আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকো ফরেস্ট অঞ্চল ও সংলগ্ন এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সমাজবিরোধীরা। উপযুক্ত নজরদারির অভাবে এরা দেশি বন্দুক নিয়ে অবাধে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি দেদার গাছ কেটে বন্যজন্তুদের হত্যাও করছে। বাধা পেলে গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী বা প্রকৃতিপ্রেমীদের হুমকির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কর্মী মোহন ভরের স্ত্রীকে ফোন করে ধর্ষণেরও হুমকি দিয়েছে দুষ্কৃতীরা।
এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলজিক্যাল ব্রিগেড সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা, পার্শ্ববর্তী চা বাগানের শ্রমিক এবং বনকর্মীদের নিয়ে একটি সভা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত নেন, অরণ্য ধ্বংস ঠেকানোকর পাশাপাশি বনমাফিয়াদের প্রতিরোধে সভা-সমিতির মাধ্যমে স্থানীয় গ্রামবাসীদের সচেতন করা হবে। বনবিভাগের ডেপুটি রেঞ্জার মৃণালকান্তি নাথও এ ব্যাপারে সহায়তার আশ্বাস দেন। তিনি স্বীকার করেন, পরিস্থিতি যে এ রকম, তা তাঁদের জানা ছিল না।
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক জয়ন্তভূষণ ভট্টাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বনাঞ্চলে বাঘের উপস্থিতি টের পাওয়ার কথা তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছেন। আমড়াঘাটে প্রয়াত অরুণকুমার দাসের মিউজিয়ামে বাঘের নখ, চামড়া সংরক্ষিত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলজিক্যাল ব্রিগেডের সভায় পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শোভন দত্তগুপ্ত বলেন, ‘‘কিছু দিন আগেও আমার দোতলার অফিসঘর থেকে বাইরে তাকালে হরিণশাবকদের দেখতে পেতাম। এখন আর সে দৃশ্য দেখা যায় না।’’
হীরামন-শোভনদের আক্ষেপ, বনদস্যুরা হরিণ সহ নানা জীবজন্তু হত্যা করেছে, ভয়ে অন্যান্যরা পালিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক পার্থঙ্কর চৌধুরী বলেন, বহু চাম গাছ ছিল এই বনাঞ্চলে। সব কেটে নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা।
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অশোক সেন বলেন, ‘‘বনদস্যুদের মোকাবিলা করতেই হবে।’’ তবে তিনি গবেষক-কর্মীদের মুখোমুখি সংঘাতে না গিয়ে প্রযুক্তির সহায়তা নিতে পরামর্শ দেন। এমন একটা অ্যাপ উদ্ভাবন করতে বলেন, যাতে এরা জঙ্গলে ঢুকলেই বনকর্মী, পুলিশ-সহ পরিবেশপ্রেমীরা সঙ্কেত পেয়ে যান এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া নিতে পারেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন রেজিস্ট্রারও প্রদোষকিরণ নাথ।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)