্ধির হার ১৫ শতাংশের বেশি হবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কেরও ১৬.২% বৃদ্ধির অনুমান ছিল। সেই তুলনায় বৃদ্ধির হার কম। কেন্দ্রীয় অর্থসচিব টি ভি সোমনাথন বলেন, ‘‘আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসেই ১৩.৫% বৃদ্ধি বছরের বাকি সময়ে অর্থনীতির ভবিষ্যতের জন্য আশার কথা। কোভিডের আগের তুলনায় জিডিপি প্রায় ৪% বেশি।” তাঁর মতে, চলতি বছরে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭% ছোঁবে।

বিরোধীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০২০ সালে কোভিডের আগে থেকেই অর্থনীতি শ্লথ গতিতে চলছিল। তিন বছর পরে দেশের অর্থনীতির সেই তুলনায় সামান্য উন্নতির মানে, অর্থনীতি কার্যত এক জায়গাতেই আটকে রয়েছে। প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষচন্দ্র গর্গের ব্যাখ্যা, কোভিডের আগে ২০১৯-২০-র এপ্রিল-জুনে জিডিপি ছিল ৩৫.০৯ লক্ষ কোটি টাকা। কোভিড ও লকডাউনের ধাক্কায় পরের বছর, ২০২০-২১ সালের এপ্রিল-জুনে তা ২৭.০৪ লক্ষ কোটি টাকায় নেমে যায়। গত বছর সেখান থেকে বেড়ে জিডিপি ৩২.৪৬ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছিল। কিন্তু কোভিডের আগের তুলনায় কমই ছিল। সেই তুলনায় এ বার জিডিপি ১৩.৫% বেড়ে ৩৬.৮৫ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। তিন বছরে মাত্র ৩.৮% বৃদ্ধি। গর্গের প্রশ্ন, ‘‘এটা কি তা হলে ১৩.৫% বৃদ্ধি নিয়ে মাতামাতি করার সময়, না কি কেন আমরা একই জায়গায় আটকে রয়েছি, তা নিয়ে ভাবার সময়?”

অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা অবশ্য যুক্তি দিচ্ছেন, কোভিডের গ্রাস থেকে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত মিলছে। গত বছরের তুলনায় বাজারে কেনাকাটার পরিমাণ এপ্রিল-জুনে ২৫.৯% বেড়েছে। গৃহস্থ মানুষ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সঙ্গে অন্যান্য ক্ষেত্রেও খরচ বাড়িয়েছেন। হোটেল, ব্যবসা, পরিবহণ, যোগাযোগের মতো ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়েছে। সেখানেও বৃদ্ধির হার ২৫%-এর বেশি। সেই সঙ্গে দাবি, বিনিয়োগে জোয়ার আসার ইঙ্গিত মিলেছে। মূলধনী পণ্যে বৃদ্ধি ২০% ছাপিয়েছে।

চিন্তার কথা হল, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের চড়া দামের জন্য তা আমদানির খরচ বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় ফেব্রুয়ারিতে তেলের দাম যেখানে পৌঁছেছিল, এখন তার থেকে কিছুটা কমেছে। কিন্তু ডলারের তুলনায় টাকার দামের পতনের ফলেও আমদানির খরচ বেড়েছে। সেই সঙ্গে জুলাইয়ে আটটি মূল পরিকাঠামো ক্ষেত্রের উৎপাদন বৃদ্ধি ৪.৫ শতাংশে নেমে আসায় মোদী সরকারের চিন্তা থাকছেই। গত বছর জুলাইয়ে এই হার ছিল ৯.৯%। অশোধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন মার খেয়েছে। সিমেন্ট, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে বৃদ্ধি ২ শতাংশে নেমেছে।

এর মধ্যে আবার মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক শিল্পের জন্য ঋণে সুদের হার বাড়াচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ব বাজারেও অনিশ্চয়তা রয়েছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, কোভিডের আগেই নরেন্দ্র মোদী নোট বাতিল, জিএসটি-র ধাক্কায় যে মন্দা তৈরি করেছিলেন, তা কাটতে অনেক সময় লাগবে। মোদী সরকার যতই মাতামাতি করুক, বাস্তব হল, আমরা হামাগুড়ি দিয়ে কোভিডের আগের মন্দ গতির দশায় ফিরেছি।

সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে মোদীর যাবতীয় প্রচার যে মিথ্যে, তার প্রমাণ, আটটি মূল পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ছ’মাসে সর্বনিম্ন বৃদ্ধি। এতে বেকারত্ব বাড়বে। মূল্যবৃদ্ধি বাড়বে। অর্থনীতি ধ্বংস করাটাই মোদীর অমৃত কাল!’’

PM Narendra Modi Economy GDP

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।